ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

ইউরোপ-মধ্যপ্রাচ্যে সুগন্ধ ছড়ায় বাংলার ‘কলম্বো’

শামীম হোসেন, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৫
ইউরোপ-মধ্যপ্রাচ্যে সুগন্ধ ছড়ায় বাংলার ‘কলম্বো’ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

নরসিংদী থেকে ফিরে: নানা রকম সবজির জন্য নরসিংদী বিখ্যাত, এটা সবারই জানা।   কিন্তু বাহারি সবজির ভিড়েও নরসিংদীকে আলাদা করে পরিচয় করিয়ে দেয় ‘কলম্বো’ লেবু।

দেশেই সীমানা ছাড়িয়ে  ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যেও এ লেবুর সুগন্ধ ছড়িয়েছে। অন্যান্য লেবুর তুলনায় দেখতে আকর্ষণীয়, সুস্বাদু এবং সুগন্ধি হওয়ায় এর চাহিদাও বেশি।

অর্থনৈতিকভাবে বেশ লাভজনক হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে এর আবাদ শুরু করেছে নরসিংদীর রায়পুরা, মনোহরদী, শিবপুর ও বেলাব উপজেলার কৃষকরা।

শুক্রবার সরজমিনে এ চার উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, রাস্তার পাশে, বাড়ি আঙ্গিনায়, আবাদি জমিতে বাণিজ্যিকভাবে কলম্বো লেবুর চাষ করা হয়েছে।

২০১১-১২ সাল থেকে পরীক্ষামূলক শুরু করা হলেও এখন দুই শতাধিক হেক্টর জমিতে ছোট-বড় সহস্রাধিক বাগানে এ লেবুর চাষ হচ্ছে বলে জানা গেছে।
 
এ লেবু চাষের জন্য নরসিংদীর মাটি উপযোগী হওয়ায় বর্তমানে কৃষি অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে ব্যাপকহারে আবাদ করা হচ্ছে। দেশের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রফতানি হওয়া লেবুর ৬০-৭০ ভাগই যাচ্ছে নরসিংদী থেকে।

ফলন ভাল এবং লাভজনক হওয়ায় কলম্বো লেবু চাষে কৃষকদের আগ্রহ একটু বেশি। এজন্য তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণও দেওয়া হয় বলে জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে।

বেশ কয়েক বছর আগে শুধুমাত্র সিলেটের ‘জারা’ লেবু বিদেশে রফতানি হতো। কিন্তু ওই লেবুতে ‘ক্যাঙ্কার’ নামে এক ধরনের রোগ দেখা দেওয়ায় রফতানি বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে কলম্বো লেবু রফতানির মাধ্যমে ২০১২ সালের মাঝামাঝি থেকে রফতানি প্রক্রিয়া আবারও শুরু হয়।

কলম্বো লেবুতে পোকার আক্রমণ এবং রোগবালাই না থাকায় ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে এর চাহিদা বেশি। এছাড়া দেখতে আকর্ষণীয়, সুগন্ধি এবং সুস্বাদু হওয়ায় সবার নজর কাড়ে এ লেবু।

বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক হওয়ায় এলাকার বেকার যুবকরা এ লেবুর আবাদ শুরু করেছে।

বেলাব উপজেলার সফল লেবু চাষী আতাউর। তিনি বাংলানিউজকে জানিয়েছেন লেবু চাষ করে তার ভাগ্য ফেরার গল্প। ২০১১ সালে ডিগ্রি পাস করে ভাল কোনো চাকরি না পেয়ে স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে লেবু চাষের ওপর প্রশিক্ষণ নেন। প্রথমে বাড়ির পাশে ছোট জমিতে স্বল্প পরিসরে শুরু করেন এ লেবুর চাষ।

বর্তমানে ৩ বিঘা জমিতে কলম্বো লেবুর চাষ করেছে আতাউর। অর্থনৈতিকভাবেও হয়েছেন বেশ স্বচ্ছল। আতাউর বলেন, আগে অল্প কয়েকজন কৃষক এর চাষ করলেও লাভজনক হওয়ায় উপজেলায় ৬০-৭০টি বাগান হয়েছে। প্রায় ৭০ বিঘা জমিতে এ লেবুর চাষ হয়।

জানা যায়, কলম্বো লেবু চাষ করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বেশ কয়েকজন কৃষক পুরস্কার পেয়েছেন।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ লেবুর চারা রোপন করার আগে বীজতলা তৈরি করে নিতে হয়। এজন্য প্রতিটি গাছের জন্য একহাত পরিমাণ গর্ত করে তাতে প্রথমে রাসায়নিক ও কম্পোস্ট সার দিতে হয়। পরর্বীতে জৈবসার, পোকামাকড় নিরোধক স্ফে, আগাছা পরিস্কার করতে হয়।

চারা সংগ্রহ থেকে শুরু করে এর রক্ষণাবেক্ষন করতে প্রথম বছর খরচ পড়বে প্রতি গাছে প্রায় ১০০ টাকার মতো। তবে দ্বিতীয় বছর এ খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। আর সঠিক পরিচর্যা এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে প্রতিটি লেবু গাছ থেকে চার থেকে সাড়ে চার মাস পরপর ফল পাওয়া যাবে। বর্তমান বাজারে প্রতিটি কলম্বো লেবুর গড় দাম ১৫ টাকা।

সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঠিক নির্দেশনা সাবলম্বী হতে পারে আরও শত শত বেকার যুবক। নিয়মিত প্রশিক্ষণ পেলে আরও এগিয়ে যাবে এ অঞ্চলের লেবু চাষীরা- এমনটাই প্রত্যাশা তাদের।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।