ঢাকা: ঘূর্ণিঝড় রিমাল পরবর্তী খুলনা অঞ্চলের তিন জেলায় ৬১ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শত শত গ্রামে চিংড়ির ঘেরসহ ফসলী জমিতে নোনা পানি প্রবেশ করেছে।
নোনা পানি ঢুকে যাওয়ায় আমন মৌসুম ধরতে হলে মাঠ থেকে দ্রুত নোনা পানি বের করার ব্যবস্থা নিতে হবে। ১৯৯১ সালের সাইক্লোন এবং ২০০৭ সালের সিডরের পরে পাম্প করে এই পানি বের করার ব্যবস্থা করতে হবে। নতুবা এসব এলাকায় ধানী জমিতে নোনা পানি ছড়িয়ে পড়ায় ধান উৎপাদন ব্যাহত হবে।
শনিবার (১ জুন) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)'র উদ্যোগে ‘ঘূর্ণিঝড় রিমাল পরবর্তী খাদ্য নিরাপত্তা: আশু করণীয়’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলন এ দাবি করা হয়।
সিনিয়র সাংবাদিক নিখিল ভদ্র বলেন, খুলনার পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলায় গ্রামীণ পুকুরগুলোতেও নোনা পানি ছড়িয়ে পড়েছে। যারা পুকুর থেকে মিঠাপানি নিয়ে বিশুদ্ধ করে পান করতেন, তারা আর তা পারছেন না। এ এলাকায় ধানী জমিতে নোনা পানি ছড়িয়ে পড়েছে, ফলে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হবে।
বাপার সভাপতি, অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক, আমিনুর রসুলের সঞ্চালনায় উক্ত অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপা জাতীয় কমিটির সদস্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ গওহর নঈম ওয়ারা।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, আইলার চেয়েও রিমালের ক্ষয়-ক্ষতি অতি ভয়াবহ যা আস্তে আস্তে প্রত্যক্ষ হচ্ছে। মানুষের ঘর-বাড়ি, গবাদিপশু, সুন্দরবন ও সুন্দরবনের পশু ও জীববৈচিত্রের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। সেখানকার অনেক স্থানের পানি এখনও নেমে যায়নি। যার ফলে সুপেয় পানির অভাব ও গবাদি পশুর জীবননাশের ঝুঁকি রয়েছে। উপকূলীয় এলাকার বেড়িবাঁধ নির্মাণে সংশ্লিষ্টদের দেশপ্রেম ও অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে। বিদেশি প্রেসক্রিপশনে বিদেশি গাছ ও বেড়িবাঁধ নির্মাণের ফলে উপকূলবাসী চরম সর্বনাশের শিকার হয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও জবাবদিহিতা থাকা প্রয়োজন।
মূল প্রবন্ধে গওহর নঈম ওয়ারা বলেন, এবারের সাইক্লোনে বেড়িবাঁধের ক্ষতি এক দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতের সৃষ্টি করতে যাচ্ছে। খুলনা অঞ্চলের তিন জেলায় ৬১ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিছু এলাকায় পুরোপুরি এবং কিছু এলাকায় আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাঁধ। এতে বাঁধসংলগ্ন নিচু এলাকা উপচে লোকালয়ে নোনা পানি প্রবেশ করেছে; শত শত গ্রামে চিংড়ির ঘেরসহ ফসলি জমিতে নোনা পানি প্রবেশ করেছে। বরিশাল অঞ্চলে কমপক্ষে ৪০০ জায়গায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেড়িবাঁধ। নোয়াখালী এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলে বহু স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে নোনা পানি ঢুকে মিষ্টি পানির আধারগুলো নষ্ট করে দিয়েছে। অনেক জায়গায় ভাটার টানে পানি বেরিয়ে যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। জলখালাসির পদ বিলুপ্তির পর থেকেই দেশের বেশিরভাগ জলকপাট রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কোথাও ভেঙে গেছে কোথাও দেবে গেছে কপাট।
সাইক্লোন পরবর্তী করণীয় তুলে ধরে তিনি বলেন, আমন মৌসুম ধরতে হলে মাঠ থেকে জলাশয় থেকে দ্রুত নোনা পানি বের করার ব্যবস্থা নিতে হবে। পাম্প করে এই পানি বের করার ব্যবস্থা করা যায়। ১৯৯১ সালের সাইক্লোন এবং ২০০৭ সালের সিডরের পর এটা করা হয়েছিল। এরপরই অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ছিঁড়ে যাওয়া বাঁধগুলো মেরামত করতে হবে। জনগণকে সম্পৃক্ত করে জনগণের মালিকানায় বাঁধ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করতে হবে। প্রয়োজনে বর্তমান নীতি কৌশল পরিবর্তন করে এটা করতে হবে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে চরফ্যাশন মডেল নিয়েই এগোতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ভিআইপিদের চলাচল সীমিত করতে হবে। প্রশাসন ত্রাণ কাজে মনোনিবেশ না করে প্রটোকলে তাদের সময় দিতে হয় ফলে ত্রাণ কাজ বাধাগ্রস্ত হয়। ফটোসেশন মানবাধিকারের সঙ্গে যায় না এ ধরনের প্রবণতা পরিহার বাঞ্ছনীয়।
আমিনুর রসুল বলেন, গত ২৫ মে ১৯৮৫ সালে উড়ির চর ঘূর্ণিঝড় হয়েছিল, যাতে মৃত্যু ১৩৮,৮৮২। ২৯ এপ্রিল ১৯৯১ চট্টগ্রামের ঘূর্ণিঝড়ে নিহত হয়েছিলেন ১১০,০৬৯ জন। ১৯ মে ১৯৯৭, আকাশ ঘূর্ণিঝড়ে মৃত্যু ১৫৫ জনের, আনুমানিক ক্ষতি ৯৮২ মিলিয়ন ডলার। ৪ মে ২০১৯ এ সাইক্লোন ফনির আঘাতে ক্ষতি ৮.১ বিলিয়ন ডলার, নিহত ১৮। সাইক্লোন আম্ফান এ ২০ মে ২০২০ এ ক্ষতি ১১০০ কোটি টাকা। ২৬ মে ২০২১, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে মৃত্যু ৯, ক্ষতিগ্রস্ত ৯৫ হাজার জন। ১৪ মে ২০২৩ এ আঘাত হানে মোখা। ২৬ মে ২০২৪ আঘাত হেনেছে রেমাল। আমরা গত ৩৫ (১৯৮৫- ২০২৪) বছরের ঘূর্ণিঝড় গুলোর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখতে পাই সাধারণত এপ্রিল ও মে মাসের মধ্যেই এই ঘূর্ণিঝড় হয়ে থাকে, তাহলে এতো বছরেও কেন সরকার এ ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলায় উপযুক্ত কার্যকর ব্যবস্থা করতে পারেনি। এর পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও জবাবদিহিতার অভাব।
বাংলাদেশ সময়: ২০১১ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০২৪
এনবি/নিউজ ডেস্ক