ঢাকা, সোমবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

শীতে তেমন মাছ নেই মেঘনায়, হতাশ জেলেরা

নিজাম উদ্দিন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০২৪
শীতে তেমন মাছ নেই মেঘনায়, হতাশ জেলেরা

লক্ষ্মীপুর: মেঘনায় তেমন মাছ পাচ্ছেন না লক্ষ্মীপুরের জেলেরা। কখনো কখনো হতাশ হয়ে খালি হাতে ঘাটে ফিরতে হচ্ছে তাদের।

জেলেরা জানান, শীতে নদীতে ইলিশের উপস্থিতি কমে গেলেও পোয়া, চিংড়ি ও বাটা মাছ পাওয়া যেত। কিন্তু এবার এসব মাছ তেমন নেই। তাই অনেক সময় ট্রলারের জ্বালানি খরচও ওঠে না।  

মেঘনায় অবৈধ বাঁধাজাল, মশারি জাল, খরচি জাল ও চরঘেরা জালের ফাঁদ বসানোর কারণে ছোট প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ ধ্বংস হচ্ছে বলে দাবি জেলেদের।  

এছাড়া শীতে নদীর গভীরতা কমে যাওয়ায় ইলিশের বিচরণ কমে গেছে বলে জানান তারা।  

এদিকে জেলেদের জালে মাছ না ওঠায় বাজারেও পর্যাপ্ত ইলিশ ও সামুদ্রিক মাছের দেখা মিলছে না।  

জেলার কমলনগরের সাহেবের হাট ইউনিয়নের জাজিরা এলাকার জেলে আলী আকবর ও মনজুর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ১০ থেকে ১২ জন জেলে একটি বড় ট্রলার গভীর নদীতে মাছ শিকারে গেলে জ্বালানি (ডিজেল) এবং আনুষঙ্গিকসহ খরচসহ ৫০-৬০ হাজার টাকা খচর হয়। তাই দেড় থেকে দুই লাখ টাকার মাছ বিক্রি করতে পারলে জেলেদের পোষায়। কিন্তু নদীতে মাছের সংকট থাকায় বড় অংকের টাকা খরচ করে মাছ না পেলে জেলেদের পোষায় না। এজন্য অনেক জেলেনৌকা শীত মৌসুমে নদীতে যায় না। ছোট ছোট নৌকাগুলো উপকূলের কাছাকাছি থেকে মাছ শিকার করে।  

মো. জসিম নামে এক ট্রলারমালিক বাংলানিউজকে বলেন, শীতে নদীতে তেমন মাছ নেই। এবারের বর্ষা মৌসুমেও মাছ ছিল না। চলতি মৌসুমে আমার ট্রলারের পেছনে তিন লাখ ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। মহাজন থেকে দাদন এবং ঋণ নিয়ে খরচ মিটিয়েছি। আমার ট্রলারে ১২ জন মাঝিমাল্লা ছিল। এ মৌসুমে যে মাছ পেয়েছে, তা দিয়ে মাঝিমাল্লাদের কোনোমতে খরচ উঠেছে। কিন্তু আমি ঋণ পরিশোধ করতে পারিনি। পুরোটাই দেনা রয়ে গেলাম।  

তিনি বলেন, লোকসানের কারণে শীত মৌসুমে নদীতে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি।  

মিজান নামে এক জেলে বলেন, আটজন জেলে ট্রলার নিয়ে নদীতে গিয়েছিলাম। সাত থেকে আট হাজার টাকা খরচ হয়েছে। একটা মাছও পাইনি। পুরো টাকাই লোকসান হলো।  

জেলে মো. দুলাল বলেন, শীতে নদীতে পানির গভীরতা কমে যায়। তাই ইলিশ পাওয়া যায় না। কিন্তু অন্যান্য সময়ে পোয়া, চিংড়ি, বাটা জাতীয় মাছ পাওয়া যেত। এবার সেগুলোও ধরা পড়ছে না তেমন। মাছ ধরা না পড়ায় অনেক জেলে এখন আর নদীতে যাচ্ছে না।

সাহেবের হাট ইউনিয়নের জাজিরা এলাকার বাসিন্দা মেহেরাব হোসেন বলেন, নদীতে ছোট প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ বিনষ্ট হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের অবৈধ জাল দিয়ে মাছ শিকার এবং বিষ দিয়ে চিংড়ি শিকার করায় নদীতে ছোট মাছের পোনা মারা পড়ে। এতে নদীতে মৎস্যসম্পদ কমে যাচ্ছে।  

লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, শীত মৌসুমে নদীতে ইলিশ কিছুটা কম থাকে। তবে অন্যান্য মাছ পাওয়া যায়৷ মাছের একটা জোয়ার থাকে, জোয়ার শুরু হলে সাগর থেকে মাছ নদীতে ঢুকবে।  

তিনি বলেন, নদীতে মৎস্যসম্পদ বিনষ্টের জন্য দায়ী অবৈধ পন্থায় মাছ শিকারিদের ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১০১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০২৪
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।