শ্রীমঙ্গল: কথা বলাতে পারাই কাল হয়েছে তার! সে মানুষের কণ্ঠ হুবহু অনুকরণে পটু। শুধু মানুষের কণ্ঠই বা কেন? কিছু কিছু প্রাণীর ডাকগুলোও সে অবিকল নকল করে নিজের কণ্ঠে ডাকতে পারে।
দারুণভাবে কণ্ঠস্বর অনুকরণ করতে পারে বলে মানুষ এদের ছানা বন থেকে ধরে এনে খাঁচায় পোষার কারণে সম্প্রতি এ প্রজাতিটি দুর্লভ হয়ে গেছে।
পাহাড়ি ময়না ছাড়াও একে ময়না, পাতি ময়না, সোনাকানি ময়না বলা হয়। এর ইংরেজি নাম Common Hill Myna এবং বৈজ্ঞানিক নাম Gracula religiosa। এরা জোড়া বাঁধে সারা জীবনের জন্য। কখনো মাটিতে নামে না। এর দৈর্ঘ্য ২৯ সেমি এবং ওজন ২১০ গ্রাম। দেখতে মাঝারি আকারের শালিক পাখির মতো। শরীর কুচকুচে নীলচে কালো। প্রজননের সময় মাথা আর ঘাড়ে হালকা বেগুণি আভা দেখা যায়। হলুদাভ-কমলায় মোড়া সোনার গয়নার মতো চামড়ার একটি পট্টি রয়েছে কান ও মাথার পিছনে।
এ প্রসঙ্গে ১৯৮৫ সালের আমার ছেলেবেলার একটি টুকরো স্মৃতি রয়েছে। বাবা চাকরিসূত্রে কমলগঞ্জ উপজেলার মদনমোহনপুর চা বাগানের ব্যবস্থাপক। আমার মা খুব শখ করে একবার একটি পাহাড়ি ময়না পুষেছিলেন। কিছুদিন পরই দেখলাম ওই ময়নাটি আমার নাম ধরে ডাকছে। কী যে ভালো লেগেছিল তখন। সেই স্মৃতিটুকু আজও উজ্জ্বল। দু’বছর পর সেই ময়নাটি হঠাৎ মারা গেলে আমার সে কী কান্না! এভাবেই ময়নাটি আমাদের পরিবারের সব সদস্যদের সঙ্গে ভালোবাসায় একাত্ম হয়ে মিশে গিয়েছিলো। এখন আফসোস হয় কেন পুষেছিলাম!
আমাদের এলাকায় একেকটি পাহাড়ি ময়নার ছানার দাম দু’ হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। অর্থের লোভে পাহাড়ঘেরা নৃ-তাত্ত্বিক অধিবাসীরা অথবা চা বাগানের শ্রমিকরা পাহাড়ের উঁচু গাছ থেকে ময়না ছানা নিয়ে এসে বিক্রি করে। এক সময় প্রকাশ্যে বিক্রি করলেও এখন গোপনে বিক্রি করে থাকে। আমাদের দেশের অনেক স্থানেই এখনও গোপনে বিক্রি হচ্ছে এ পাখিগুলো। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ আইনে বর্তমানে এ পাখিটি বিক্রয়, শিকার, পাচার ও পোষা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
প্রাকৃতিক বন ধ্বংসের ফলে বড় বড় গাছপালা উজাড় হওয়ায় এদের প্রজনন সংকটও দেখা দিয়েছে। কারণ এরা মাটি থেকে কমপক্ষে দশ/পনেরো মিটার উঁচুতে জীবিত বা মৃত গাছের খুড়লে বাসা তৈরি করে ডিম দেয়। কিন্তু সেই ডিম থেকে বাচ্চা জন্ম নিলেও ওড়ার আগেই বনঘেঁষা মানুষরা অর্থের লোভে সেই বাচ্চাগুলো ধরে এনে ময়নাপ্রেমীদের কাছে বিক্রি করে দেয়। এভাবেই দ্রুতগতিতে সংখ্যায় কমে যাচ্ছে তারা।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১৫
এএ/