দাঁড়িয়ে আছি বলাকা সিনেমা হলের স্পেশাল টিকিট কাউন্টারে। আমার সাথে আরও দুজন বান্ধবী।
ঢুকেই দেখলাম আবুল (কাবিলা মিরাক্কেলের জামিল হোসেন কে) বলছে ‘ভাগ্নে তাড়াতাড়ি গয়নাগুলো দে তোর বউ উইঠ্যা গেলে এ জন্মে আর পার পাওয়া যাবে না। ’ গহনা নিয়ে কাবিলা আর নয়ন বাসর রাতেই পগার পার।
ছবির কিছু অংশ মিস করায় বুঝতে একটু কষ্ট হচ্ছিল মামা ভাগ্নের ব্যাপারটা কী। পরেরটুকু দেখে অবশ্য বোঝা গেল মামা ভাগ্নে বাটপারি করে বিয়ে করে বাসর রাতেই বউয়ের গহনা নিয়ে পালিয়ে আসে অন্যত্র। একরাতে বাসর ঘর থেকে বেরুতে না পেরে ধরা পড়ে গেল আবুলের ভাগ্নে নয়ন। এখন! আবুলের তো না খেয়ে মরার অবস্থা। খুঁজে বের করল রানা (শাকিব খান)কে। শুরু হয়ে গেল আবারও মামা ভাগ্নের বাটপারি। এ নিয়ে একটি গানও হল দুজনের। শিরোনাম ‘মামু ভাগ্নে গুডলাক’।
বিদেশে থাকা ডানা (মাহি) বাবা (আলীরাজ) আদরের কন্যা। বাংলাদেশে জন্ম হলেও বাবার কড়া আদেশ বাংলাদেশে যাওয়া যাবে না। অথচ স্বপ্নে বাংলাদেশের একটি পুরনো বাড়ি কেবল হাতছানি দিয়ে ডাকে ডানাকে। তাই বাবাকে না বলেই পাড়ি জমায় বাংলাদেশের মাটিতে। এয়ারপোর্টে নেমে দেখে রানা খুঁজছে সুমি নামের এক মেয়েকে। ডানা সুমি সেজে রানার সাথে চলে আসে তার মামার পাতানো বাড়িতে। এ যেন চোরের উপর বাটপারি করল ডানা। ডানার সৌন্দর্য দেখে রানা ভালোবেসে ফেলল ডানাকে। তখনই রানা তার কল্পনায় দেখল ‘এই প্রথম একটি মুখ’ এই গানটি।
ডানার বাবা মেয়েকে খুঁজে না পেয়ে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিলো। আবুল পত্রিকায় ডানার জন্য দশ লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়ার বিজ্ঞাপন দেখে জানালো রানাকে। রানা তো মহাখুশি। মামা ভাগ্নের পরিকল্পনা ডানাকে আটকিয়ে তার বাবার কাছ থেকে দশ লাখ টাকা হাতিয়ে নেবে। তাদের এই ফন্দি বুঝে গেল ডানা।
আর তখনই পর্দায় ভেসে উঠল বিরতি। এর আগে ছবির নামে পর্দায় আর একটি গান দেখা গেল। শিরোনাম ‘ভালোবাসা আজকাল’। পাঠকদের জানিয়ে রাখছি ছবিটি মুক্তি পেয়েছে গত বছরের ঈদে। মুক্তির পর দর্শক মহলে সারা পেলেও এখন হলে লোকসংখ্যা একেবারেই কম। সেটা বুঝতে পারলাম বিরতির সময় সিনেমা হলে আলো জালানোর পর।
বিরতির আগ পর্যন্ত সিনেমার কাহিনী ভালো লাগলেও বিরতির কিছুক্ষণ পর থেকে বাংলা সিনেমার গতানুগতিক ধারা চলে এলো যা দর্শকের জন্য খুবই বিরক্তিকর।
মামাকে আটকে রেখে রানা ডানাকে নিয়ে খুঁজতে বের হল তার সেই কল্পনার বাড়িটি। ছবির এই অংশটুকুর শুটিং করা হয়েছে বান্দরবানে। বাংলাদেশের যে নিজস্ব সৌন্দর্য আছে এই ছবি তার আর একটি প্রমাণ। বাড়ি খুঁজতে গিয়ে ডানাও ভালোবেসে ফেলল রানাকে। তাদের দুজনের গান হল ‘শুনতে কি পাও’। এর কিছুক্ষণ পর পুরনো বাড়িটি খুঁজে পাওয়ার আগে বাংলাদেশের সৌন্দর্য তুলে ধরে আর একটি গানে ঠোঁট মেলালেন ডানা। গানটির শিরোনাম ‘স্বপ্ন দেখি আমি স্বপ্ন’।
এদিকে ডানার বাবা সেখানে গিয়ে হাজির। সেই বাড়িতে গিয়ে ডানা জানতে পারল এটা তার আসল বাবা নয়। সম্পত্তির লোভে তার আসল বাবা মাকে আটকে রাখা হয়েছে। এক দফা মারামারির পর সেখানে হাজির হলেন পুলিশ অফিসার (মিশা সওদাগর)। রানা পেল ডানাকে। ডানা পেল তার বাবা মাকে। এভাবেই শেষ হল ‘ভালোবাসা আজকাল’ সিনেমা।
ছবির শেষে সাথের বান্ধবীকে জিঙ্গেস করলাম কেমন লাগল ছবি? ও বলল `টিকিটের ৬০ ভাগ উসুল হয়েছে। তবে আমার মনে হয় বলিউডের ‘মুশকুরাত’ ছবির কিছুটা নকল করার চেষ্টা করা হয়েছে। `
তবে বাংলা সিনেমার ধারা যে কিছুটা হলেও পরিবর্তন হয়েছে এ ছবি দেখে এটা বোঝা যায়। অভিনয়ে শাকিব খানও নিজেকে এগিয়ে নিয়েছে কিছুটা। নায়িকার দিক থেকে মাহিও কম নয়। সিনেমায় তার শরীরের পোশাকের সাইজটা কম থাকলেও একথা বলাই যায় যে বাংলা সিনেমায় এরকম নায়িকাই দরকার। আলীরাজের ভূমিকাও এখানে ভালোই ছিল। আর দর্শকের মজা দেবার জন্য বরিশালের ভাষায় কাবিলার অভিনয়ও ছিল প্রশংসা পাবার মত।
ছবিতে সংলাপগুলো ভালো থাকলেও ব্যবহৃত জিনিসপত্র ছিল সাধারণ মানের। স্পেশাল ইফেক্টে পিরামিড থেকে শুরু করে ষ্টোন হেঞ্জ পর্যন্ত ব্যাবহার করা হয়েছে যা নকলের মতই দর্শকের মনে ইফেক্ট ফেলে। সিনেমার প্রিন্টটা ভালো থাকায় ছবির মাঝখানে কোথাও আটকাতে হয়নি। তবে বেশির ভাগ দৃশ্যেই বান্দরবানের সৌন্দর্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন পরিচালক। যেটা দর্শকের জন্য একটু হলেও সুখকর।
ছবি সম্পর্কে কিছু তথ্য
মুক্তি : ৯ আগষ্ট ২০১৩
পরিচালক : পি এ কাজল
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান : জাজ মাল্টি মিডিয়া
সঙ্গীত পরিচালক : আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল, ফুয়াদ, শফিক তুহিন
গানের সংখ্যা : পাঁচটি
সঙ্গীত শিল্পী : কিশোর, ন্যান্সি, রুপম, কনা
শুটিং : ঢাকা, সিলেট, বান্দরবান
বাংলাদেশ সময় : ১৪০৫ ঘণ্টা, ১৩ জানুয়ারি ২০১৪
সম্পাদনা : গোলাম রাব্বানী, বিভাগীয় সম্পাদক বিনোদন