শ্রীমঙ্গল: গাছের সঙ্গে অতি নিবিড় সম্পর্ক প্রজাপতির। দেখেছি– যেখানে ফুলের মেলা সেখানে প্রজাপতিরও।
কিন্তু এখন আমাদের চারদিকে কোথায় ফুলের বাগান? সরকারি-বেসরকারি অফিস বা সংস্থার ভবনগুলো সামনে আগে ফুলের বাগান তৈরি করা হতো। নানা রঙের ফুল ফুটতো। সেই নানা রঙের ফুলে চুম্বন দিতো নানা রঙের প্রজাপতি ও মৌমাছি। একটি ফুলের বাগান তৈরি করা মানেই শুধুই সৌন্দর্য প্রদর্শন নয়– প্রকৃতিরও গভীর উপকার করা।
সম্প্রতি লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে খোঁজ মেলা নতুন তিন প্রজাতির প্রজাপতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে গবেষকদলের কাছ থেকে মেলে বিভিন্ন তথ্য।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আবদুল বাকী বাংলানিউজকে বলেন, প্রজাপতির জীবনচক্রের কয়েকটি পর্যায় আছে। শেষের পর্যায়টি হচ্ছে ‘প্রজাপতি’। প্রজাপতি হওয়ার আগ পর্যন্ত তার একটি গাছের প্রয়োজন পড়ে। যেখানে সে ডিম পাড়ে, খাবার নেয় কিংবা বিভিন্ন পর্যায়গুলো অতিবাহিত করে। এটাকে আমরা ‘হোস্টপ্ল্যান্ট’ বলি। এটা ছাড়া তার জীবনচক্র সম্পূর্ণ সফল হওয়া সম্ভব নয়। এজন্য প্রজাপতিরা একটি গাছের উপর নির্ভর করে। কখনো এক বা দুটি গাছের উপর নির্ভর তার। আরেকটিকে আমরা ‘নেকচারপ্ল্যান্ট’ বলি। অর্থাৎ, যে গাছ থেকে প্রজাপতিরা মধু সংগ্রহ করে। যে গাছে বড় হলে সে গাছটি থেকেও সে তা সংগ্রহ করতে পারে। অথবা অন্য কোনো গাছ থেকেও সে করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, সব প্রজাপতি সব ধরনের গাছে বসে না। একটি প্রজাতির জন্য নির্দিষ্ট গাছ রয়েছে। এগাছের সংখ্যা ১ থেকে ৫টা অথবা আরো অধিক হতে পারে। সব ফুল থেকে সব প্রজাপতি মধু সংগ্রহ করে না। তাদের সুনির্দিষ্ট গাছ আছে। প্রজাপতির জীবনচক্রের জন্যেই গাছের সঙ্গে তাদের অত্যন্ত গভীর একটি সম্পর্ক রয়েছে। প্রজাপতিরা পরাগায়নে বিরাট ভূমিকা পালন করে। কারণ পরায়ান ছাড়া গাছ জন্ম নিতে পারে না।
গবেষক দলের অন্যতম সদস্য ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী অমিত কুমার নিয়োগী এ প্রসঙ্গে বলেন, এই অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য নিয়ে দু’জন কর্মীদম্পতি মুনির আহমেদ ও তানিয়া খান দীর্ঘদিন যাবৎ কাজ করে যাচ্ছেন। তারা ইতোপূর্বে বেশ কয়েকটি নতুন প্রজাতির শনাক্ত করেন।
আগে নথিপত্র অনুযায়ী বাংলাদেশে ছয় ধরনের ফ্লাশ, চার ধরনের গ্রাসইয়ালো ও তিন ধরনের ইম্পেরিয়ালের উপস্থিতি নিশ্চিত। কিন্তু বর্তমানে প্রত্যেক প্রজাতিতে আরও একটি করে নতুন নাম যোগ হলো।
অমিত কুমার আরও বলেন, Butterfly Bangladesh Team এই গ্রুপটি মূলত ফেসবুক ভিত্তিক। এর সদস্য সংখ্যা ৫ হাজার। ২০১২ সালের ডিসেম্বর থেকে প্রজাপতি সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করছি। আইইউসিএন, বাংলাদেশ এর প্রজাপতির যে ‘রেডলিস্ট’ হচ্ছে সেখানে আমরা অনলাইন কনটিবিউটর হিসেবে আছি। গোটা বাংলাদেশের সাথে আমরা কানেক্ট করতে পারছি। প্রজাপতি সম্পর্কে যে কোনো ধরণের তথ্য আমরা আদান-প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে। আমাদের এই গ্রুপ থেকে প্রায় ৩০টি প্রজাতির প্রজাপতি আমরা সনাক্ত করতে পেরেছি। এগুলো নিয়ে আমাদের পাবলিকেশনও বের করা হয়েছে।
বাটারফ্লাই বাংলাদেশ টিম সূত্র জানায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের একদল গবেষক ২০১২ থেকে এখন পর্যন্ত বেশ কিছু নতুন প্রজাতির নতুন সংযোজন করেছেন যা বাংলাদেশে প্রজাপতির গবেষণায় এক নতুনমাত্রা যোগ করে। ২০১২ সাল থেকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে এ পর্যন্ত সর্বমোট ২০৭টি প্রজাতি তাদের গবেষণায় লিপিবদ্ধ হয়েছে। যার মধ্যে ভুটিয়া লাইন ব্লু, গ্রাস জুয়েল, ডাবল ব্রান্ডেড জুডি, ব্রান্ডেড অরেঞ্জ আওলেট, ম্যাগপায় ক্রো, স্পট পাফিন উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও এই গবেষক দলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে বাংলাদেশে প্রজাপতির সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। তবে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত প্রায় ৩২৬টি প্রজাতি লিপিবদ্ধ রয়েছে। যদিও এর সংখ্যা ৫শ’ এর নিচে হবার কথা নয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১৫
** দেশে নতুন ৩ প্রজাতির প্রজাপতির সন্ধান - ১