নীলফামারী: প্রচণ্ড গরম ও খরতাপ বয়ে যাচ্ছে নীলফামারীতে। খরতাপে পুড়ছে ফসলের মাঠ।
গোটা নীলফামারী জেলা প্রচণ্ড তাপদাহের কবলে পড়েছে। জেলার ডোমার, ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরগঞ্জ, সদর ও সৈয়দপুরে এরই মধ্যে বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ হয়েছে। মসজিদ, মন্দির, গির্জা প্রভৃতি উপাসনালয়ে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হচ্ছে নিয়মিত। তবুও বৃষ্টির দেখা নেই। আল্লাহ মেঘ দে, পানি দে, ছায়া দেরে তুই এরকম কামনা করে চলেছেন মানুষ। এবারের টানা অতি তাপদাহে মানুষের পাশাপাশি জীবজন্তু, পশু-পাখিসহ প্রাণিকুল পানির অভাবে ত্রাহি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
জেলার সৈয়দপুরের বোতলাগাড়ি ইউনিয়নের কাঙালপাড়ার কৃষক আজিজুল ইসলাম জানান, মিষ্টি কুমড়ো, করলা, টমেটো, শসা, মরিচ ও লাউয়ের মতো সবজি গাছগুলো শুকিয়ে মারা যাচ্ছে। কিছু কিছু গাছের পাতার রস শুকিয়ে পাতা কুঁকড়ে গাছ মরে যাচ্ছে। খরার কারণে সেচ কাজে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। প্রচণ্ড গরমে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সবজির ক্ষেত।
টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। সেচযন্ত্র চালিয়েও সেভাবে পানি না মেলায় ইরি-বোরো জমিতে পানি ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে অনেক জায়গায় আবাদি জমির মাটি ফেটে যাচ্ছে। অনেকে কৃষি বিভাগের পরামর্শে আবাদি জমিতেই গর্ত করে শ্যালো মেশিন বসিয়ে জমিতে সেচ দিচ্ছেন। অনেকে জমির সেচ দিতে সাবমারসিবল মোটর বসিয়ে ইরি-বোরো জমিতে সেচ দিচ্ছেন। যা অনেক কৃষকের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। এমন আবহাওয়ায় ধানে চিটা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান কৃষকেরা।
জানা যায়, প্রচণ্ড গরম ও তাপদাহে এই জনপদের মানুষের প্রায় ওষ্ঠাগত হয়ে পড়েছে। শ্রমজীবী মানুষ, রিকশা ও ভ্যান চালকেরা হাঁপিয়ে যাচ্ছেন, ঘাম ঝরছে শরীর থেকে। ঘন ঘন তৃষ্ণা লাগছে মানুষের। ঠান্ডা পানি ও শরবতের দিকে ঝুঁকছেন মানুষজন। গরমে শিশু ও বৃদ্ধরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
এ ব্যাপারে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) নাজমুল হুদা বলেন, এ সময় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি হচ্ছে হিটস্ট্রোক। এই গরমে আমাদের স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই মেনে চলতে হবে। যতদূর সম্ভব বাইরের খাবার পরিহার করতে হবে। হিট স্ট্রোকের মূল কারণ পানিশূন্যতা। বয়স্ক, অসুস্থ এবং শিশুরা অনেক সময়ই এটা অনুধাবন করতে পারে না। তাই তাদের দিকে বাড়তি নজর রাখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলেছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। এ ছাড়াও প্রচণ্ড গরমে জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্টের রোগ, নিউমোনিয়া, পানিবাহিত টাইফয়েড ও জন্ডিস এবং চর্ম রোগ বা ফুসকুড়ি প্রকোপ অনেক বেড়ে যায়। তাই এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
প্রকৃতি ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সংগঠন সেতুবন্ধন যুব উন্নয়ন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আলমগীর হোসেন বলেন, প্রচণ্ড তাপদাহ ও খরা চলছে। নদী-নালা, খালবিলে পানি নেই। তাই প্রাণিকুলের তেষ্টা মেটাতে বাড়ির ভেতর ও বাইরে পাত্রে পানি রাখার পরামর্শ দেন তিনি। প্রয়োজনে বৃক্ষরোপণের মতো কাজে জোর দিতে হবে।
নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. এসএম আবু বকর সাইফুল ইসলাম বলেন, এ বছর নীলফামারী জেলায় ৮১ হাজার ৮৫৭ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলা করে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গবেষণা জরুরি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৭ ঘণ্টা, মে ০৪, ২০২৪
এসএম