ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

সূর্যগ্রহণের সময় কী ঘটে প্রাণিজগতে?

পরিবেশ-জীববৈচিত্র্য ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৬ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১৫
সূর্যগ্রহণের সময় কী ঘটে প্রাণিজগতে?

ঢাকা: ইউরোপ-আমেরিকায় চলছে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ। আন্তর্জাতিক সময় শুক্রবার (২০ মার্চ) সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা ৪৫ মিনিট) থেকে শুরু হওয়া এ গ্রহণ পূর্ণতা পেয়ে বিকেল ৩টা ৪৩ মিনিট থেকে গ্রহণ কাটতে শুরু করেছে।



সূর্যগ্রহণ নিয়ে নানান সংস্কার-কুসংস্কার রয়েছে মানুষের মধ্যে। কিন্তু দিনের বেলা হঠাৎ রাতের মতো অন্ধকার নেমে আসার প্রভাব প্রাণিকুলে কীভাবে পড়ে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন চিড়িয়াখানায় প্রস্তুতি নেওয়া হলেও ‍অন্ধকার আকাশ পশু-পাখিদের বিভ্রান্ত করতে পারে। নিশাচর প্রাণীরা, বিশেষত পেঁচা দিনের বেলায়ই রাত ভেবে জেগে যেতে পারে, ভেড়ার পাল খুঁজতে পারে ঘুমানোর জন্য জায়গা। এমনকি দিনের পাখিরা (Songbird) কলরব বন্ধ করে দিতে পারে।

জেডএসএল লন্ডন-এর অমেরুদণ্ডী প্রাণী বিভাগের প্রধান ডেভ ক্লার্কের মতে, পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ রাতে চলা পতঙ্গ ও প্রজাপতিদের চলাফেরাতেও বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষত যারা দিক-নির্ধারণ করতে দিনের আলো ব্যবহার করে।

তিনি বলেন, বছরের সবচেয়ে বড় সূর্যগ্রহণের সময় সূর্যের ৮৩ থেকে ৯৮ শতাংশ চাঁদের ছায়ায় ঢাকা পড়বে। সূর্যগ্রহণটি উত্তর আটলান্টিক থেকে আর্কটিক সার্কেল ধরে উত্তরমেরু পর্যন্ত অঙ্কিত রেখা বরাবর দেখা যাবে।

একই কথা বলেন দ্য সোসাইটি ফর পপুলার অ্যাস্ট্রোনোমির (এসপিএ) ভাইস প্রেসিডেন্ট রবিন স্ক্যাগেল। তার মতে, নিজ কক্ষপথে আবর্তনের সময় চাঁদ পৃথিবী ও সূর্যের মাঝামাঝি চলে এলে এ সূর্যগ্রহণ হয় এবং প্রাণিকূলে এর প্রভাব পড়ে।

দ্য ইউনিভার্সিটি অব ক্যামব্রিজের অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার অনুষদের এমেরিটাস অধ্যাপক ডোনাল্ড ব্রুম বলেন, প্রাণিকূলের ওপর সূর্যগ্রহণের প্রভাব এত বেশি যে একটু লক্ষ্য করলেই মানুষ বুঝতে পারবে তার আশে-পাশে অনেক পাখি গ্রহণের সময় ‍ডাকছে না। নিরাপদ ভেবে অনেক পাখি গাছের উঁচু ডালে বা নির্জন স্থানে চলে যেতে পারে। কারণ প্রতিটি প্রাণীরই ২৪ ঘণ্টার একটি নিয়মতান্ত্রিক কর্মতালিকা রয়েছে। তারা বুঝতে পারে এটা রাত নয়, কিন্তু অস্বাভাবিক কিছু হচ্ছে। পোষা বিড়াল ও কুকুরও বিরক্ত বোধ করতে পারে।

ব্রুম বলেন, প্রতি দিনই রাত আসে, এর মৌলিক কোনো পার্থক্য হয় না। তবে সকালে রোদের তীব্রতা একটু বেশি হলেও এসব প্রাণীদের বিরক্তি বোধ হয়।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কুকুরের দিকে লক্ষ্য করলেই দেখতে পাবেন, তারা বেশ বিচলিত। কেননা তারা বোঝার চেষ্টা করছে আসলে কি হতে চলেছে।

ভারতে পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা যায়, পেঁচা, বাদুড়, সকালের পাখি, দাঁড় কাক, গঙ্গা ফড়িং এবং মৌমাছির ওপর এর প্রভাব পড়বে। এর আগে ১৯৫৫ সালের জুন মাসে ভারতে জুয়োলোজিক্যাল জরিপে দেখা গেছে, ভোমরও তাদের চাকে পালিয়েছিল। এবারও এমন হতে পারে বলে ধারণা করছে গবেষকরা।

গবেষকরা আরও মনে করছেন, আলো না থাকায় তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় পোকা-মাকড়দের খাদ্য সংরক্ষণে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি যোগাযোগেও তাদের বিকল্প ব্যবস্থা নিতে হতে পারে।

১৯৭৩ সালে গবেষকরা দেখেন, গর্তে বসবাসকারী কাঠবিড়ালও সূর্যগ্রহণের সময় বিচলিত হয়।

গরুর ক্ষেত্রে বিষয়টি সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কেননা গরুর খাওয়া এবং বিশ্রামের সময় নিজের মতো করে ভাগ করে নেয়।

আরেক গবেষক পল মার্ডিন, জলহস্তিরাও আতঙ্কিত হয়ে থাকে সূর্য গ্রহণের সময়। এমনকি গ্রহণ শেষেও তারা বিভ্রান্ত হয়, ঠিক কোন সময় চলছে তা নির্ধারণ করতে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৮ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।