ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

সাইফুরস’কে ধান্দাবাজি ছাড়ার পরামর্শ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৬ ঘণ্টা, মে ৭, ২০১৬
সাইফুরস’কে ধান্দাবাজি ছাড়ার পরামর্শ

ঢাকা: সাইফুরস এর ব্যানার দেখেই অন‍ুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করলেন প্রধান অতিথি। একই কাণ্ড ঘটালেন বিশেষ অতিথিও।

প্রথমজন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। দ্বিতীয়জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।

শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) সদস্যদের কৃতী সন্তানদের বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে এসেছিলেন তারা। কিন্তু ওই অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষক যে হালের বিতর্কিত সাইফুর’স তা জানা জানা ছিলো না তাদের। ব্যানারে ওই প্রতিষ্ঠানটির নাম দেখেই তাই আর দেরি করেননি তারা।

প্রধান আর বিশেষ অতিথি চলে যাওয়ার পর সাইফুর’স এর ভূমিকা নিয়ে সাংবাদিক নেতাদেরও ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়। সাইফুর’সকে তারা দেন ধান্দাবাজি বাদ দিয়ে ভালো হয়ে যাওয়ার পরামর্শ।
 
কিন্তু সেই পরামর্শ আদৌ কোনো কাজে আসবে কি না তা অবশ্য বোঝা যায়নি প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা সাইফুর রহমান খানের আচরণে। ওই অনুষ্ঠানে নিজেও উপস্থিত ছিলেন তিনি।

একই দিন পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপনে সাইফুর’স এর প্রতি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের ভাষা ছিলো, “ভার্সিটির স্যার এর কাছে ভার্সিটি ভর্তি কোচিং করার সুযোগ দিচ্ছে সাইফুর’স। হ্যাঁ ‍সাইফুর’স হলো একমাত্র ভার্সিটি ভর্তি কোচিং, যেটা চালাচ্ছেন ঢাকা ভার্সিটির প্রাক্তন শিক্ষক ও সাইফুর’স এর প্রতিষ্ঠাতা সাইফুর রহমান খান”।

অথচ আসল ব্যাপার হলো, এই সাইফুর রহমান খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছিলেন মাত্র কিছুদিনের জন্য, তাও খণ্ডকালীন প্রভাষক হিসেবে। কিন্তু নিজেদের প্রায় সব বিজ্ঞাপনেই সাইফুর রহমান খানকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে উপস্থাপন করে আসছে সাইফুর’স। তাদের বিজ্ঞাপনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখ দেখে বিভ্রান্ত হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
 
আর সাইফুর রহমান নিজেই ক্লাস নেবেন বিজ্ঞাপনে করা এই দাবিও পূর্ণাঙ্গভাবে সত্য নয়। কারণ রাজধানীতেই সাইফুর’স এর রয়েছে অনেকগুলো শাখা। একসঙ্গে এতগুলো শাখায় ক্লাস নেয়া তার একার পক্ষে সম্ভব নয়, বাস্তবে নেনও না।
 
তাই তাদের বিজ্ঞাপনের প্রথম লাইন, ‘ভার্সিটির স্যারের কাছেই ভার্সিটির কোচিং’ এটি একটি ডাহা মিথ্যা কথা। সরকার যখন শিক্ষাখাতের ধ্বংস রোধে কোচিং সেন্টারগুলোর এসব সর্বগ্রাসী তৎপরতার বিরুদ্ধে সোচ্চার তখন সাইফুর’স এর এসব ছলচাতুরিপূর্ণ বিজ্ঞাপন দুঃসাহসই বটে।

অবশ্য, এমন উদ্ভট ও বাগাড়ম্বর বিজ্ঞাপনের কারণে অনেক আগে থেকেই ব্যাপক সমালোচিত সাইফুর’স নামের এই বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান।

সর্বশেষ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির পর বিষয়টিকে নিজেদের বিজ্ঞাপনে স্থূলভাবে উপস্থাপনের ঘটনায় বেশ ভালোভাবেই বেকায়দায় পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। এ অবস্থায় দেশের সংবাদমাধ্যমের পিঠে বন্দুক রেখে নিজেদের পিঠ বাঁচানোর অপচেষ্টা শুরু করে তারা।  

দীর্ঘদিন থেকেই দেশের পত্র-পত্রিকা, এমনকি রাজধানীর দেয়ালে দেয়ালে নিজেদের বিভিন্ন কোর্স সম্পর্কে আকাশ কুসুম বক্তব্য প্রচার করে আসছে এই প্রতিষ্ঠান। তাদের চটকদার বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পা দিয়ে সর্বশ্বান্ত হয়েছে বহু সাধারণ কোমলমতি শিক্ষার্থী। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির পর তাকে পুঁজি করে বিজ্ঞাপন দিতেও ছাড়েনি প্রতিষ্ঠানটি।

রিজার্ভ চুরির ঘটনা প্রকাশের পরপরই রিজার্ভ চুরি’কে হ্যাকিং আখ্যা দিয়ে এ ব্যাপারে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে সাইফুর’স। যেন সাইফুর’স এ কোচিং নিলেই হওয়া যাবে ভালো হ্যাকার’ বিজ্ঞাপনটির অন্তর্নিহিত ম্যাসেজটি ছিলো অনেকটা এ রকমই।    
 
স্পর্শকাতর ইস্যুটি নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির চরম বাতুলতাপূর্ণ এই বিজ্ঞাপন প্রকাশের পরপরই শুরু হয় ব্যাপক বিতর্ক। সরকারি বিভিন্ন মহলেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিজ্ঞাপনটি। সাইফুর’স এই বিজ্ঞাপনে ক্ষুব্ধ সরকারের শীর্ষমহলও। সাইফুর’স এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী। পাশাপাশি সব মহল থেকেই সাইফুর’সকে বর্জন করা শুরু হয়।
 
প্রথম শ্রেণির পত্রিকাগুলো তাদের বিজ্ঞাপন বয়কট করে। তবে সাইফুর’স এখনো মিডিয়ার ঘাড়ে ভর করে নিজেদের অপকর্ম ঢাকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।  
 
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৮ ঘণ্টা, মে ৭, ২০১৬
আরআই/জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ