ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

ফের ডুবল ভবদহ অঞ্চলের ৫০ গ্রাম

উত্তম ঘোষ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৪
ফের ডুবল ভবদহ অঞ্চলের ৫০ গ্রাম বন্যার পানি মাড়িয়ে শিশুকে নিয়ে এক নারী যাচ্ছেন।

যশোর: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপে গত চার দিনের টানা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে যশোরের দুঃখ খ্যাত ভবদহ অঞ্চলের অন্তত ৫০টি গ্রাম। এসব গ্রামে পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে বাড়িঘর, স্কুল, কলেজ, রাস্তাঘাট, ধর্মীয় উপাসনালয়।

তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার মাছের ঘের। বিলগুলোতে প্রতিদিন বাড়ছে পানি। প্লাবিত হচ্ছে আরও নতুন নতুন এলাকা। বৃষ্টিপাত এখনও অব্যাহত থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এলাকার মানুষ। এর আগে গত মাসের (আগস্ট) ২৩, ২৪ ও ২৫ তারিখের হালকা ও মাঝারি বৃষ্টিতে এ অঞ্চলের খাল-বিলগুলো পানিতে টইটম্বুর হয়ে পড়ে।  

স্থানীয়রা জানান, ২০০৫, ২০০৬, ২০১৬, ২০২০ ও  ২০২১ সালেও ভবদহ অঞ্চলে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এবারও অভয়নগর উপজেলার ডহর মশিয়াহাটি, ডুমুরতলা, আন্দা, বলারাবাদ, বেদভিটা, চলিশিয়া, বারান্দী, দিঘলিয়া, দামুখালী, কপালিয়া ও দত্তগাতী গ্রাম এবং মণিরামপুর উপজেলার হাটগাছা, নেবুগাতি, পাঁচকাটিয়া, ভুলবাড়িয়া, পাচাকড়ি, সুজাতপুর, কুলটিয়া, লখাইডাঙ্গা, মহিষদিয়া, আলীপুর, পোড়াডাঙা, পদ্মনাথপুর, পাড়িয়ালী, দহাকুলাসহ কমপক্ষে ৫০টি গ্রাম, এবং কেশবপুরের বেশ কিছু গ্রামে বেশির ভাগ বাড়ির আঙিনায় পানি উঠেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এসব গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ।

ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, যশোর সদর উপজেলার আংশিক, অভয়নগর, মণিরামপুর, কেশবপুর উপজেলা এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার ৫৪টি বিলের পানি নিষ্কাশিত হয় শ্রী নদীর ওপর নির্মিত ভবদহ স্লুইসগেট দিয়ে। এই অঞ্চলটি ভবদহ অঞ্চল নামে পরিচিত। ২০১৩ সালের পর এলাকার কোনো বিলে টিআরএম (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট বা জোয়ারাধার) চালু না থাকায় পলি পড়ে এলাকার পানি নিষ্কাশনের মাধ্যম মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদীর বুক উঁচু হয়ে গেছে। ফলে নদী দিয়ে পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে না। এছাড়া এলাকার ৫/৬টি বিলের পানি নিষ্কাশনের অন্যতম পথ আমডাঙ্গা খালটি সংস্কার না করায় এবং খালের ওপর নির্মিত ব্রিজটি ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় ওই পথে ঠিকমতো পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে না। এই অবস্থায় বৃষ্টির পানিতে এলাকার বিলগুলো প্লাবিত হয়েছে। বিল উপচে পানি বিলসংলগ্ন গ্রামগুলোতে প্রবেশ করছে।

চলাচলের কয়েকটি রাস্তা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন ভবদহ অঞ্চলের মানুষ। রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় এলাকার কয়েকটি জায়গায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।  

জানা গেছে, ডুমুরতলা-বেদভিটা সড়ক, বলারাবাদ সড়ক, আন্দা-বলারাবাদ সড়ক, আন্দা-ডুমুরতলা সড়ক এখন পানির তলে। পানি উঠেছে মশিয়াহাটি- সুন্দলী রোডের অন্তত ৮-১০ স্থানে। এলাকায় প্রতিদিন পানি বাড়ছে।

অভয়নগর উপজেলার ডুমুরতলা গ্রামের স্কুল শিক্ষক শিবপদ বিশ্বাস বলেন, গ্রামের ১৫৫ টি বাড়ির সব বাড়ির উঠানে দুই থেকে তিন ফুট জল উঠেছে। কারো কারো বাড়ি ছাড়ার উপক্রম হয়েছে। আরও একদিন বৃষ্টি চলতে থাকলে অধিকাংশদের বাড়ি ছাড়তে হবে। ’

মণিরামপুর উপজেলার হরিদাশকাটি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বিপদ ভঞ্জন পাড়ে বলেন, ইউনিয়নে ২২টি গ্রাম। তারমধ্যে অন্তত সাত-আটটি গ্রামের অধিকাংশ এলাকায় এবং অপর আরও কয়েকটি গ্রামের কিছু কিছু বাড়িতে জল উঠেছে।

ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির সুন্দলী এলাকার সদস্য সচিব কানু বিশ্বাস বলেন, এলাকার বিলগুলোতে জল থৈ থৈ করছে। অনেক মাছের ঘের ও ফসল তলিয়ে গেছে। বৃষ্টির সাথে পাল্লা দিয়ে বিল উপচে জল প্রতিদিন বাড়িঘরে ঢুকছে। ইতোমধ্যে সুন্দলী এলাকার অধিকাংশ বাড়িতে বাড়িতে জল ঢুকেছে।

ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রণজিৎ বাওয়ালি বাংলানিউজকে বলেন, কয়েক দিনের সামান্য বৃষ্টিতে ভবদহ এলাকার কমপক্ষে ৫০টি গ্রামে জলাবদ্ধতা দেখা গেছে। নিজের বাড়িসহ গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতে জল ঢুকে গেছে, এখন বসবাস অনুপোযোগী।  

তিনি বলেন,পানি উন্নয়ন বোর্ডের লুটপাট ও গাফিলতির কারণে এ দুর্দশা। জলাবদ্ধতায় ভবদহ অঞ্চলের যে ক্ষতি হয়ে গেল তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এলাকার বিলে টিআরএম (জোয়ারাধার) চালু না করলে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি নেই। টিআরএম’র দাবিতে আমরা গত ৮ সেপ্টেম্বর যশোরের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পানি সম্পদ উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি। দ্রুত মিটিং করে বিল কপালিয়ায় টিআরএম বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন শুরু করবো। ’

জানতে চাইলে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ ব্যানার্জী বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা সৃষ্টিকর্তার মার দুনিয়ার বার। এবার প্রচণ্ড বৃষ্টি। বর্তমানে হরি নদীর ২ দশমিক এক কিলোমিটার মাটি কাটার কাজ চলছে। ভবদহের ২১ ভেন্টের ওপর চারটা বড় ও পাঁচটা ছোট পাম্প সবসময় চলছে। আর একদিন হয়তো বৃষ্টি হবে বলে জেনেছি। এরপর বৃষ্টি না হলে এবং যশোর শহরের পানি না ঢুকলে চার পাঁচ দিনের মধ্যে পাম্প দিয়ে এলাকার পানি সরিয়ে ফেলা যাবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৪
ইউজি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।