ঢাকা: উত্তরবঙ্গকে রাজধানীর সঙ্গে যুক্তকারী ‘বঙ্গবন্ধু সেতু’কে ‘যমুনা ব্রিজ’ হিসেবেই জানছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী গোটা বিশ্ব। ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রত্যয় নিয়ে ক্ষমতায় থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তনয়া শেখ হাসিনা বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকলেও সেতুর নামটি গুগল ব্যবহারকারীদের ভাবিয়ে তুলেছে।
তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নামের বিষয়টি নিয়ে তারা দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন।
সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইলের মধ্যে স্থাপিত এই সেতুটি চালু হয়েছিল ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন, বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ক্ষমতাকালে।
স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামানুসারে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে সময় ঘটা করে তাঁর পিতার নামে সেতুটি উদ্বোধন করেছিলেন।
চার দশমিক আট কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এবং ১৮ দশমিক পাঁচ মিটার প্রস্থের সেতুটি নির্মাণের স্বপ্ন ছিল বঙ্গবন্ধুর, উদ্বোধনের সময় বলেছিলেন শেখ হাসিনা তনয়া।
টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসনের তথ্য বাতায়ন (http://www.tangail.gov.bd/node/210511) থেকে জানা যায়, বিশাল যমুনা নদীর ওপর দিয়ে সেতু স্থাপনের আকাঙ্খা ছিল বহু দিনের। ১৯৪৯ সালে আবদুল হামিদ খান ভাসানী, ১৯৬৪ সালে রংপুর থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ও ১৯৬৬ সালে রংপুর থেকে একই পরিষদের আরেকজন সদস্য শামসুল হক এই সেতু নির্মাণের জন্য প্রস্তাব পেশ করেন।
১৯৭০ সালে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে বেতার-টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে ভাষণদানকালে শেখ মুজিবুর রহমান নির্বাচনী ওয়াদা হিসেবে যমুনা সেতু নির্মাণের কথা উত্থাপন করেন। স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৭২ সালে যমুনা নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেয় এবং ১৯৭২-৭৩ সালের বাজেটে এজন্য বরাদ্দ রাখা হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন সরকারের সময় নানা পদক্ষেপ গ্রহণের পর ১৯৮৫ সালে জুলাই মাসে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ বলে যমুনা বহুমুখী সেতু কর্তৃপক্ষ গঠিত হয়। ১৯৮৬-৮৭ সালে সেতুর সম্ভাব্যতা-সমীক্ষায় দেখা যায়, একটি সড়ক-কাম-রেল-বিদ্যুৎ-গ্যাস লাইন পরিবাহী সেতু অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত উভয় দিক থেকেই লাভজনক হবে। ১৯৯২ সালে আইডিএ, এডিবি ও জাপানের ওইসিএফ সেতুর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়নে সম্মত হয়। ১৯৯৪ সালে সেতুর ভিত্তি প্রস্তর শেষে ১৯৯৪ সালের ১৫ অক্টোবর প্রকল্পের ভৌত নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং গ্যাস সঞ্চালন লাইন ব্যতীত সব কাজ ১৯৯৮ সালের জুনের মধ্যে শেষ হয়।
সেতুটি নির্মাণে মোট খরচ হয় ৯৬২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আইডিএ, এডিবি, জাপানের ওইসিএফ প্রত্যেকে ২২ শতাংশ পরিমাণ তহবিল সরবরাহ করে এবং বাকি ৩৪ শতাংশ ব্যয় বহন করে বাংলাদেশ।
সম্ভাব্য দৈব দুর্বিপাক ও ভূমিকম্প যাতে সহ্য করতে পারে সেজন্য সেতুটিকে ৮০-৮৫ মিটার লম্বা এবং দুই দশমিক পাঁচ ও তিন দশমিক ১৫ মিটার ব্যাসের ১২১টি ইস্পাতের খুঁটির উপর বসানো হয়েছে। সেতুটিতে স্প্যানের সংখ্যা ৪৯ এবং ডেক খণ্ডের সংখ্যা এক হাজার ২৬৩টি। সেতুটির ওপর দিয়ে চার লেনের সড়ক এবং দুটি রেলট্র্যাক নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের তিনটি বড় নদীর মধ্যে সবচেয়ে বৃহত্তম এবং পানি নির্গমনের দিক থেকে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম নদী যমুনার উপর নির্মিত সেতুটি কাগজে-কলমে ‘বঙ্গবন্ধু সেতু’ নাম থাকলেও গুগল ম্যাপে সেতুটি যমুনা ব্রিজ হিসেবেই পরিচিতি পেয়েছে।
ইন্টারনেটে গুগল ম্যাপে (https://maps.google.com/) ‘বঙ্গবন্ধু ব্রিজ’ নামে সার্চ দিলে উপগ্রহ থেকে ধারণকৃত ইমেজে ‘Jamuna Bridge’ নামেই মোবাইল ফোন কিংবা কম্পিউটারের স্ক্রিনে ভেসে ওঠে।
বর্তমান আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার প্রায় পাঁচ বছর পরেও যমুনা ব্রিজ নামেই বঙ্গবন্ধু সেতুর পরিচিতি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী হাজার-কোটি মানুষের কাছে।
বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের ফলে সড়ক ও রেলপথে দ্রুত যাত্রী ও মালামাল পরিবহন ছাড়াও এই সেতু বিদ্যুৎ ও প্রাকৃতিক গ্যাস সঞ্চালন এবং টেলিযোগাযোগ সমন্বিত করার অপুর্ব সুযোগ করে দিয়েছে।
পৃথিবীর ১১তম এবং বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম এই সেতু নিয়ে কৌতুহল সবারই আছে। কিন্তু বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বঙ্গবন্ধুর নামে সেতুর নাম গুগল মানচিত্রে দৃশ্যত না হওয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতি আছে বলেই অনেকে মনে করছেন।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু সেতুর দেখভালের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের সহকারী প্রকৌশলী খায়রুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, এ বিষয়টি তাদের নজরে ছিল না। সেতু বিভাগকে এ ব্যাপারে জানানো হবে।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. বিল্লাল হোসেন গুগল ম্যাপে ইমেজটি দেখে সেতু বিভাগকে জানাবেন বলে জানিয়েছেন।
যোগাযোগ করা হলে, সেতু বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, গুগল ম্যাপে সেতুর ছবিটি দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৩, ২০১৩
এমআইএইচ/এমআইপি/এনএস/জিসিপি