ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

রাঙামাটিতে ১৯৭ স্থানে পাহাড় ধস, ৩৮১ ঘর ক্ষতিগ্রস্ত

মঈন উদ্দীন বাপ্পী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ৮, ২০২৩
রাঙামাটিতে ১৯৭ স্থানে পাহাড় ধস, ৩৮১ ঘর ক্ষতিগ্রস্ত

রাঙামাটি: রাঙামাটিতে টানা ছয় দিনের বৃষ্টিতে পুরো জেলায় ১৯৭ স্থানে ক্ষুদ্র এবং মাঝারি পরিসরে পাহাড় ধস হয়েছে। তবে কেউ হতাহত হয়নি।

এ ঘটনায় জেলায় ৩৮১টি বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

অতিবৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢলের কারণে জেলার কাপ্তাই হ্রদ বেষ্টিত নিম্নাঞ্চল এলাকাগুলো ডুবে গেছে। হ্রদের পানিতে ভেসে এক যুবক এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঘরবন্দি শ্রমজীবীরা চরম বিপাকে পড়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার বাঘাইছড়ি, লংগদু, জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি এবং রাজস্থলী উপজেলার কাপ্তাই হ্রদ ঘেঁষা নিম্নাঞ্চলগুলো হ্রদের পানিতে তলিয়ে গেছে। যে কারণে ওইসব এলাকার বাসিন্দারা পানিবন্দি হয়ে বিপাকে পড়েছেন।

রাজস্থলী উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবার্ট ত্রিপুরা বাংলানিউজকে বলেন, এ ইউনিয়নের সড়কে পথে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়ে হাজীপাড়া বেইলি ব্রিজের ওপর দিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে ওই এলাকায় যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।

বাঘাইছড়ি উপজেলার স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী আব্দুল মাবুদ বাংলানিউজকে বলেন, উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা প্লাবিত। বর্তমানে ৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে পাঁচশ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মনু মারমা বাংলানিউজকে বলেন, আমার পুরো ইউনিয়ন পানিবন্দি। হ্রদে তীব্র স্রোত থাকায় সরকারি খাবার পৌঁছানো যাচ্ছে না সেখানে। একদিকে খাবার সংকট অন্যদিকে বিশুদ্ধ পানির অভাবে মহাদুর্যোগ চলছে এখানে।

কাপ্তাই উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি ঝুলন দত্ত বাংলানিউজকে বলেন, কর্ণফুলী নদীর স্রোত বেশি থাকায় চন্দ্রঘোনা ফেরি বন্ধ রাখা হয়েছে। যে কারণে রাজস্থলী উপজেলার সঙ্গে কাপ্তাই উপজেলার এবং চট্টগ্রামের রাঙুনিয়া উপজেলার যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

রাঙামাটি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমা বিনতে আমিন বাংলানিউজকে বলেন, জেলা সদরে ভারী বর্ষণে ১১৫টি স্থানে ক্ষুদ্র ও মাঝারি পরিসরে পাহাড় ধস হয়েছে। ৮২টি বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকারের প্রায় ০৯টি আশ্রয়ণ ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আটটি সড়কে ধস হয়েছে। চারটি ব্রিজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২০টি বিদ্যুতের খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ইউএনও আরও বলেন, দুর্গম এলাকা হওয়াতে অনেক স্থানে দ্রুত পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি যোগাযোগ থেকে সহযোগিতা অক্ষুণ্ন রাখতে।

এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বৃষ্টিতে জেলার প্রধানমন্ত্রীর উপহার ১৩টি আশ্রয়ণের ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সড়ক যোগাযোগের ৭৫টি স্থানে ভাঙন হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সংস্কার না করা পর্যন্ত সড়কের ০৯টি স্থানে চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় সড়ক ও জনপদ বিভাগ।

ঝড়ে ১৪টি ব্রিজ এবং কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২০টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুরো জেলায় ৬৮৩ দশমিক ৫ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৪৩টি পুকুরের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। বন্যায় নিম্নাঞ্চল উপজেলার ১২৪টি ঘর এবং বাজার প্লাবিত হয়েছে। কর্ণফুলী নদীর স্রোত বেশি থাকায় রাজস্থলী-কাপ্তাই উপজেলায় চন্দ্রঘোনা ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মো. মোশারফ হোসেন খান বাংলানিউজকে বলেন, এ পর্যন্ত জেলায় ২৩৪টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ওইসব আশ্রয়কেন্দ্রে ১৭২৭ জন লোক অবস্থান করছেন এবং তাদের খাবারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।  

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, সড়ক পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা অক্ষুণ্ন রাখতে সড়কের ৩৫টি স্থানে তাৎক্ষণিকভাবে সংস্কার করে চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে। ৭০টি স্থানে ভেঙে পড়া গাছপালা অপসারণ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ সচল রাখতে রেসপন্স টিম কাজ করছে।

ডিসি বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় মেডিকেল টিম এবং অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সেনাবাহিনী, পুলিশ আনসার এবং স্বেচ্ছাসেবকদের সহযোগিতায় ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীদের সরিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ০৮, ২০২৩
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।