পঞ্চগড়: দেশের সর্ব উত্তরের ভারত সীমান্তবর্তী জেলা পঞ্চগড়। হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত হওয়ায় এ জেলার ভূগর্ভে রয়েছে প্রকৃতিক সম্পদের বৈচিত্র্যময় সম্ভার।
সমতল ভূমি খনন করে এই পাথর উত্তোলনের ফলে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে আবাদি জমি। সেই সঙ্গে বাড়ছে ভূমিধ্বস ও ভূমিকম্পের মতো বড় ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা।
এসব পাথর যুগ যুগ ধরে এখানে রয়েছে। প্রায় তিন দশক ধরে পঞ্চগড় জেলার সদর ও তেঁতুলিয়া উপজেলার বিস্তির্ণ এলাকার সমতল ভূমি খনন করে এ পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে।
মাত্র ১০ থেকে ১৫ ফুট মাটি খনন করলেই মেলে ১২ খেকে ১৫ ফুট স্তরের নূড়ি পাথর।
পাথর উত্তোলনের ক্ষেত্রে কোনো নীতিমালা মানা হচ্ছে না। ‘জমি যার খনি তার’ এই পদ্ধতিতে পাথর ব্যবসায়ীরা স্থানীয় জমির মালিকদের কাছ থেকে বিভিন্ন মেয়াদে জমি লিজ নিয়ে পাথর উত্তোলন করছেন। পাথর উত্তোলনের পর নির্দিষ্ট সময়ে মালিকদের কাছে সেই জমি ফেরত দেওয়া হয়।
সমতল ভূমি কেটে (টপ সয়েল) পাথর উত্তোলনের পর ফসলের উপযুক্ত আবাদি জমিতে পরিণত হতে সময় লাগে ১০ থেকে ১২ বছর।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, ২০০৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার হেক্টর আবাদি জমি কেটে (সমতল ভূমি) পাথর উত্তোলন করা হয়েছে।
এর মধ্যে ২০০৮-০৯ সালে পাথর উত্তোলন করা হয়েছে ১৫৪ হেক্টর আবাদি জমিতে। ২০১৪-১৫ সালের হিসেব অনুযায়ী ৬৩ হেক্টর আবাদি জমির পাথর উত্তোলন করা হয়েছে। যার বিরূপ প্রভাব পড়ছে জাতীয় খাদ্য উৎপাদনে। গত ১০ বছরে এই জেলায় প্রতি বছর প্রায় চার হাজার মেট্রিকটন খাদ্য শস্য কম উৎপাদন হচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরে পাথর উত্তোলন করায় আবাদি জমি কমে যাচ্ছে। কৃষি ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ না থাকায় পাথর উত্তোলন, প্রক্রিয়াজাত করণ ও সরবরাহের কাজই এখন স্থানীয় হাজারো শ্রমিকের ভরসা।
পঞ্চগড় জেলা পরিবেশ পরিষদের সভাপতি ও সরকারি মহিলা কলেজের ভূগোল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান তৌহিদুল বারী বাবু বাংলানিউজকে বলেন, পঞ্চগড়ের এই খনিজ পাথর উত্তোলন প্রক্রিয়াটি বিজ্ঞানসম্মত হওয়া দরকার। যেভাবে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে, তাতে বড় ধরনের ভূমি ধ্বস বা ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে। এ বিষয়টি এলাকার মানুষ ও রাষ্ট্রযন্ত্রের ভেবে দেখা উচিত।
পঞ্চগড় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক স ম আশরাফ আলী বাংলানিউজকে বলেন, আবাদি জমি নষ্ট করে সমতল ভূমির পাথর উত্তোলন প্রক্রিয়া বন্ধের জন্য জেলা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে জোড় প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
অল্প সময়ে বেশি লাভবান হওয়া যায় এমন ফসল যেমন-হাইব্রিড জাতের টমেটো, তরমুজ, গম, ভুট্টা ও বিভিন্ন ধরনের সবজি আবাদ করতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। যার ফলন আড়াই থেকে তিন মাসের মধ্যে পাওয়া যায়।
জেলাবাসীর প্রত্যাশা, নীতিমালা ছাড়া যত্রতত্র সমতল ভূমি খনন করে পাথর উত্তোলন প্রক্রিয়ার ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭২৩ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১৫
এসআই