সিলেট: আবারও জলাবদ্ধতার কবলে পড়ল সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকা। মাত্র তিন ঘণ্টার টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন নগরী।
সিলেটে চিকিৎসা সেবার সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠান এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও কলেজেও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতে মধ্য রাতে চরম দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী।
শনিবার (৮ জুন) সন্ধ্যা রাত থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি শুরু হয়। এরপর রাত ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা ভারি বর্ষণ হয় সিলেটে। এই সময়ে ২২০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করেছে সিলেট আবহাওয়া অফিস।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, শনিবার রাত ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ২২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এটি এই মৌসুমের রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি।
উজানে ভারতের ঢলে ও ভারি বর্ষণে সিলেটে নদ নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে নগরেও অকাল বন্যা দেখা দেয়। বাসা-বাড়িতে পানি উঠে। নগরীতেই চার সহস্রাধিক বাসিন্দা বন্যা আক্রান্ত হন। আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছে অনেক পরিবার। এ অবস্থায় শুক্রবার পর্যন্ত সুরমার পানি বিপৎসীমার নিচে অবস্থান করছিল। নগর থেকে পানি ধীরে ধীরে নামতে শুরু করে। আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রিত মানুষজন তাদের ঘরে ফিরতে শুরু করেন। কিন্তু শনিবার রাতের বৃষ্টিতে আবারও জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে নগরের অধিকাংশ এলাকা।
ভারি বর্ষণে একে একে ডুবতে শুরু করে নগরের বিভিন্ন এলাকা। এমনকি প্রধান প্রধান সড়কগুলো যেন এক একটি ছড়াখালে পরিণত হয়। ফলে দুর্ভোগে পড়েন বাসিন্দারা। বিশেষ করে নগরের অভিজাত এলাকা খ্যাত শাহজালাল উপশহরে বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। যার পুনরাবৃত্তি ঘটে শনিবার রাতেও। এলাকার বাসিন্দাদের অনেকে বলেন, অসংখ্য বাসার ভেতরে নীচ তলায় পানি উঠেছে এবং সড়কগুলো ডুবে গিয়ে জলজটে পড়তে হয়। বাসা-বাড়ির নিচে সেফটি ট্যাঙ্কে পানি উঠে খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
এছাড়া নগরের মীরাবাজার, যতরপুর, আগপাড়া, সোনারপাড়া, শিবগঞ্জ, সোবহানীঘাট, তেররতন, মেন্দিবাগ , ছড়ারপাড়, মাছিমপুর, দরগা মহল্লা, পায়রা, জালালাবাদ, চৌহাট্টা, মিরবক্সটুলা, তালতলা, জামতলা, মনিপুরী রাজবাড়ি, মিরের ময়দান, বাগবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
স্থানীয়রা জানান, ভারী বর্ষণ শুরুর ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যে বেশিরভাগ এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। অনেক এলাকায় প্রথমে সড়ক ডুবে যায়। এরপর বাড়ি ঘরে পানি উঠতে শুরু করে। কোথাও কোথাও ড্রেন ভর্তি হয়ে রাস্তা দিয়ে পানি ছুটতে দেখা গেছে।
যতরপুরের বাসিন্দা সুমন আহমদ বলেন, সাম্প্রতিক বন্যায়ও যতরপুর এলাকা প্লাবিত হয়ে অনেক লোকজন আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নেন। শুক্রবার পর্যন্ত পানি কমে যাওয়াতে অনেকে বাসা বাড়িতে ফিরতে শুরু করেন। কিন্তু শনিবার রাতে ৩ ঘণ্টার বৃষ্টিতে আবারও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে আসা লোকজন ফের বাসা-বাড়ি ছাড়তে হচ্ছে। এছাড়া যতরপুর ও লাগোয়া উপশহর এলাকার ভাড়াটিয়াদের অনেকে বাসা-বাড়ি ছাড়তে শুরু করেছেন।
সিলেট নগরের কেওয়াপাড়ার বাসিন্দা আব্দুল কাদির, মীরের ময়দানের বাসিন্দা আজমল আলী বলেন, রাত ১০টার দিকেই পাড়ার রাস্তাগুলো ডুবে যায়। এরপর প্রায় তিন ফুটের মতো পানি উঠে গেলে বাসায় পানি উঠে যায়।
সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. আসাদুজ্জামান জুয়েল জানান, রাতে হাসপাতালের নিচতলায় পানি ঢুকে পড়েছে বলে জানতে পেরেছেন। তাৎক্ষণিকভাবে রোগীদের বিকল্প ওয়ার্ডে একীভূত করে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।
এর আগে গত ২৯ মে এক রাতের ঢলে তলিয়ে গিয়েছিল সিলেটের পাঁচ উপজেলা। পরে পুরো জেলায় দেখা দেয় বন্যা পরিস্থিতি। তবে কয়েকদিন ধরেই কমছিল পানি। শনিবার জেলায় কুশিয়ারা নদীর পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার কিছুটা ওপরে অবস্থান করলেও আর সব কটি নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে অবস্থান করছিল।
জেলার আশ্রয়কেন্দ্রগুলো থেকে অধিকাংশ লোকজন নিজেদের ঘরবাড়িতে ফিরে গেছেন। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, জেলার ৫৫১টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৪৪০ জন অবস্থান করছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৪ ঘণ্টা, জুন ৯, ২০২৪
এনইউ/এসএম