ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

দেশে নতুন ৩ প্রজাতির প্রজাপতির সন্ধান - ১

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, স্পেশালিস্ট এনভায়রনমেন্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৫
দেশে নতুন ৩ প্রজাতির প্রজাপতির সন্ধান - ১

Assam Flash (Rapala tara)

শ্রীমঙ্গল: আমাদের পেছনের দিনগুলো স্মৃতিমুখর! অতীতে তাকালেই দেখা-যায় প্রজাপতি-ফড়িং ধরার পিছু পিছু আমাদের সেই সোনালি দিনগুলো কতই না মধুর ছিলো! ছোট্ট  গুটি গুটি পায়ে ফুলের গায়ে বসা রঙিন প্রজাপতিকে ধরতে যাওয়ার মুহূর্তেই সে দিলো উড়াল! পরেরবারও একই অবস্থা!

প্রজাপতি নিয়ে কিছু বলতে গেলেই প্রজাপতিময় সেই অতীত নীরবে সামনে চলে এসে হাজির হয়। প্রজাপতি নানা ধরনের বিচিত্র ও আকর্ষণীয় রঙের ‘মথ’ জাতীয় পতঙ্গ।




Assam Flash (Rapala tara)
বাংলাদেশে প্রজাপতি নিয়ে গবেষণা হয়নি তেমন ব্যাপকভাবে। যতটুকু গবেষণা হয়েছে তা ব্যক্তি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর নিজ উদ্যোগে। নিয়মিত গবেষণার পাশাপাশি ব্যক্তি বা সমষ্টি পর্যায়ের সেইসব গবেষকরা বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের মধ্যে প্রজাপতির সংরক্ষণ বিষয়ে গণসচেতনতামূলক কাজ করে যাচ্ছেন। এর আগেও তারা বেশ কিছু নতুন দুর্লভ প্রজাতির প্রজাপতির সন্ধান আবিষ্কার করেছেন। রাষ্ট্রীয়ভাবে এই উদ্যাগ গ্রহণ করা হলে এর ব্যাপ্তি আরো বিস্তৃত হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।


Spotless Grass Yellow (Eurema laeta)

তারপরও আশার কথা হলো– সম্প্রতি মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান থেকে তিন প্রজাতির প্রজাপতির সন্ধান মিললো। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের একদল গবেষক সম্প্রতি তিন প্রজাতির প্রজাপতির সন্ধান পেয়েছেন।

প্রজাপতি গবেষক দলের সদস্যরা হলেন, চতুর্থ বর্ষের অমিত কুমার নিয়োগী, মো. নাসিফ সাদাত, শামসুর রহমান, আশরাফুল হাসান সাজ্জাদ এবং তৃতীয় বর্ষের তানভীর আহমেদ, অনিক চন্দ্র মন্ডল। দলটি Butterfly Bangladesh Team এর সহযোগে দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রজাপতি নিয়ে গবেষণানামূলক কাজ করে আসছে।

Red Imperial (Suasa lisides)
গবেষক দলের অন্যতম সদস্য ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী অমিত কুমার নিয়োগী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে Assam Flash (Rapala tara)  নামে একটি ও তৃতীয় সপ্তাহে Spotless Grass Yellow (Eurema laeta) এবং Red Imperial (Suasa lisides) নামে দু’টি নতুন প্রজাতি আমরা শনাক্ত করি। এগুলো ছাড়াও আমরা Harlequin (Taxila haquinus) নামে আরো একটি দুর্লভ প্রজাতির প্রজাপতির সন্ধান পাই। এসময় আমাদের সঙ্গে ছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক কাউসার খান এবং খিলগাঁও মডেল কলেজের কামরুজ্জামান বাবু ও প্রসেনজিৎ দেববর্মা। ’


Harlequin (Taxila haquinus)
তিনি আরও বলেন, Red Imperial (Suasa lisides) প্রজাপতিটি বেশ দুর্লভ। ইতোপূর্বে ভারতীয় উপমহাদেশে এর মাত্র একটি রেকর্ড আছে। বাংলাদেশ থেকে এটিই প্রথম। লম্বালেজযুক্ত সাদা রংয়ের এই প্রজাপতিটির সামনের পাখায় একটি সু্ন্দর লাল রঙের ব্যান্ড থাকে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আবদুল বাকী বাংলানিউজকে বলেন, প্রজাপতির সঙ্গে গাছের একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। প্রজাপতি ফুলের পরাগায়নে সাহায্য করে এবং অন্যের খাদ্য হিসাবে বাস্তুসংস্থানের খাদ্যশৃঙ্খলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শুধু তাই নয়, গাছপালার বংশবিস্তারের জন্য যেমন পরাগায়নের দরকার হয়, তেমনি প্রজাপতির জীবনচক্রে গাছপালার একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। একটি প্রাপ্তবয়স্ক প্রজাপতি একটি নির্দিষ্ট গাছের পাতায় ডিম দেয় এবং এই ডিম থেকে শুটকীট বের হয়ে এই গাছের পাতা খেয়ে ধীরে ধীরে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। পরবর্তীতেপ্রত্যেকটি ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির প্রজাপতি ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদে ডিম পারে।

বাংলাদেশ সময়: ০২১৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।