ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

কীটনাশকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ জরুরি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৯ ঘণ্টা, জুলাই ৬, ২০১৫
কীটনাশকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ জরুরি ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: আশংকাজনক হারে রোগব্যাধি বৃদ্ধি ও কীটনাশকের বিষক্রিয়ায় শিশুমৃত্যু রোধে খাদ্য উৎপাদনে কীটনাশক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের দাবি জানিয়েছে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)।
 
সোমবার (০৬ জুলাই) দুপুরে সংগঠনটির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।

পবা ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ফলমূলের ফরমালিন পরীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফল ও বিষাক্ত খাদ্যের বর্তমান অবস্থায় করণীয় তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য তুলে ধরেন পবার নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান, উপস্থিত ছিলেন পবার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডা. লেলিন চৌধুরী, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ফেরদৌস আহমেদ উজ্জ্বল, অ্যাডভোকেট হাসান তারিক চৌধুরী, সহ-সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম, সহ-সম্পাদক মো. সেলিম, শাহীন আজিজ, পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটির সভাপতি বুরহান উদ্দিন আহমেদ, ইউনাইটেড পিপলস ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক আলী হাজারী প্রমুখ।

পবার নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান বলেন, খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন থেকে বাজারজাত করা পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহার করা হচ্ছে। জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এই বিষাক্ত ও ভেজাল খাদ্য প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট আইনের যথাযথ বাস্তবায়নের পাশাপাশি সময়োপযোগী কীটনাশক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করা জরুরি।

তিনি জানান, অসচেতন কৃষক, অতি মুনাফালোভী মজুতকারী, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা খাদ্যে রাসায়নিক দ্রব্যাদি, ডিডিটি, কীটনাশক, কাপড়ের রং, ফরমালিন, ক্যালসিয়াম কার্বাইড, ইথোফেন, কৃত্রিম হরমোন ব্যবহার করছে। কৃষিজাত পণ্যে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ও কীটনাশক, ফল, মাছ, শাকসবজিতে ফরমালিন, ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহার করা হচ্ছে। মিষ্টিতে কাপড়ের রং প্রয়োগ করা হয়। শুটকি মাছ সংরক্ষণে ডিডিটি ও হেপ্টাক্লোর ব্যবহার করা হয়।

ডিডিটি, অ্যালড্রিন, ক্রোমিয়াম, কার্বামেট, আর্সেনিক, সিসাÑ সবই মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কৃষিতে কীটনাশকের ব্যাপক অপপ্রয়োগ দেশের জনস্বাস্থ্যকে বিশাল ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। কৃষিপণ্যকে কীটনাশক থেকে রক্ষা করা গেলে মানুষ অনেকটা ঝুঁকিমুক্ত হতে পারে। খাদ্যে যেসব রাসায়নিকের উপস্থিতি পাওয়া যায়, তাতে হৃদপিণ্ড, পাকস্থলি, কিডনি ও লিভারের রোগ এবং ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়া স্বাভাবিক।

খাদ্য নিরাপত্তা গবেষণাগারে সাম্প্রতিককালে ৮২টি খাদ্যপণ্য পরীক্ষা করা হয়। এতে গড়ে ৪০ শতাংশ খাদ্যেই মানবদেহের জন্য সহনীয় মাত্রার চেয়ে ৩ থেকে ২০ গুণ বেশি নিষিদ্ধ ডিডিটি, অলড্রিন, ক্লোরডেন হেপ্টাক্লোর ও অন্যান্য বিষাক্ত উপাদান পাওয়া যায়। ৩৫ শতাংশ ফল ও ৫০ শতাংশ শাক-সবজির নমুনাতেই বিষাক্ত বিভিন্ন কীটনাশকের উপস্থিতি মিলেছে। চালের ১৩টি নমুনায় মিলেছে মাত্রাতিরিক্ত বিষক্রিয়া সম্পন্ন আর্সেনিক, পাঁচটি নমুনায় পাওয়া গেছে ক্রোমিয়াম। হলুদের গুঁড়ার ৩০টি নমুনায় ছিল সিসা ও অন্যান্য ধাতু। লবণেও সহনীয় মাত্রার চেয়ে ২০-৫০ গুণ বেশি সিসা পাওয়া গেছে। মুরগির মাংস ও মাছে পাওয়া গেছে মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর এন্টিবায়োটিকের অস্তিত্ব।

ঢাকা মহানগরে দেশি ও বিদেশি ফলে ফরমালিনের অবস্থা নিরূপণের লক্ষ্যে পবা ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ১০ জুন থেকে ৫ জুলাই ২০১৫ পর্যন্ত আম (১৩টি), জাম (৪টি), লিচু (৪টি), আপেল (৯টি), আঙুর (৬টি), মালটা (৬টি), কলা, (৩টি) পেয়ারা (৩টি), আনারস (৪টি), জামরুল (২টি), শসা (২টি) ও খেজুরের (৫টি) মোট ৬১টি নমুনার ফরমালিন পরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে। এসব ফল বিভিন্ন বাজার ও এলাকা থেকে কিনে পবা কার্যালয়ে পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ১০ শতাংশ নমুনায় (জামের ৪টি নমুনার ৩টি, খেজুরের ৫টি নমুনার ২টি এবং জামরুলের ২টি নমুনার ১টিতে) ফরমালিনের উপস্থিতি পাওয়া যায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৯ ঘণ্টা, জুলাই ০৬, ২০১৫
এসইউজে/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।