ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

মধুর ভুলে বাঁচলো বিরল বামন মাছরাঙা

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, স্পেশালিস্ট এনভায়রনমেন্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫৭ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৫
মধুর ভুলে বাঁচলো বিরল বামন মাছরাঙা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শ্রীমঙ্গল: বাইরে অশান্ত ঝড়। দমকা হাওয়ার কবল থেকে নিজেকে বাঁচাতে অবশেষে বামন মাছরাঙা আশ্রয় নিলো পাকা দালানে।

গৃহমালিক সেই আহত পাখিকে প্রয়োজনীয় সেবা দিয়ে সুস্থ করে তোলেন। অবমুক্ত করেন পাখিটিকে। পাখির প্রতি এমন ভালোবাসাই বোধহয় প্রকৃতিতে পাখিদের বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করে।

এখন ঝড়-বৃষ্টির মৌসুম। পাখিদের জন্য সময়টি খুব বিড়ম্বনার। তাদের সহজ-সরল ও বিশ্বস্ত ডানা মেলে ধরতে পারে না বাতাসের তীব্রতায়। শুধু তা-ই নয়, রাতের অন্ধকারে হঠাৎ করে প্রকৃতিতে তীব্রবেগে ঝড়োবাতাস আর বজ্রপাত পাখিদের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু ডেকে আনে। ডালটিও তখন প্রতারণা করে পাখিটির সঙ্গে!

সম্প্রতি ঝড়ে আহত একটি বিরল বামন মাছরাঙা হয়তো ‘ভুল’ করে আশ্রয় নিয়েছিলো এক পাখিপ্রেমীর প্রতিষ্ঠানে। আর সে কল্যাণেই বেঁচে গেলো পাখিটি।

খবরটি দিলেন মৌলভীবাজারের সাংবাদিক হাসনাত কামাল। তিনি বলেন, ঝড়ের কবলে পড়ে আহত অবস্থায় পাখিটি আশ্রয় নেয় একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে। ওই দোকানের মালিক ডা. এমএ আহাদ পাখিটিকে বাসায় নিয়ে পরিবারের লোকজনের সাহায্যে সেবাশুশ্রুষা করে সুস্থ করে তোলেন। দু’দিন পর গত শনিবার তাকে ছেড়ে দেন মুক্ত আকাশে।

তিনি আরও বলেন, ডা. এমএ আহাদ পাখিটিকে চিরচেনা সাধারণ মাছরাঙা ভাবলেও আমি ওই পাখিটির ছবি নিয়ে যোগাযোগ করি পাখি গবেষক ও আলোকচিত্রী তানিয়া খানের সঙ্গে। তানিয়া খান আমাকে জানান যে এটা সাধারণ মাছরাঙা নয়। এটি উদয়ী বামন মাছরাঙা। এর ইংরেজি নাম Oriental Dwarf Kingfisher।

তানিয়া খান বাংলানিউজকে বলেন, বামনরাঙা মাছ শিকারি পাখি। এরা দুনিয়াজুড়ে বিপদগ্রস্ত ও বাংলাদেশে অনিয়মিত পাখি উদয়ী বামনরাঙা। ঘনবন কিংবা পাহাড়ি ছড়াই হলো তার আবাসস্থল। এরা গ্রীষ্মকালে প্রজনন করতে বাংলাদেশে আসে। আবার অক্টোবর-নভেম্বরে চলে যায়।  

এদের দৈর্ঘ্য ১৩ সেন্টিমিটার। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথা ও চাঁদি, ঘাড় কমলা রঙের। পিঠ, কাঁধ-ঢাকনি, ডানা-ঢাকনি, ডানার পালক ডাকি নীলচে কালো। কোমর ও লেজ কমলা রঙের। গলা সাদা ও চোখের ওপর বা ঘাড়ের পাশে সাদা ফুটকি রয়েছে। পেট কমল-হলুদ যা নীচের দিকে ক্রমান্বয়ে ফ্যাকাসে হয়েছে। চোখ গাঢ় লাল, ঠোঁট ও পায়ের পাতা প্রবাল লাল। ছেলে ও মেয়ে পাখির চেহারা প্রায় অভিন্ন।

পাতাঝরা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ও সবুজবনে এরা বিচরণ করে। মৌলভীবাজার, সিলেট, চট্টগ্রাম ও ঢাকার বনে এদের দেখা মেলে। ভারত, নেপাল, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, লাওস, চীন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় এদের বিস্তৃতি।

বাংলাদেশ সময়: ০০৪৪ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৫
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।