ঢাকা: লিঙ্গ পরিবর্তন বিষয়টা মানুষের ক্ষেত্রে এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। তবে নতুন এক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে গিরগিটিও তাদের লিঙ্গ পরিবর্তন করতো।
ড্রাগন গিরগিটি বংশানুক্রমে পুরুষ, তবে লিঙ্গ পরিবর্তন করে নারী হয়ে তারা নতুন গিরগিটির জন্ম দিতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে গিরগিটির নারী সেক্স ক্রোমোজম পরিবর্তিত হচ্ছে, তাতে এক সময় তা সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গবেষণায় এই প্রথমবারের মতো প্রমাণ মিলেছে সরীসৃপ জাতীয় প্রাণীদের মধ্যে লিঙ্গ পরিবর্তনের বিষয়টি আগে থেকেই ছিল।
দ্যা ইউনিভার্সিটি অব ক্যানবেরার গবেষক ক্লার হোলেলে গবেষণাটিতে নেতৃত্ব দেন।
জলবায়ুর চরম পরিবর্তনের ফলে জীববৈচিত্র্যে মৌলিক কিছু পরিবর্তন আসে। পাখি ও মৌমাছির বংশবিস্তার লক্ষ্য করলেই বিষয়টি সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে।
কিছু কিছু গিরগিটি ও কচ্ছপের লিঙ্গ মানুষ বা অন্যান্য প্রাণীর মতো সেক্স ক্রোমোজম দিয়ে নির্ধারণ করা হয় না। কিন্তু তারাও জলবায়ু পরিবর্তনে আক্রান্ত হয়। যদিও এখন পর্যন্ত বেয়ার্ড ড্রাগনের লিঙ্গ সেক্স ক্রোমোজম দিয়েই নির্ধারণ করা হয়।
পাখির মতো তাদের সেক্স ক্রোমোজম এক্স এবং ওয়াই এর পরিবর্তে জেড ও ডব্লিউ। পুরুষের ক্ষেত্রে জেডজেড এবং নারীর ক্ষেত্রে জেডডব্লিউ। মানুষের ক্ষেত্রে লিঙ্গ নির্ধারণে যেমন এক্স ক্রোমোজম মিল থাকে, এদের ক্ষেত্রে জেড ক্রোমোজমের উপস্থিতি জরুরি।
অতীতে বিজ্ঞানীরা গবেষণাগারে প্রমাণ করেছিলেন উষ্ণ আবহাওয়া প্রাকৃতিকভাবে যেসব প্রাণীর লিঙ্গ ক্রোমোজমের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়ে থাকে তাদের চক্রে পরিবর্তন আনতে পারে।
হোলেলে এবং তার সহকর্মীরা কুইন্স প্রদেশ থেকে ১৩১টি বন্য বেয়ার্ড ড্রাগন ধরে পরীক্ষা করেন লিঙ্গ নির্ধারণ করতে। এদের মধ্যে ১১টি নারী পাওয়া যায়, যদিও তাদের শরীরে জেডজেড ক্রোমোজম উপস্থিত রয়েছে। যদিও শিশুকালে এদের লিঙ্গ ক্রোমোজম নয় বরং তাপমাত্রা দেখে নির্ধারণ করা হয়।
যদি জলবায়ু উষ্ণতা আর মোটেও না বাড়ে তবে লিঙ্গ পরিবর্তনের হার বাড়তে থাকবে এবং ডব্লিউ ক্রোমোজম এ প্রজাতির মধ্যে থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এ ঘটনা গত চার দশক ধরেই অস্ট্রেলিয়ার এ প্রদেশে ঘটে আসছে।
গবেষণাগারে দেখা যায়, লিঙ্গ পরিবর্তন শুরু হয় প্রায় ৯০ ডিগ্রি ফা. (৩২ ডিগ্রি সে.) এবং শতভাগ হয় ৯৭ ডিগ্রিতে।
হোলেলে আরও বলেন, উষ্ণায়নের ফলে কেবল গিরগিটিই নয়, অন্য অনেক প্রজাতির ক্ষেত্রেই লিঙ্গ পরিবর্তনের বিষয়টি দেখা দিতে পারে। তবে মানুষের উপর এমন প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই।
মধ্য অস্ট্রেলিয়ার শীতল রক্তের বেয়ার্ড ড্রাগন দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে রয়েছে। তাদের শরীরে জেডজেড ক্রোমোজম উপস্থিত থাকলেও তারা নারীর মতো বেড়ে উঠছে এবং সন্তান উৎপাদন করছে। আর এর মূলে রয়েছে তাপমাত্রা।
লিঙ্গ পরিবর্তনের পরে নারী গিরগিটি যখন মিলিত হয়, তখন সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণে কোনো ক্রোমোজম থাকে না। এটি নির্ধারিত হয় ডিমের তাপমাত্রা থেকে। অস্ট্রেলিয়ায় ২০০৩ লিঙ্গ পরিবর্তনের হার ছিল ৬.৭ শতাংশ থেকে ১৩.৬ শতাংশ এবং ২০০৪ সালে তা ২২.২ শতাংশকে ছাড়িয়ে যায়, যোগ করেন হোলেলে।
সম্প্রতি একটি জার্নালে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৯ ঘণ্টা, জুলাই ০২, ২০১৫
এটি/এএ