ঢাকা, রবিবার, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ক্যারিয়ার

ইন্টারভিউ বোর্ডে মিথ্যের আশ্রয় নেবেন না

ক্যারিয়ার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৩৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৭
ইন্টারভিউ বোর্ডে মিথ্যের আশ্রয় নেবেন না

যেকোন চাকরি পেতে হলে ভাইভা বোর্ডের মুখোমুখি আপনাকে হতেই হবে। ভাইভা বোর্ডের চল্লিশটি প্রশ্ন, তার উত্তর দেয়ার কৌশল নিয়ে বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য নিয়মিত লিখছেন হিউম্যান রিসোর্সেস প্রফেশনাল কাইয়ুম ইসলাম সোহেল। সাত পর্ব ধারাবাহিকের তৃতীয় পর্ব পড়ুন-

আপনার জীবনের লক্ষ্য কি?
নিজেকে নিয়ে নিজের ভিতরে কি স্বপ্ন বুনছেন- এই প্রশ্নের উত্তরের আড়ালে চুপটি করে তাই আরেকবার দেখে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। নিয়োগকর্তা জানতে চান, সিভিতে যা দিয়েছেন ঠিক তার আলোকেই নিজেকে দেখতে চান নাকি তার আড়ালে আরো কিছু আছে! উত্তর দেওয়ার আগে নিজের সিভি এবং যে পদের জন্য এসেছেন উভয়ের সামঞ্জস্য করে গল্পের আকারে নিজের জীবনের লক্ষ্য উপস্থাপন করুন।

কি আপনাকে রাগিয়ে তোলে?
আপনার নিজের প্রতি নিজের কতটা নিয়ন্ত্রণ আছে, আপনি কতটা শর্ট-টেম্পার বা নিজেকে কতটা বৈরী পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারেন- এ প্রশ্নের উত্তরে মূলত তাই দেখতে চাওয়া হয়। উত্তর দেওয়ার আগে ভেবে নিন, চাকরিদাতার সামনে নিজের দুর্বলতা কতটা উন্মুক্ত করতে যাচ্ছেন যার ফলে নিজেকেই নেগেটিভভাবে উপস্থাপন করে ফেলছেন। আবার অতি সাধুও সাজতে যাবেন না। এটা বলা যাবেনা যে, কোন কিছুই আমাকে রাগাতে পারে না যদি না আপনি মহামানবের পর্যায়ে ইতিমধ্যেই পৌঁছে থাকেন। রাগ সবারই হয়। তবে কে কতটা নিজেকে সামলে রাখতে পারে তাই দেখার বিষয়।

কি আপনাকে প্রেরণা (Motivation) যোগায়?
মোটিভেশন ছাড়া আমাদের জীবন সংগ্রাম কোনভাবেই সফলভাবে টেনে নেওয়া সম্ভব নয়। প্রতিদিন প্রতিক্ষণ চলার পাথেয় হিসেবে মোটিভেশন আমাদের ফুয়েল। প্রশ্নের উত্তরে মূলত দেখা হয় আপনার চলার জন্য কতটা ফুয়েল নিজের কাছে আছে আর কতটা কোম্পানিকে আপনার পেছনে ইনভেষ্ট করতে হবে। উত্তর দিতে মিথ্যের আশ্রয় নেয়ার দরকার নেই। আবার একেবারে নিজেকে পুরোটাই মেলে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। প্রথমে নিজেকে জানুন। কি আপনাকে উৎসাহ যোগায় আর কোথা থেকে আপনার মানসিক শক্তি আসে। তারপর গুছিয়ে উত্তর দিন।

আরো পড়ুন: ইন্টারভিউ বোর্ডের ৪০ প্রশ্ন

আপনার জীবনের করা কিছু ক্রিয়েটিভ কাজের উদাহরণ দিন?
ক্রিয়েটিভেটি ছাড়া কাজ আর প্রতিদিন ডাল ভাত একই কথা। প্রতিদিন যেমন নতুনভাবে শুরু হয় তেমনি প্রত্যেক কাজে প্রতিবারেই নতুন নতুন অনেক কিছুই যোজন বিয়োজন করা যায়। একটু ভাবুন- আপনি কি যেকোন কাজ আজ থেকে দশ বছর পূর্বে যেভাবে শুরু হয়েছিলো ঠিক সেভাবেই আজো করছেন? নাকি প্রতিদিন এর মাঝে সৃজনশীল মনের মাধুরী মিশিয়ে রঙের ছোঁয়ায় রঙিন করে তাতে নতুনত্ব এনেছেন। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় প্রতিদিন নতুন কিছু যোগ হচ্ছে। আর তাকে কাজে লাগাতে আপনি নিজেকে মন থেকে কতটা প্রস্তুত করে রেখেছেন তাই দেখার বিষয়। একটা কাজ আপনাকে করতে দিলে আপনি নিজের ভিতরের প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে কতটা সুন্দরভাবে তাকে উপস্থাপন করতে প্রস্তুত আছেন তা জানার উদ্দেশ্যেই এই প্রশ্ন করা হয়। উত্তর দেয়ার আগে জানুন ক্রিয়েটিভিটি বা সৃজনশীলতা কি? সৃজনশীলতা হচ্ছে এমন একটি দক্ষতা যা অনুশীলনের মাধ্যমে অর্জন সম্ভব। সৃজনশীলতা হচ্ছে এমন একটি মাধ্যম যার মাধ্যমে নতুন কিছুর জন্ম হয়।
এমন অসাধারণ কি করেছিলেন যার মাধ্যমে আপনার কর্মজীবনে বা ব্যক্তিজীবনে পজেটিভ পরিবর্তন আনতে পেরেছিলেন! ভাবুন এবং ধীরস্থির চিত্তে উত্তর দিন।

আপনি কি একা কাজ করতে পচ্ছন্দ করেন নাকি দলকে সাথে নিয়ে কাজ করাকে বেশি গুরুত্ব দেন?
ব্যাপারটা খুব সহজ। যে কাজই করতে দেওয়া হোক বা যে কাজের জন্য কাজের জন্যই আপনাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে অবশ্যই আপনাকে একটি দলের অংশ হয়ে কাজ করতে হবে। অথবা একটি দলকে নেতৃত্ব দিয়ে সামনে নিয়ে যেতে হবে। 'ওয়ান ম্যান শো' শুনতে যতই রোমাঞ্চকর লাগুক, দিনশেষে দল ছাড়া আপনি মূল্যহীন। দশের লাঠিটাই একের জন্য আস্ত একটা গাছ।
আর যাই হোক এই প্রশ্নের উত্তরে 'ম্যা হু না', 'হামছে বাড়া কোন হে' টাইপ শাহরুখ ডায়লগ না দেয়াই শ্রেয়। দলগত জীবনে কি কি কাজ করেছেন এবং যেসব সাফল্য নিজের ঝুলিতে পুরেছেন তার গল্প বলতে কিন্তু অবশ্যই ভুলবেন না।

আপনার করা কিছু দলগত কাজের উদাহরণ দিন?
বন্ধুবান্ধব বা পরিবারে সদস্যদের নিয়ে ক্রিকেট, ফুটবল বা ক্যারাম, লুডু খেলেন নি বা এ ধরনের টুর্নামেন্টের সফল আয়োজন করেননি এমন কয়জন আছেন? অথবা স্কুল/ কলেজে ক্লাস পার্টি, বনভোজন, বিদায় বা বরণ অনুষ্ঠানের সাথে জড়িত ছিলেন না এমন ক'জন আছেন? সামাজিক বিভিন্ন সংগঠনের সাথে থেকে সপ্তাহ, মাস বা বছরে একটিও দলগত কিছু করেননি প্লিজ এটা কেউ বলবেন না। আর যদি এমন হয়েই থাকে তাহলে আপনি সত্যি জীবনের অনেকগুলি সুন্দর মুহুর্তকে হারিয়েছেন। পাশাপাশি লিডারশিপ কোয়ালিটি থেকে বঞ্চিত হবার জন্য নিজেই দায়ী।
বিভিন্ন ইভেন্টে আপনি কতটা নেতৃত্ব দিয়ে কাজ করেছিলেন, তাই জানতে চাওয়া হয় এই প্রশ্নের মাধ্যমে। নিজেকে সর্বোচ্চ সাবলীলভাবে ফুটিয়ে তুলুন। কথার ফুলঝুরি দিয়ে সব ঘটনাপ্রবাহ সুন্দরভাবে উপস্থাপন করুন।

লিডার হিসেবে নিজেকে আপনি ১ থেকে ১০ এর মাঝে কত দিবেন?
এ প্রশ্নের জবাবও ঘুরে ফিরে একই হবে। আগের দুটি প্রশ্নের উত্তরে নিজেকে কতটা সাজাতে পেরেছেন তার উপর ভিত্তি করে নিজে আগে ঠিক করুন নেতৃত্বের কোন স্তরে আছেন আপনি। আগে যদি বুঝিয়ে আসেন আপনি গুড ফর নাথিং আর এখানে এসে বলেন আমি দশে দশ তা যেমন গ্রহনযোগ্য হবেনা, তেমনি যদি উল্টোটাও করেন তা আরো অনেক নেগেটিভ প্রশ্নের অবতারনা করবে। তাই আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন। নিজের ভেতর থেকে আর বিভিন্ন ইভেন্টে আপনার অংশগ্রহণের উপর ভিত্তি করে মূল্যায়ন করে মার্ক করুন।

আরো পড়ুন: ভাইভা বোর্ডে মুখস্ত নয়, চাই সাবলীল উত্তর

রিস্ক নিতে কি পছন্দ করেন?
রিস্ক ইজ দ্য পার্ট অব সাকসেস। কথায় আছে, ভুল সেই করে যে কাজ করে। আর তার কোন ভুল হয়না যে কিছুই করেনা বা করার চেষ্টাই করেনা। সুতরাং ভাবনার কিছু নেই। এই প্রশ্নের উত্তরে আপাতত রিস্ক নেওয়ার কিছু নাই।
বলে ফেলুন, রিস্ক নিয়ে যদি সফল হবার সমূহ সম্ভাবনা হাতে থাকে তাহলে রিস্ক নিতে দোষের কিছু নেই। কারন রিস্ক না নিলে পরিবর্তন যেমন আসবেনা, তেমনি জানতে পারবো না আরো সহজ ভাবে কাজটা করে সফল হওয়া যায়। অথবা এভাবে করার ফলে কী ধরনের ক্ষতি হয় তা অন্যদের কাছে উদাহরণ হয়ে থাকবে। মাঝে মাঝে আপনার এগ্রেসিভনেস দেখার উদ্দেশ্যে এই ধরনের প্রশ্ন করা হয়ে থাকে।

আপনার পছন্দের কিছু চাকরি, অফিস লোকেশন এবং কোম্পানির উদাহরণ দিন?
এ প্রশ্নের উত্তরে আপনাকে খুব ডিপ্লোম্যাটিক হতে হবে। এই ইন্টারভিউতে আপনি কতটা নিজের মনের ইচ্ছায় এসেছেন আর কতটা বাধ্য হয়ে এসেছেন, এর মাধ্যমে আসলে তাই দেখা হয়। আপাতত একটা চাকরি করতে হবে তাই আপনি এখানে এসেছেন/ আসলেই কাজটা করতে এসেছেন/ আপনাকে যে জায়গার জন্য চিন্তা করা হচ্ছে সে জায়গায় আপনি কি যেতে চাচ্ছেন অথবা কোন অবলাইগেশন আছে- এগুলোও দেখা হয়।
পছন্দের কোম্পানি সম্পর্কে জানতে চাওয়ার মাধ্যমে নিয়োগকর্তা কয়েকটি বিষয় বুঝতে চেষ্টা করেন। তা হলো, কেমন কর্ম পরিবেশ আপনার চান এবং যেমন চাচ্ছেন তার সাথে আর এই কোম্পানির অমিলগুলির সাথে আপনি কতটা মানিয়ে নিতে পারবেন। উত্তর দেয়ার আগে যেখানে যাচ্ছেন সেখানকার পরিবেশ, কোম্পানির কাছাকাছি অন্য কোম্পানির নাম আর কোথায় জব লোকেশন হতে পারে তা জেনে উত্তর দিন।

এ পর্ব শেষ করবো জাফর ইকবাল স্যারের উক্তি দিয়ে। তিনি বলেছিলেন, আমাদের পড়াশুনা হচ্ছে ১ আর বিভিন্ন সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড হচ্ছে ০। যদি আগে শুন্য বসে পরে ১ বসে তাহলে এক একই থাকে, কিন্তু ১ কে আগে রেখে ০ গুলোকে পরে দেওয়া যায় তাহলে প্রতি শুন্যেই একের মান লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে।

আমিও বলবো, নিজের পড়াশুনা ঠিক রেখে বিভিন্ন জাতীয় বা আন্তর্জাতিক সেবামূলক সংগঠনের সাথে জড়িত হোন। এতে যেমনিভাবে নেতৃত্বের গুণ বিকশিত হবে, পাশাপাশি সমাজ সেবাও হবে। বিভিন্ন ক্যারিয়ার ক্লাব, রোটারী ক্লাব, এপেক্স ক্লাব, বিএনসিসি, রোভার, রেডক্রিসেন্ট, বন্ধুসভা, আবৃত্তি সংগঠন, বিতর্ক পরিষদ, থিয়েটার, রক্ত দানের বিভিন্ন সংগঠনের সাথে সংযুক্ত হতে পারেন। তবে পড়াশুনা সবার আগে, তারপর বাকি কিছু। কারণ আপনার সিভির সর্বপ্রথম যা মূল্যায়ন হয় তা হচ্ছে আপনার রেজাল্ট। রেজাল্টের পাশাপাশি অন্যান্য কর্মকান্ড আপনার যোগ্যতাকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেবে।

কাইয়ুম ইসলাম সোহেল

পরামর্শ দিয়েছেন:
কাইয়ুম ইসলাম সোহেল
হিউম্যান রিসোর্সেস প্রফেশনাল
[email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।