ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

হারিয়ে যাচ্ছে ‘লাফারু’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, এনভায়রনমেন্ট স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৩১ ঘণ্টা, জুলাই ২, ২০১৫
হারিয়ে যাচ্ছে ‘লাফারু’ ছবি : সংগৃহীত

শ্রীমঙ্গল: খরগোশ আর কচ্ছপের গল্পটা আমাদের সবারই কম-বেশি জানা। খরগোশ তার স্বাভাবিক নিয়মে অবলীলায় কচ্ছপের চেয়ে দৌড়ে নির্দিষ্ট স্থানের আগে পৌঁছে গেলেও শেষ পর্যন্ত কিন্তু শিরোপা যায় কচ্ছপের হাতেই।



উপদেশমূলক এ গল্পটি লোকমুখে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অন্যতম কারণ ছিল সে সময়ে খরগোশ আর কচ্ছপের ব্যাপক সহজলভ্যতা। মানুষ যা দেখে, যে পরিবেশে থাকে সেখান থেকেই তৈরি হয় গল্পের প্লট। অতীত বাংলাদেশ সমৃদ্ধ ছিল প্রচুর জীববৈচিত্র্যে। কিন্তু গল্পের সেই খরগোশ বর্তমানে গল্পেই রয়ে
গেছে!

ব্যাপকভাবে প্রজনন বৃদ্ধির সুযোগ পাচ্ছে না লাফিয়ে লাফিয়ে চলা এই তৃণভোজী স্তন্যপায়ী প্রাণীটি। খরগোশকে লম্ফবিদ বললেও হয়তো ভুল বলা হবে না। কারণ তাদের দৌড় লাফের সমান। বলা যায় তারা লাফদৌড় দেয়। এজন্য হয়তো কোনো কোনো এলাকায় একে ‘লাফারু’ বলা হয়।

পাহাড়ি এলাকা, বন-জঙ্গল ছাড়াও কাশবন, ঘাসবন, খড়বন, পানের বরজ, নিভৃত ঝোঁপঝাড় খরগোশের প্রিয় আবাসস্থাল। সামান্য জায়গায় এরা নিজেকে নিমেশেই আত্মগোপনে স্থির করে ফেরতে পারে।

সারাদেশের বন-জঙ্গল ও পাহাড়ি এলাকাগুলোর ব্যাপকভাবে ধ্বংস ও আদিবাসীসহ সাধারণ মানুষের বিরামহীন শিকারই খরগোশ বিলুপ্তির প্রধান কারণ। যত দিন যাচ্ছে অতিনিরীহ এ প্রাণীটির সংখ্যা কমেই যাচ্ছে।

খরগোশের কান বেশ বড়। এই বড় কানের মাধ্যমে তারা নিজেদের রক্ষা করে। এমন কান থাকার কারণে এরা সহজেই শত্রুকে চিহ্নিত করে ফেলতে পারে। মাথা নিচু করে ঘাস বা তৃণমূল খেতে খেতে দূর থেকে তার দিকে ধেয়ে আসা কোনো প্রাণীর অবস্থান খুব সহজেই সে টের পেয়ে যায়।

এই বড় কানের আরেকটি সুফলও রয়েছে তার। সেটা হলো গরমের তীব্রতা থেকে ক্ষণিকের মুক্তি। যখন প্রচণ্ড গরম অনুভূত হয় তখন তারা তাপমোচনের জন্য কানের চওড়া ভাগটাকে বারবার ঘুরিয়ে বাতাসের সংস্পর্শ নিয়ে আসতে পারে। তার কানও কিছুটা পাখার মতো কাজ করে তখন।

খরগোশ নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুল খান বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের দেশে আগের চেয়ে খরগোশ অনেক কমে গেছে। বন-পাহাড় উজাড় ও আবাসস্থল ধ্বংস এবং নির্বিচার শিকারের জন্য এরা আজ অনেকটাই বিপন্ন।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে মূলত এক ধরনেই খরগোশই দেখা যায়। ইংরেজি নাম Indian Hare এবং বৈজ্ঞানিক নাম Lepus nigricollis। তবে রেকর্ড রয়েছে, অনেক আগে আমাদের দেশের জামালপুর-শেরপুর সীমান্ত এলাকায় এক প্রজাতির খরগোশ পাওয়া যেত। ওই খরগোশের নাম Histid Hare।

ভারতের আসাম অঞ্চলে এদের দেখা যায়। এ খরগোশটির নাম এখন আমাদের অ্যানিমেল চেকলিস্টেই কেবল রয়েছে। বর্তমানে আমাদের দেশে এটিকে নতুন করে দেখা গেছে- এমন কোনো সম্প্রতিক রেকর্ড নেই।

তিনি আরও বলেন, খরগোশের মাথাসহ দৈর্ঘ্য প্রায় ৪৫ সেমি। লেজ লোমশ অংশসহ ৮ সেমি এবং কান ১২ সেমি লম্বা। এদের শরীরের রং ধূসর হলুদ থেকে পিঙ্গল-বাদামি। এর মাঝে মাঝে  রয়েছে কালচে রঙের আঁচ। এদের পা ও বুক হালকা হলুদ। দেহের অবশিষ্ট অংশ মুখ, ঘাড়, লেজের তলা সাদাটে।

এরা সাধারণত সন্ধ্যার পর বের হয়। একা একা অথবা ছোট ছোট দলে এদিক-ওদিক ছুটাছুটি করে। শেয়াল, বনবিড়াল, মেছোবাঘ, কুকুর প্রভৃতি খরগোশের শত্রু। স্ত্রী খরগোশ অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ১-৩টি বাচ্চা প্রসব করে।

অধ্যাপক ড. মনিরুল আরও বলেন, খরগোশের আঞ্চলিক নামগুলো হলো, লাফারু, ফইট্টা, লাপা প্রভৃতি। একেক অঞ্চলে একেক নামে একে ডাকা হয়।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও শ্রমিকনেতা রামভজন কৈরি স্মৃতিচারণ করে বাংলানিউজকে বলেন, আজ থেকে পনের বিশ বছর আগে সুনছড়া থেকে আলীনগর চা বাগানের রাস্তা দিয়ে যখন আসা-যাওয়া করতাম তখন অনেক খরগোশ দেখতাম। কিন্তু আলীনগর চা বাগানে এখন আর খরগোশ তেমন একটা চোখেই পড়ে না। আমাদের দেশি ভাষায় খরগোশকে ‘খেরহা’ বলা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৬২৬ ঘণ্টা, জুলাই ০২, ২০১৫
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।