ঢাকা: সমসাময়িক পর্যায়ের অন্য সগোত্রীয় প্রজাতি ও পৃথিবীতে বিরাজমান প্রাণিকূলের সঙ্গে অনাকাঙ্ক্ষিত প্রতিযোগিতা এড়াতে দ্রুত বেড়ে উঠেছিলো কিছু ডাইনোসর। ফলে পরিবেশ থেকে তারা বেশি পরিমাণ অক্সিজেন গ্রহণ ও তুলনামূলক বেশি উষ্ণতা পাওয়ার পাশাপাশি অপেক্ষাকৃত বড় এলাকায় বিচরণের সুবিধা পেতো।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি জার্নালে প্রকাশিত, জার্মানির মিউনিখে অবস্থিত লুডউইগ ম্যাক্সিমিলান বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী রোল্যান্ড সুকিয়াস ও সুইজারল্যান্ডের জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞানী ড্যারিল কড্রনের নেতৃত্বে পরিচালিত দু’টি গবেষণা প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করা হয়েছে।
কিছু বিজ্ঞানী দাবি করেন, উষ্ণ তাপমাত্রা, অক্সিজেন সমৃদ্ধ ও বড় এলাকায় ডাইনোসরদের বৃদ্ধি অপেক্ষাকৃত বেশি ছিলো। এর অর্থ পরিবেশের উপাদানের ডাইনোসরদের আকৃতির ওপর ব্যাপক প্রভাব ছিলো।
কিন্তু রোল্যান্ড সুকিয়াস ও তার সহকর্মীরা লক্ষ্য করেন, পরিবেশের উপাদানের সঙ্গে শারীরিক পরিবর্তন নির্ভরশীল নয়। গবেষকরা ৩০ কোটি বছর থেকে ১৫ কোটি বছরের মাঝামাঝি সময়ে, পার্মিয়ন, ট্রায়াসিক ও জুরাসিক যুগে জীবিত ছিলো এমন ৪শ’ প্রজাতির প্রাণীর উরুদেশের হাড়ের দৈর্ঘ্য পরীক্ষা করেন। এই প্রাণিপ্রজাতিগুলোর মধ্যে ডাইনোসর ও তাদের পূর্বসূরিরাও ছিলো, যার মধ্যে উড়তে পারা টেরোসর্স ও স্তন্যপায়ীদের পূর্বপুরুষরা উল্লেখযোগ্য।
গবেষকরা পরিবেশে অক্সিজেনের মাত্রা, উষ্ণতা ও শুষ্ক ভূমির পরিসরের সঙ্গে এই হাড়গুলোর আকৃতির তুলনা করেন। কিন্তু এ অনুসন্ধানে কোনো সামঞ্জস্য খুঁজে পাননি তারা। আরও নিশ্চিত হতে গবেষকরা আজ থেকে সাড়ে ছয় কোটি বছর থেকে দশ হাজার কোটি বছর আগের মাঝামাঝি সময়ে, প্যালিওসিন ও প্লাইস্টোসিন যুগে জীবিত ছিলো এমন প্রাণীর হাড়ের আকৃতির সঙ্গে পরিবেশের একই উপাদানগুলোর তুলনা করেন। তাতেও সামঞ্জস্য পাওয়া যায়নি।
গবেষক দলের একজন লুডউইগ ম্যাক্সিমিলান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালানটোলজিস্ট রিচার্ড বাটলার বলেন, এসব অনুসন্ধানে আমাদের ধারণাই সত্যি হয়েছে। ডাইনোসরদের আকৃতির ওপর পরিবেশের উপদানের খুব একটা প্রভাব ছিলো না।
নতুন এ গবেষণার ব্যাপারে লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্টোরি মিউজিয়ামের প্যারানটোলজিস্ট পল ব্যারেট বলেন, হয়তো এ অনুসন্ধানের তথ্য সত্যি হতে পারে। তবে আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, এটাই চূড়ান্ত অনুসন্ধান নয়। শারীরিক বৃদ্ধিতে অবশ্যই পরিবেশের প্রভাব রয়েছে।
এদিকে সুইজারল্যান্ডের জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞানী ড্যারিল কড্রন ও তার দলের গবেষণা প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, কিছু ডাইনোসরের আকার তাদের ডিমের বাইরের স্তরের ওপর নির্ভর করতো।
এতে আরও বলা হয়, বড় ডিমগুলোর বাইরের স্তর অবশ্যই পুরু ছিলো। ফলে এর ভেতর নবজাতকের শ্বাস-প্রশ্বাসে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের ঘাটতি পড়তো। যদিও যৌবনে ডাইনোসররা বিশাল আকৃতি ধারণ করতো, কিন্তু এই প্রতিবন্ধকতা তাদেরকে অপেক্ষাকৃত ছোট বাচ্চা উৎপাদনে বাধ্য করতো। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, টিটানোসর হ্যাচলিংস ৪ টন ওজনের দানবীয় ডাইনোসরের তুলনায় আড়াই হাজার গুণ ছোট ছিলো। একইভাবে এশীয় অঞ্চলের একটি হাতির (Elephas maximus) বাচ্চা তার মায়ের চেয়ে ২৫ গুণ ছোট।
যখন কোনো বৃহৎ আকারের প্রাণীর বাচ্চা ছোট অবস্থায় জন্মায়, তখন তাকে যৌবনে উপনীত হওয়ার আগে বিপুল সংখ্যক সম আকৃতির প্রাণিপ্রজাতির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে হয়। এমনটি জানিয়ে কড্রন ও তার সহকর্মীরা গবেষণায় দাবি করেন, ছোট ও মাঝারি আকৃতির ডাইনোসরদের মধ্যে এক ধরনের প্রতিযোগিতা ছিলো। আর এই প্রতিযোগিতা এড়াতেই কিছু ডাইনোসর দ্রুত বেড়ে উঠেছিলো।
তবে পরবর্তীতে এই বিশাল আকৃতিই ডাইনোসরদের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। আজ থেকে সাড়ে ছয় কোটি বছর আগে, ক্রেটাসিয়াস যুগে পৃথিবীতে গ্রহাণু আছড়ে পড়ে। সেসময় বেশিরভাগ বিশালদেহী প্রাণীরই বিলুপ্তি ঘটে। জুরাসিক ও টারশিয়ারি যুগের মাঝামাঝি সময়, যাকে মেসোজোয়িক যুগের শেষ পর্যায় বলা হয়, সেই সময়টাই ক্রেটাসিয়াস যুগ বলে পরিচিত।
গ্রহাণুর হঠাৎ আঘাতে বড় ধরনের দুর্যোগ নেমে আসে পৃথিবীতে। বড় আকৃতির পাশাপাশি ছোট আকৃতির ডাইনোসর প্রজাতিগুলোও প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যায় সে দুর্যোগে। শুধু বেঁচে যায় পাখি প্রজাতি। পাখি ছাড়াও ছোট প্রজাতির অনেক স্তন্যপায়ী প্রাণীও বেঁচে যায় সেসময়।
যুক্তরাজ্যের হ্যাটফিল্ডে রয়াল ভেটেরিনারি কলেজের বিবর্তন বিষয়ক জীববিজ্ঞানী জন হাচিনসন বলেন, ডিমের বাইরের স্তরের কারণে স্তন্যপায়ীদের থেকে ডাইনোসরদের আলাদা হওয়ার বিষয়, তাদের দেহের বিশালতা ও এই বিশাল আকৃতির কারণে তাদের বিলুপ্তি সম্পর্কে যে ব্যাখ্যা, তা আমার ভালো লেগেছে। এ অনুসন্ধানের বিষয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হবে। আর এ বিতর্ক থেকেই এর নির্ভরযোগ্যতা প্রমাণিত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৪৭ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৫
আরএইচ/এটি/এএ
** ডাইনোসরের রক্ত উষ্ণ, না শীতল?
** শুষ্ক পরিবেশই কাল হলো ডাইনোসরদের!