ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

মনপুরায় হরিণের বিপদ

ছোটন সাহা, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪০ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০১৫
মনপুরায় হরিণের বিপদ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ভোলা: মিঠা পানি, খাদ্যের সংকট, জোয়ার আর শিকারিদের দৌরাত্ম্যসহ নানা কারণে ভোলার মনপুরায় অনিরাপদ হয়ে উঠেছে বনের হরিণের বিচরণ।

এসব সমস্যার কারণে দিন দিন কমছে হরিণের সংখ্যা।

এতে বনের সৌন্দর্য কমে যাওয়ার পাশাপাশি পর্যটকদের আগমনও অনেকাংশে কমে যাচ্ছে।

একই সঙ্গে গাছ কাটাসহ জলবায়ু পরিবর্তন হওয়ায় আবাসস্থলে অবস্থান করতে পারছে না হরিণ।

এদিকে, হরিণ রক্ষায় বন বিভাগের তেমন কোনো পদক্ষেপ নেই বলে অভিযোগ রয়েছে। বন বিভাগের নিয়মিত টহল জোরদার না থাকায় শিকারিরা নির্বিচারে হরিণ শিকার করছে।

মনপুরা বন বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, মনপুরা উপজেলার উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের আলম নগর, দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের চর পাতালিয়া, হাজিরহাট ইউনিয়নের বদনার চর, মনপুরা ইউনিয়নের ঢালচর, কলাতলী ও বাইশ্যার চরের সংরক্ষিত বনে সাত/আট হাজার হরিণ রয়েছে। এসব এলাকায় হরিণের অবাধ বিচরণ। কিন্তু প্রতিবছর চৈত্র মাসে বনে খাদ্য সংকট দেখা দেয়। এছাড়া জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে পুরো বর্ষা মৌসুমে জোয়ারের পানির হাত থেকে বাঁচতে লোকালয়ে চলে আসে হরিণ।
 
আলমনগর ঘুরে দেখা গেছে, জোয়ারের পানিতে পুরো এলাকা তলিয়ে রয়েছে। ওই এলাকার উঁচু স্থানে দলে দলে ছোট-বড় অসংখ্য হরিণ আশ্রয় নিয়েছে। জোয়ারের পানি কমে গেলে ওই সব হরিণ নিজেদের আবাসস্থলে ফিরে যায়। এই এলাকায় হরিণ দেখলেই স্থানীয়রা সেগুলোকে ধাওয়া করে। লোকালয়ে আসা হরিণ ধরতে বিভিন্ন ফাঁদ পেতে রাখে শিকারিরা।

আলমনগর এলাকার মহিবুল্লাহ, কাঞ্চন ও সেরাজল জানান, হরিণ লোকালয়ে এসে অবস্থান করে। কিন্তু স্থানীয় কিছু শিকারি রাতের অন্ধকারে জালসহ বিভিন্ন ধরনের ফাঁদ পেতে হরিণ শিকার করে নিয়ে যায়। এতে হরিণের বিচরণ কমে যাচ্ছে।

লোকমান হোসেন জানান, বছরের চৈত্র মাসের দিকে অনেক হরিণ লোকালয়ে চলে আসে। খাবারের সন্ধানে হরিণগুলো লোকালয়ে এসে ফসলের ক্ষেত নষ্ট করে।

স্থানীয়রা জানান, গাছ কেটে বন উজার করায় হরিণগুলোর আবাসস্থল ধ্বংস হচ্ছে। প্রচণ্ড রোদ ও লোনা পানির হাত থেকে বাঁচতে মিঠা পানির সন্ধানে চলে আসছে হরিণ। কিন্তু এখানেও এসব হরিণ নিরাপদ নয়।

এদিকে, চলতি বর্ষা মৌসুমে টানা বৃষ্টির কারণে পানির উচ্চতা হঠাৎ করেই বেড়ে যায়। বনের সংরক্ষিত এলাকায় লোনা পানি প্রবেশ করায় হরিণের বিচরণে ছন্দপতন হয়। হরিণগুলো এসময় পানি থেকে বাঁচতে দল বেঁধে উঁচু স্থানে চলে আসে। তাতেও শেষ রক্ষা হয় না, শিকারিদের ফাঁদে পড়তে হয়।

জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মুরাদ হোসেন, রাশেদ ও একরামসহ বেশ কয়েকজন পর্যটক জানান, আগে রাস্তার পাশের জঙ্গলে দাঁড়িয়ে হরিণ দেখা যেতো। যা ছিল খুবই আনন্দের। হরিণ দেখতে অসংখ্য মানুষ ছুটে আসতো মনপুরায়। কিন্তু এখন গভীর জঙ্গলে গেলেও হরিণের দেখা মিলছে না। জলবায়ু পরিবর্তন ও গাছ কাটাসহ নানা কারণে হরিণ আজ হুমকির মুখে।

তারা আরো জানান, এখন বর্ষা মৌসুম চলছে। এসময়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নেয় হরিণ। বনাঞ্চলের কাছাকাছি গেলে হরিণ দেখা যায়। কিন্তু অন্য সময় হরিণ দেখা দুষ্কর হয়ে পড়ে। হরিণ রক্ষায় বন বিভাগের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

এ ব্যাপারে মনপুরা বন বিভাগের রেঞ্চ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের হরিণ রক্ষায় বন বিভাগের কর্মকর্তারা কাজ করে যাচ্ছে। তবে, হরিণ শিকারের বিষয়ে কেউ আমাদের কাছে অভিযোগ নিয়ে আসেনি। তবুও আমরা হরিণ রক্ষায় সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।



বাংলাদেশ সময়: ০০৩৭ ঘণ্টা, জুলাই ০৯, ২০১৫
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।