চুয়াডাঙ্গা: জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থান চুয়াডাঙ্গার কার্পাসডাঙ্গা। কবি একাধিকবার এসেছেন এখানে।
কবির স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে চুয়াডাঙ্গার কার্পাডাঙ্গায় নজরুল কমপ্লেক্স তৈরি ও কবির জন্ম-মৃত্যু দিবস কার্পাসডাঙ্গায় জাতীয়ভাবে পালন করার দাবি উঠেছে।
চুয়াডাঙ্গার প্রয়াত দুজন লেখক এম ইব্রাহিম ও এম এ বকরের গ্রন্থ ও স্থানীয় প্রবীণ নজরুলভক্তদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কবি ১৯২৬-২৭ সালে একাধিকবার এসেছেন চুয়াডাঙ্গার কার্পাসডাঙ্গায়। এখানে তিনি আসতেন কার্পাসডাঙ্গার শিক্ষানুরাগী বাবু মহিম সরকারের আমন্ত্রণে। থাকতেন তৎকালীন নদীয়া কংগ্রেসের সম্পাদক প্রয়াত হর্ষপ্রিয় বিশ্বাসের আটচালা ঘরে। এখানে একবার তিনি একটানা দুমাস অবস্থান করেন। মহিম সরকারের দুই কন্যা আভারাণী ও শিউলি রাণী কবির কাছে গান শিখতেন।
বর্তমানে কাপর্সডাঙ্গায় কবির স্মৃতিবিজড়িত আটচালা খড়ের ঘরে বসবাসকারী কবির দীর্ঘদিনের বন্ধু হর্ষপ্রিয় বিশ্বাসের বংশধর প্রকৃতি বিশ্বাস বকুল বাংলানিউজকে জানান, কার্পাসডাঙ্গার ধনাঢ্য ও শিক্ষানুরাগী বাবু মহিম সরকার থাকতেন কলকাতার আমহাস্ট স্ট্রিটে। কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাবু মহিম সরকারের দুই মেয়ে আভারানী ও শিউলি রানীকে গান শেখাতেন। সেই সূত্র ধরে এবং তৎকালীন বৃটিশ বিরোধী স্বদেশী আন্দোলন চলাকালে কবি স্বপরিবারে বাবু মহিম সরকারের আমন্ত্রণে কার্পাসডাঙ্গায় আসেন। সে সময় নদীয়া জেলা কংগ্রেসের সম্পাদক হর্ষপ্রিয় বিশ্বাসের বাড়ির আটচালা ঘরে প্রায় দুইমাস ছিলেন তিনি।
কথিত আছে, কবি এখানে অবস্থানকালে ব্যথার দান, মৃত্যুক্ষুধা, উপন্যাস লিখেছেন। কার্পাসডাঙ্গার যে বাড়িতে তিনি থাকতেন তার পাশেই ছিল এক লিচু বাগান। কবির বিখ্যাত কিশোর কবিতা লিচুচোর এই বাগানে বসে লেখা। প্রায়শই কবি এই লিচু বাগানে বসতেন।
কার্পাসডাঙ্গার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে ভৈরব নদী। পাশেই ছিল চার্চ অব বাংলাদেশের অফিস। যা এখনো আছে। কবি এখানে ঘুরেছেন-বসেছেন। ভৈরবের তীরে বসে তিনি লিখেছেন অনেক গান।
দর্শনা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যাপক ও কার্পাসডাঙ্গা নজরুল স্মৃতি সংসদের উপদেষ্টা আব্দুল গফুর বাংলানিউজকে জানান, কবি কার্পাসডাঙ্গায় অবস্থানকালে পদ্মগোখরো লিখেছেন। ভৈরবের তীরে বসে লিখেছেন গান ‘কোন কুলে আজ ভিড়লো তরী’। কবি যে আটচালা ঘরে থাকতেন সেই ঘরে এখন বসবাস করেন মহিমচন্দ্রের নাতি প্রকৃতি বিশ্বাস বকুল। শুধু কবির স্মৃতি ধরে রাখার জন্য আটচালা সেই ঘরটি আধুনিকায়ন করা হয়নি। সেভাবেই রাখা হয়েছে। ভৈরব নদীর তীরে চার্চ অব বাংলাদেশের স্কুল ও হাসপাতাল এলাকার যেসব স্থানে কবি ঘুরে বেড়িয়েছেন, সেসব স্থানে ফুলবাগান তৈরি করা হয়েছে কবির সম্মানে।
স্থানীয় নজরুল ভক্তদের উদ্যোগে প্রতিবছর কবির জন্মদিন ও মৃত্যুদিনে নানা আনুষ্ঠানিকতায় চুয়াডাঙ্গার কার্পাসডাঙ্গায় পালন করা হয়। এবছরও দুদিনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৭ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৩
সম্পাদনা: এম জে ফেরদৌস, নিউজরুম এডিটর