রাজশাহী: জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থাকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে রাসায়নিক ও পেস্টিসাইডের (বালাইনাশক) ব্যবহার নিয়ে ভাবতে হবে এবং পর্যায়ক্রমে এর ব্যবহার কমিয়ে জৈব বালাইনাশকের ব্যবহার বাড়াতে হবে।
রোববার (২৯ মার্চ) রাজশাহী মহানগরে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা) আয়োজিত ‘পেস্টিসাইড ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার: জনস্বাস্থ্য, পরিবেশের ওপর প্রভাব ও করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভার মূল প্রবন্ধে এ তথ্য উপস্থাপন করা হয়।
প্রবন্ধে বলা হয়, দেশে প্রায় ১২৩ প্রকার ক্ষতিকারক হরমোন আনারস, কলা, আম, কাঁঠাল, টমেটোসহ বিভিন্ন ফল ও সবজিতে প্রয়োগ করা হয়। এসব হরমোন ফল বড় করা, অসময়ে ধরা এবং অপরিপক্ক ফলকে পাকানোর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। মানব দেহ ও পরিবেশের ওপর এর ক্ষতিকর প্রভাব সুদূরপ্রসারী।
রাসায়নিক সারের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার মাটির উর্বরতা শক্তি নষ্ট করে উৎপাদন ক্ষমতা কমায়। পেস্টিসাইড ও রাসায়নিক দ্রব্য বৃষ্টির পানির সঙ্গে খাল-বিল, নদী-নালা, পুকুর-জলাশয় ইত্যাদির পানিতে মিশে পানি দূষিত করে যা মাছসহ অন্যান্য জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
এক গবেষণা তথ্যে দেখা যায় ১৯৮০ সালে পৃথিবী জুড়ে যেখানে পেস্টিসাইডের ব্যবহার ছিল ৫ মিলিয়ন টন, ১৯৯৫ সালে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৭ মিলিয়ন টন। আর বর্তমান এর পরিমাণ প্রায় ১০ মিলিয়ন টনের কাছাকাছি।
আলোচনা সভায় বলা হয়, কীটনাশকের বিষক্রিয়ায় মানব দেহের হৃৎপিণ্ড ও যকৃতের বিভিন্ন সমস্যা, ক্যান্সার, হাপানি, অন্ত্রে ব্যাথা, পেটে পিড়া, গর্ভপাত, বন্ধাত্ব, শ্বাসকষ্ট, কিডনি জটিলতা, স্নায়ুর ক্ষতি, ফুসফুসের রোগ, ডায়রিয়া, মাংসপেশির সংকোচন, বমি-বমি ভাব, বমি হওয়া, মুখে লালা আসা, চোখ দিয়ে পানি পড়া, মাথা ব্যাথা, চোখের মণি ছোট হওয়া, চোখে ঝাপসা দেখা, তলপেটে ব্যাথা, খিচুনি ইত্যাদি রোগ ও লক্ষণ দেখা যায়। ফলে কীটনাশক আজকের পৃথিবীতে অভিশাপ হিসাবে দেখা দিয়েছে।
সভায় রাজশাহীর স্থানীয় দৈনিক সোনার দেশ’র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হাসান মিল্লাতের সভাপতিত্ব প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক হযরত আলী।
বিশেষ অতিথি ছিলেন- ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আলীম উদ্দীন, মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কামারুজ্জামান, দৈনিক সোনালী সংবাদের সম্পাদক লিয়াকত আলী, গোদাগাড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাজদার হোসেন প্রমুখ।
আলোচনা সভার মূল প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোনমি অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগের প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান। সঞ্চালনা করেন- বেলার আইনজীবী সাঈদ আহমেদ কবীর। সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন- বেলার রাজশাহী বিভাগীয় সমন্বয়কারী তন্ময় কুমার সান্যাল।
বাংলাদেশ সময়: ০৪২৩ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০১৫