বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি আরও পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে। এর প্রভাবে পটুয়াখালী, খুলনাসহ দেশের উপকূলীয় এলাকায় শুরু হয়েছে বৃষ্টিপাত।
ভারতের আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি) বলছে, বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে উড়িষ্যা রাজ্যের ভিতরকণিকা এবং ধামরা অঞ্চল দিয়ে স্থলভাগে ঢুকবে ঘূর্ণিঝড়টি।
এবারের ঘূর্ণিঝড়টির নাম ‘দানা’। এই নামকরণ করেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার। আরবি ভাষায় দানা শব্দের অর্থ ‘সুন্দর এবং মূল্যবান মুক্তা’। এর আরেকটি অর্থ ‘উদারতা’।
এই নামটি সাধারণত পারস্য উপসাগরের আরব দেশগুলোতে ব্যবহৃত হয়, যা তাদের ঐতিহ্যবাহী মুক্তা ডাইভিং পেশার জন্য পরিচিত। বিভিন্ন ধরনের মুক্তার আলাদা আলাদা নাম রয়েছে, যার মধ্যে ‘দানা’ হচ্ছে সেরা মুক্তাগুলোর একটি। অবশ্য ফারসি ভাষায়, দানা শব্দের অথ্য জ্ঞানী।
তবে ঘূর্ণিঝড় দানা নামকরণ যেহেতু কাতার করেছে। অর্থাৎ আরবি ভাষায় মুক্তা অর্থেই ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ঘূর্ণিঝড়ের বেশিরভাগই এমন কৌতূহলী নামকরণ হয়। যেমন - তিতলী, নার্গিস, নিসর্গ, ফণী।
এমন নামকরণের প্রধান উদ্দেশ্য হলো মানুষের মনে ঝড়ের বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা এবং সতর্কতা প্রদানের বিষয়টি সহজ করা। একটি নির্দিষ্ট ও কৌতূহলী নাম ব্যবহার করে লোকজন ঝড়ের কার্যক্রম ও এর প্রভাব সম্পর্কে দ্রুত তথ্য পেতে পারেন।
তবে এলোমেলোভাবে ঘূর্ণিঝড়ের জন্য নামকরণ হয় না। বিষয়টি বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (WMO) দ্বারা প্রণীত একটি সুপরিকল্পিত ব্যবস্থার ভিত্তিতে দেওয়া হয়।
যেভাবে এবারের ঘূর্ণিঝড়টির নাম ‘দানা’ রাখা হলো -
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের রিপোর্ট বলছে, ডব্লিউএমও কর্তৃক প্রণীত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ পদ্ধতি অনুসারে ঘূর্ণিঝড় দানা নামকরণ করেছে কাতার।
বার্ষিক বা দ্বিবার্ষিক বৈঠকের সময় ঘূর্ণিঝড়ের নাম সদস্য দেশগুলো জমা দেয় এবং প্রতিটি নাম অনুমোদিত হতে নির্দিষ্ট মানদণ্ড পূরণ করতে হয়। তালিকা তৈরির পর নামগুলো পর্যায়ক্রমে দেওয়া হয়।
জানা যায়,১৮০০- এর দশকের শেষদিকে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের প্রথার প্রথম শুরু হয়। তখন রোমান ক্যাথলিক সেন্টদের নামে ঝড়ের নাম রাখা হতো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আবহাওয়াবিদরা ঝড়ের ট্র্যাকিং এবং যোগাযোগকে আরও সংগঠিত করতে মেয়েদের নামে নামকরণ শুরু করে।
১৯৫৩ সালে ইউএস ওয়েদার সার্ভিস ফোনেটিক বর্ণমালার ওপর ভিত্তি করে মেয়েদের নামের একটি প্রমিত তালিকা চালু করে। তবে লিঙ্গ পক্ষপাতসহ নানা সমালোচনার পর ১৯৭৯ সালে এই প্রথা বদলায়। পর্যায়ক্রমে পুরুষ এবং নারী উভয় নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয় ঝড়ের নামকরণে।
বর্তমানে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ আঞ্চলিক নামকরণ তালিকার মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। এই তালিকাগুলো পর্যায়ক্রমে আন্তর্জাতিক কমিটি দ্বারা অনুমোদিত এবং আপডেট করা হয়। এটি নিশ্চিত করা হয় যে ঘূর্ণিঝড়ের নামগুলি জনসাধারণের উচ্চারণের জন্য উপযুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে প্রতিফলিত করে। এ নাম যেন কোনো জাতি, ধর্ম বা বর্ণের অনুভূতিতে আঘাত না করে সে বিষয়টির পূর্ণ খেয়াল রাখা হয়।
গত কয়েক বছর ধরে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা যেমন-বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডাব্লিউএমও), এশিয়ার জন্য জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয়। ভারতের আইএমডি ছয়টি আবহাওয়া কেন্দ্রের মধ্যে একটি যা ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয়।
এই সংস্থাগুলোয় বাংলাদেশ, ভারত, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এবং থাইল্যান্ডের মতো দেশ অন্তর্ভুক্ত। ২০১৮ সালে ইরান, কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইয়েমেনও এই সংস্থাগুলোয় যুক্ত হয়েছে।
সমস্ত সদস্য দেশ তাদের পরামর্শ ডাব্লিউএমও - এর প্যানেলে পাঠায় যা পরে নামসহ ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের তালিকা চূড়ান্ত করে।
নিয়ম অনুসারে, ১৩টি সদস্য দেশকে ঘূর্ণিঝড়ের নামগুলির জন্য ১৩টি পরামর্শ পাঠাতে হবে যা সেই অনুযায়ী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
২০২০ সালের এপ্রিলে আইএমডি প্রকাশিত ১৬৯টি ঘূর্ণিঝড়ের নামের তালিকা এসব দেশ সরবরাহ করেছিল। ১৩টি দেশের প্রতিটি থেকে ১৩টি পরামর্শ নেওয়া হয়।
এবারের ঘূর্ণিঝড়টির নাম কাতারের দেওয়া পরামর্শে গৃহীত হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০২৪
এসএএইচ