নওগাঁ: নওগাঁর আলতাদীঘি শালবন থেকে বানর ও হনুমানগুলোকে গাজীপুর বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
আলতাদীঘি শালবনে বানর হনুমানের খাবার ও থাকার পরিবেশ এখনও গড়ে না ওঠায় তাদের গাজীপুর বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
জানা যায়, নওগাঁর ধামইরহাট আলতাদীঘি শালবন জাতীয় উদ্যানে ছেড়ে দেওয়ার জন্য নিয়ে আসা হলেও শেষ পর্যন্ত বানর ও হনুমানগুলোকে বনে ছেড়ে দেওয়া হয়নি।
প্রায় বছর খানেক ধরে ধামইরহাট বনবিট অফিস চত্বরে ওই প্রাণীগুলোকে খাঁচায় বন্দি রেখে বেশ কিছু দিন আগেই অনেকটা গোপনে আবারও অনত্র সরিয়ে নেওয়া হয়। কিন্ত এর আগে ওই প্রাণীগুলোকে নিয়ে ঘটেছে নানা নাটকীয় ঘটনা।
কখনও সেগুলো অবমুক্ত দেখিয়ে আবারো বন্দি রাখা হয়েছে খাঁচায়। আবার কথনও কখনও বনবিভাগের লোকজন বলেছে, প্রাণীগুলোকে বনে ছেড়ে দেওয়ার জন্য সহনশীল ও প্রস্তুত করে গড়ে তোলা হচ্ছে।
খাঁচায় বন্দি অবস্থায় প্রাণীগুলো সড়িয়ে নেওয়ার দৃশ্যটা নাটকের যবনিকা হলেও এরইমধ্যে অবহেলা ও অযত্নে মারা গেছে একটি হনুমান। যার দায় এড়িয়ে গেছেন সংশ্লিষ্টরা। আর এতে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রাণী বিশেষজ্ঞরা।
খোঁজ নিয়ে যানা গেছে, সম্প্রতি ওই দপ্তরেও এসেছে পরিবর্তন। রাজশাহী বিভাগীয় বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোল্লা রেজাউল করিমের স্থলে যোগদান করেছেন মোজাম্মেল হক শাহ।
এর আগে তিনি ছিলেন বান্দরবান এলাকায়। ২০১৪ সালের নভেম্বরে মোল্লা রেজাউল করিম বদলি হয়ে যান।
বনবিভাগ অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের মার্চ মাসের দিকে আলতাদীঘি শালবনে ছেড়ে দেওয়ার জন্য প্রজনন বয়ষ্ক রেসাস ম্যাকাক প্রজাতির তিনটি বানর ও কমন ল্যাঙ্গর প্রজাতির দু’টি হনুমান ধামইরহাট বনবিট কার্যালয়ে আনা হয়। বানরগুলোর মধ্যে দু’টি স্ত্রী ও একটি পুরুষ। হনুমানগুলোর মধ্যে একটি স্ত্রী ও একটি পুরুষ। এগুলোও পূর্ণবয়ষ্ক বলে জানানো হয়।
রাজশাহী বিভাগীয় বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কর্মকর্তারা ওই সময় বাংলানিউজকে জানিয়েছিলেন, শালবনে ছেড়ে দেওয়ার উদ্দেশে যে বানর ও হনুমানগুলো আনা হয়েছে সেগুলো এর আগে পোষ মানিয়ে অবৈধভাবে সার্কাস পার্টিতে দর্শকদের বিনোদনে ব্যবহার করা হতো।
তাই প্রাণীগুলো আলতাদীঘি শালবনে ছেড়ে দেওয়া হলেও নতুন পরিবেশে চলাফেরা করতে পারছিলো না। ভয় পাচ্ছিল। তাই ছেড়ে দেওয়ার পর পরই আবারও খাঁচায় বন্দি করা হয়। তবে প্রাণীগুলোর নিয়মিত দেখভাল করার দাবি করেছিলেন তারা।
কিন্তু ওইসব বানর ও হনুমানগুলোকে খাঁচায় এভাবে বন্দি করে রাখার পর আর কখনই আলতাদীঘি শালবনে ছেড়ে দেওয়া সম্ভব হবে না বলে সেই সময় আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন প্রাণী বিশেষজ্ঞরা। তাই প্রাণীগুলো দ্রুত সড়িয়ে নেওয়ার পরামর্শ ছিলো তাদের।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটির প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম খান বলেছিলেন, বানর ও হনুমান সাধারণত নেচারাল খাবার নিজেরা সংগ্রহ করে খেতেই পছন্দ করে। তারা বিভিন্ন গাছের কচি পাতা ও ফল খেয়ে জীবনধারণ করে।
আলতাদীঘি শালবনে বানর ও হনুমান ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে, তবে সেগুলো অবশ্যই বুনো প্রাণী হতে হবে। সার্কাস বা পোষা বানর-হনুমান ছেড়ে দিলে সেগুলো ওই বনে টিকে থাকতে পারবে না। পরবর্তীতে ওইসব প্রাণী মারা যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করেছিলেন তিনি।
এদিকে, প্রাণীবিদদের পরামর্শে কর্ণপাত না করায় মাস চারেকের মাথায় মারা যায় একটি হনুমান। মৃত প্রাণীটির ময়নাতদন্ত হলেও মারা যাওয়ার দায় নেয়নি কেউ। অযত্নে ও অবহেলায় প্রাণীটি মারা গেছে বলে অভিযোগ তোলেন স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রাণী বিশেষজ্ঞরা।
এ ঘটনার পর অন্য প্রাণীগুলোকে দ্রুত নিরাপদে সড়িয়ে নেওয়ার আবারো পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। আর খাবার না দেওয়া ও যত্ন না নেওয়ার অভিযোগ তোলেন স্থানীয়রা।
কিন্তু বিভাগীয় বন ও বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কর্মকর্তারা কোনো কথায় কান না দিয়ে সাফ জানিয়ে দেন, প্রাণীগুলোকে সহনশীল করে গড়ে তোলার কাজ করা হচ্ছে। দ্রুতই সেগুলো বনে ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু পরবর্তীকালে তা আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
এ বিষয়ে রাজশাহী বিভাগীয় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কর্মকর্তা (সদ্য যোগদানকৃত) মোজাম্মেল হক শাহ বাংলানিউজকে জানান, আগের কর্মকর্তা মোল্লা রেজাউল করিমের সময় কি হয়েছে তা এখন জানানো সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৫