ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

ট্রান্সমিটারযুক্ত অজগর

এবার মুক্তির স্বাদ পেল ‘ইভা’ (ভিডিও)

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, স্পেশালিস্ট এনভায়রনমেন্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০২ ঘণ্টা, মার্চ ৭, ২০১৫
এবার মুক্তির স্বাদ পেল ‘ইভা’ (ভিডিও) ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শ্রীমঙ্গল: আশা, বনি, চৈতি এবং ডিনের পর এবার ইভা। মুক্তির স্বাদ পেল সে।

‘আশা’ ছিল তাদের পথপ্রদর্শক। পরে বনি। এরপর গেল চৈতি। তারপর ডিন। সবশেষে আজ ইভা। পাঁচ-পাঁচটি ট্রান্সমিটারযুক্ত অজগর ছেড়ে দেওয়া হলো লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে। উদ্দেশ্য উন্মুক্তভাবে বিচরণ করা এসব অজগরের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বিলুপ্তপ্রায়-প্রাণী অজগর সংরক্ষণ। লাউয়াছড়ায় প্রবেশের মুখেই পড়ে জানকিছড়া বিট।

শনিবার (০৭ মার্চ) দুপুর ১২টায় জানকিছড়া জলাশয়ের পানিতে দেওয়া হলো ইভাকে। ইভার বয়স ৩ থেকে ৪ বছর। দৈর্ঘ্যে সে ৭ ফুট ২ ইঞ্চি ওজন প্রায় ৬ কেজির মতো।

ইভার অবমুক্তি অনুষ্ঠানে সময় উপস্থিত ছিলেন, কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদুল ইসলাম মিঞা, লাউয়াছড়া বিট কর্মকর্তা মনিরুল ইসলামসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা।
 
বিট কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, ইভাকে ৫ ফেব্রুয়ারি কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুরের বদলেরগাঁও এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। ২৭ ফেব্রুয়ারি তার শরীরে অস্ত্রপচার করে ছোট্ট রেডিও ট্রান্সমিটার স্থাপন করা হয়। কিছুদিন পর্যবেক্ষণ পর সাপটি শারীরিক পূর্ণ সুস্থতা ফিরে পাবার পর আজ (শনিবার) তাকে বনে ছেড়ে দেওয়া হলো। বন মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় এবং অজগর গবেষণা প্রকল্পের উদ্যোগে অজগরের উপর গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
 
অজগর গবেষণা প্রকল্প সূত্র জানা যায়, ২০১৩ সালের ১৮ জুলাই ‘আশা’ নামক অজগরের শরীরে প্রথম রেডিও ট্রান্সমিটার স্থাপনের মাধ্যমে দেশে বন্যপ্রাণী গবেষণার একটি ঐতিহাসিক শুভ সূচনা ঘটে। আশার দৈর্ঘ্য প্রায় ৮ ফুট এবং ওজন সাড়ে ৮ কেজি। ‘আশা’র এ সফলতার ওই বছরের ১১ অক্টোবর ‘বনি’ এবং ‘চৈতি’র দেহে অস্ত্রোপচার করে রেডিও ট্রান্সমিটার বসানো হয়। তিনদিন পর্যবেক্ষণ শেষে তাদের দু’জনকে ১৪ অক্টোবর ছেড়ে দেওয়া হয় লাউয়াছড়ার অরণ্যে।

বনির দৈর্ঘ্য সোয়া ৯ ফুট ও ওজন সাড়ে ১০ কেজি আর চৈতির দৈর্ঘ্য সাড়ে ১১ ফুট এবং ওজন প্রায় ১৩ কেজি। এরপর ২০১৪ সালের ৪ আগস্ট লাউয়াছড়ায় অবমুক্ত করা হয় ৭ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৪ কেজি ওজনের ‘ডিন’কে।
 
অজগর গবেষণা প্রকল্পের প্রধান গবেষক ও প্রখ্যাত সরীসৃপ বিশেষজ্ঞ শাহরিয়ার সিজার রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা আশা, বনি, চৈতি, ডিন ও ইভাসহ মোট ৫টি বার্মিজ অজগরের শরীরে রেডিও ট্রান্সমিটার স্থাপন করে অজগর প্রজাতির রক্ষায় গবেষণার কাজ করে যাচ্ছি। বিলুপ্তপ্রায় সরীসৃপ প্রাণী অজগরকে প্রকৃতির মাঝে বাঁচিয়ে রাখতে এবং তার সম্পর্কে নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করাই মূলত এ গবেষণা অন্যতম উদ্দেশ্য।

তিনি আরও বলেন, ক্যারিনাম সংস্থার উদ্যোগে এ অজগর গবেষণা প্রকল্পটি আমরা বাস্তবায়ন করছি। ১৯৭০ সাল থেকে এ রেডিও ট্রেকিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে পৃথিবীর অন্যান্য দেশ প্রতি বছর হাজার হাজার সাপের উপর গবেষণা করে চলছে।
 
তিনি বলেন, আধঘণ্টার একটি ছোট্ট অস্ত্রপচারের মাধ্যমে অজগরের চামড়া নিচে ট্রান্সমিটারটি বসিয়ে দেওয়া হয়। দু-তিন দিন পর্যবেক্ষণের পর অবমুক্ত করা হয়। অজগরের মোট ওজনের তুলনায় ট্রান্সমিটারের ওজন শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ। ট্রান্সমিটারের ওজন ২০ গ্রাম। দৈর্ঘ্য প্রায় ১ দশমিক ৩। অনেকটা পেন্সিল ব্যাটারির মত। ৫শ’ মিটার থেকে দেড় কিলোমিটার পর্যন্ত এ ট্রান্সমিটারের কার্যক্ষমতা। আমাদের হাতে থাকা রেডিওতে ‘বিপ’ ‘বিপ’ ‘বিপ’ এ সংকেতধ্বনি জানান দিবে তার উপস্থিতি। অর্থাৎ কোথায় কোথায় সে বিচরণ করছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৯ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।