বাহুবল (হবিগঞ্জ) থেকে ফিরে: ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রশিদপুর এলাকা। দু’পাশেই উঁচু-নিচু টিলা।
মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) দুপুর সরেজমিন রশিদপুর গিয়ে টিলা ভেঙে উপরে উঠে দেখা যায়, গাছের শরীরের থোকায় থোকায় ধরেছে বিদেশি ফল মাল্টা। তবে এখনো পাক ধরেনি। সবগুলোই কাঁচা। তাতেও সৌন্দর্যের কমতি নেই একটুও।
বাগানের তত্ত্বাবধায়ক নূর হোসেন নুরি খোলামেলা আলোচনা জুড়ে দেন। বলেন, প্রায় দেড় বছর আগে আমরা প্রায় ২৬ শ কলম চারা কিনে লাগিয়েছিলাম। এবার প্রায় ৪০ শতাংশ গাছে প্রথবারের মতো ফল এসেছে। আগামী অক্টোবর-নভেম্বরে আশা করছি ফল পাকবে।
এর রোপণ সম্পর্কে নূর হোসেন বলেন, প্রথমে ১৮ ইঞ্চি + ১৮ ইঞ্চি করে মাটি খুঁড়েছি। অর্থাৎ, মাটির চারপাশ ও মাটির গভীরতা। এরপর এনপিকেএস মিশ্র সার পরিমাণ মতো দিয়েছি। পরে গোবর সার ঢেলে ২ মাস ফেলে রেখেছি মাটি পরিশোধনের জন্য। পরবর্তীতে চারাগুলো লাগিয়েছি।
যত্ন-আত্তি সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রতিটি মাল্টা গাছের গোড়াতে দেখবেন ভেতরে পানি প্রবেশের জন্য প্লাস্টিকের ছোট কনটেইনারকে প্রয়োজনীয় আকৃতির তৈরি করে গাছের গোড়ার মাটিতে গেঁথে দেওয়া হয়েছে। তাতে পানি ঢাললে পানিগুলো একেবারে শিকড়ে পৌঁছে যায়। ২/৩ দিন পর পর গাছের অপ্রয়োজনীয় ডালগুলোতে কাটার দিয়ে কেটে দিতে হয়।
নূর হোসেন চাষাবাদ করা এ জায়গা সম্পর্কে বলেন, এ জায়গা স্বত্ত্বাধিকারী এবা গ্রুপ। আমাদের এখানে মোট জমির পরিমাণ প্রায় ৫৮ একর। এর মধ্যে প্রায় ১০ একর আমরা ২৬ শ মাল্টার গাছ লাগিয়েছি। অবশিষ্ট জায়গায় রয়েছে প্রায় ৫ হাজার লেবু, প্রায় ৩ হাজার আনারস, প্রায় ২ হাজার কলাগাছ ও প্রায় ৭ শ কাঁঠাল গাছ।
এবা গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মো. আকাদ্দছ হোসেন তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, প্রকৃতিক ফল উৎপাদনের কথা মাথায় রেখে আমার নতুন করে মাল্টা ও কমলা লাগিয়েছি। পরবর্তীতে আরো দেশীয় ফল রোপণের কথাও আমরা ভাবছি।
প্রকৃতিপ্রেমী রিজোয়ান বলেন, একদিন ঢাকা যাওয়ার পথে গাড়িতে বসে হঠাৎ এই মাল্টা ফল আমার চোখে পড়লো। এই প্রাকৃতিক ফলগুলো দেখে ভীষণ ভালো লাগছে।
বাহুবল উপজেলার কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. শরিফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এর মাল্টার ইংরেজি নাম Orange বা Sweet orange। এটি খুবই সম্ভাবনায় একটি ফল। গত বছরের চৈত্র মাসে এই গাছগুলো আমরা লাগিয়েছি। কিন্তু গাছগুলোকে যে আমরা শতভাগ পরিচর্যা করেছি না নয়। এখানে বিদ্যুৎ না থাকায় পানির সমস্যা। তারপরও দেখেন প্রায় চল্লিশ শতাংশ গাছে মাল্টা ধরে গেছে। এই এলাকায় মাল্টা চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মাল্টার উৎপাদন খরচ অপেক্ষাকৃত অনেক কম। প্রতিটা গাছের পেছনে দেড় টাকা করে খরচ হয়েছে। কৃষকরা একে পছন্দের তালিকায় রেখে উৎপাদন করতে পারেন। তবে রোড লেভেলে অর্থাৎ, রাস্তার পাশে এগুলো না রোপণ করা ভালো। কারণ মাল্টা ও কমলা গাছ কার্বন-ডাই-অক্সাইড সহ্য করতে পারে না।
এ কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, এই মাল্টা বাগানটি আমার নজরদারিতে রয়েছে। প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা আমরা দিয়ে আসছি। এভাবে আমাদের সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে দেশীয় ফল উৎপাদনে এগিয়ে আসতে হবে। এতে আমাদের পুষ্টি চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় ফলগুলোরও বংশবিস্তার সম্ভব।
মাল্টাতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ, সি, ই, ক্যালসিয়াম, খনিজ, ম্যাগনেসিয়ামসহ আরও সব প্রয়োজনীয় উপাদান রয়েছে। মাল্টা শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে বলেও জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ০০২০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৫
বিবিবি/এএ