ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

খুঁড়লে ছানার মায়ের কোলে ফেরার গল্প

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, স্পেশালিস্ট এনভায়রনমেন্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০৫ ঘণ্টা, জুন ২, ২০১৫
খুঁড়লে ছানার মায়ের কোলে ফেরার গল্প

শ্রীমঙ্গল: সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। ঝাপসা হয়ে এসেছে প্রকৃতি।

এমন সময় গাছ থেকে উড়াল দিতে গিয়ে হঠাৎ একটি খুঁড়লে পেঁচার ছানা ঢুকে পড়লো জানালার গ্রিলের ফাঁকে। ঢুকলো তো ঢুকলোই! বেরিয়ে যাওয়ার নাম নেই! বাড়ির গৃহকর্তা জানালা লাগানোর সময় ব্যাপারটি টের পাননি। ওভাবেই সারারাত ছিলো ছানাটি। মাঝে মধ্যে চিউ চিউ করে ডাক দিচ্ছিলো শুধু।

মধ্যরাত থেকে সেই চিউ চিউ ডাকের গতি বাড়লো। সেই ডাক শুনে ঘুম থেকে উঠে পড়লাম। সকাল তখন ৬টা। বেডরুম থেকে বেরুতেই সেই ডাক আরো তীব্রভাবে শোনা যাচ্ছে। লক্ষ্য করলাম ড্রইংরুমের জানালার দিকে থেকে ডাকটি ভেসে আসছে। কাছে গিয়ে জানালার পর্দা সরাতেই দেখি - খুঁড়লে পেঁচার একটি ছানা। আমি ভীষণ অবাক হয়ে গেলাম!  

ছানাটির ডাক তখন বন্ধ। সে অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। আমার তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া ছেলে ‌কাব্য সেও পাখি খুব ভালোবাসে। বিছানায় ঘুমে আচ্ছন্ন কাব্যর কানের কাছে ঘটনা বলতেই সে লাফ মেরে বিছানা থেকে উঠলো। কাছে গিয়ে পাখিটিকে দেখে ভীষণ আশ্চর্য হলো এবং তার মায়ের কাছে ছেড়ে দেওয়ার জন্য আমাকে বারবার অনুরোধ করতে লাগলো।

কয়েকটি ছবি তুলেই ছানাটিকে নিয়ে গেলাম বারান্দার পাশের জবা গাছে। সেই গাছের ডালের উপর বসিয়ে দিলাম তাকে। ওর মা তখন পাশের বকুল গাছের উপরের ডালে বসে দৃশ্যটি পর্যবেক্ষণ করছে। ৯০ ডিগ্রিভাবে মাথা ঘুরিয়ে দেখছে আমাদের কাণ্ড-কারখানা! আমাদের দু’জনের অপেক্ষার পালা শুরু হলো– কখন ছানাটি তার মায়ের কাছে যায়।   

কিন্তু ডানার মেলে উড়তে গিয়েই হঠাৎ সে মাটিতে পড়ে গেল। নিচে রয়েছে কুকুর-বেড়াল। উপরে উড়ছে শঙ্খচিল ও দাঁড়কাক। আমাদের ভয় সেখানেই। তাড়াতাড়ি গিয়ে আবার ছানাটিকে গাছের ডালে বসিয়ে দিলাম। এবার সে ক্রমাগত চিউ চিউ করে ডাকতে শুরু করে দিয়েছে। আর তার মাও উঁচু ডালে বসে মাঝে মাঝে তার ডাকের উত্তর দিচ্ছে।

ছানাটি ধীরে ধীরে পাখা ঝাপটানো শুরু করলো। একবার দু’বার করে এগিয়ে যেতে চেষ্টা করলো এক ফুট দূরত্বে অবস্থিত এক ডাল থেকে অন্য ডালে। এ রকম করতে করতে এক সময় সে পৌঁছে গেল উপরের ডালে। খুব অবাক হয়ে দেখলাম- ছানাটির এগিয়ে যাওয়ার কী অদম্য ইচ্ছাশক্তি। আমরা দু’জনে দেখলাম ছানাটি তার মায়ের স্নেহসান্নিধ্যে পাশে বসে রয়েছে।

খুঁড়লে পেঁচার ইংরেজি নাম Spotted Owled এবং বৈজ্ঞানিক নাম Athene brama। এরা আমাদের দেশের সুলভ আবাসিক পাখি। এরা দৈর্ঘ্যে ২০ সেমি এবং ওজনে ১১৫ গ্রাম হয়। সচরাচর জোড়ায় অথবা পারিবারিক দলে এদের দেখা যায়।

বাংলাদেশ সময়: ০১৫৭ ঘণ্টা, জুন ০২, ২০১৫
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।