পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ের বৃহৎ দুই শিল্প প্রতিষ্ঠান পঞ্চগড় চিনিকল ও এশিয়া ডিস্ট্রিলারিজের বিষাক্ত বর্জ্যে করতোয়া নদীর তিন অভয়াশ্রমের মাছ মরে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
শুক্রবার (১৩ মার্চ) বিকেল পর্যন্ত নদীর তিনটি মৎস্য অভয়াশ্রমের প্রায় কোটি টাকার মাছ মরে গেছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, জেলার বোদা উপজেলার করতোয়া নদীর নলকুড়া, টেকরামনি ও বোয়ালমারী মৎস্য অভয়াশ্রমের প্রায় ১০ কিলোমিটার মৎস্য আহরণ এলাকায় ওই দুই শিল্প প্রতিষ্ঠানের ফেলা বর্জ্য মিশে নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে গেছে।
শুক্রবার সকাল থেকে নদীর ওই অভয়াশ্রমগুলোতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মরে ভেসে উঠতে শুরু করলে স্থানীয় মাছ চাষিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এতে অভয়াশ্রমের তালিকাভুক্ত মৎস্যজীবীরা ছাড়াও সাধারণ মানুষ ছোট-বড় জাল (মাছ ধারার সরঞ্জাম) নিয়ে নদীতে নেমে পড়েন মাছ শিকারে।
সকাল থেকেই তারা ৫ থেকে ১২ কেজি ওজন পর্যন্ত বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় কয়েকশ’ মণ অর্ধমৃত মাছ ধরে স্থানীয় হাট-বাজারে বিক্রি করেন।
পরে খবর পেয়ে বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু আউয়াল, বোদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজনুর রহমানসহ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মকছেদুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে পঞ্চগড় চিনিকল ও এশিয়া ডিস্ট্রিলারিজের বিষাক্ত বর্জ্য করতোয়া নদীতে ফেলা হয়। এতে নদীর পনি কালো রং ধারণ করে ও বিষাক্ত হয়ে যায়। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অভয়াশ্রমসহ নদীর মাছ বিভিন্ন জায়গায় মরে ভেসে উঠতে শুরু করে। বিষয়টি জানানজানি হলে সকাল থেকেই লোকজন ভেসে ওঠা ও অর্ধমৃত মাছ শিকারে নদীতে নামে।
নলকূড়া মৎস্য অভয়াশ্রম সমবায় সমিতির সভাপতি মো. ইব্রাহিম বাংলানিউজকে জানান, দীর্ঘদিন ধরেই পঞ্চগড় চিনিকল ও এশিয়া ডিস্ট্রিলারিজের বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ সরাসরি ফুলতলা এলাকা দিয়ে করোতোয়া নদীতে অবাধে ফেলা হচ্ছিল। এ নিয়ে আমরা বার বার প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করলেও কোনো সুরাহা হয়নি। এই অভয়াশ্রমগুলোর উপর আমাদের প্রায় ছয় থেকে সাতশ’ পরিবার নির্ভর করে। এই মাছ মরে যাওয়ায় আমাদের রুজি-রোজগার বন্ধ হয়ে গেল।
এ বিষয়ে পঞ্চগড় চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুর রশীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, চিনিকলের বর্জ্য শোধন শেষে নদীতে ফেলা হয় এটা ঠিক, তবে বিষাক্ত বর্জ্য ফেলা হয় না।
এশিয়া ডিস্ট্রিলারিজের ব্যবস্থাপকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বোদা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মকছেদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, ওই দুই কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য নদীতে মিশে পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাওয়ায় অ্যামোনিয়ার সৃষ্টি হয়। এতে ধীরে ধীরে মাছ মরতে শুরু করে। পরীক্ষার জন্য নদীর পানি সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হবে বলেও তিনি জানান।
বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু আউয়াল বলেন, আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। মৎস্য অভয়াশ্রমে মৎস্যজীবীদের ক্ষতি করে বাইরের কেউ যাতে আর মাছ শিকার না পারে সেজন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১৫