বগুড়া: শরতের প্রধান আকর্ষণ কাশফুল। আর কাশফুলের অপরূপ সৌন্দর্য পুলকিত করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়।
তবে অবিরাম না হলেও শরতেও বর্ষণ হয়। চারপাশের শুভ্রতার মাঝে সেই বৃষ্টিও সবার মনে আনন্দের বার্তাই বয়ে আনে। রোদ-বৃষ্টির খেলায় দিগন্তজুড়ে হাসি দিয়ে ফুটে ওঠে সাতরঙা রংধনু। প্রকৃতির এ অপরূপ শোভা সান্নিধ্য চায় প্রিয় মানুষগুলোর। প্রিয়জনের হাত ধরে গোধূলির ওপারে হারিয়ে যেতে চায় সেই মনটি।
তাইতো প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশ প্রিয়তমাকে নিয়ে লিখেছেন, এখানে আকাশ নীল-নীলাভ আকাশজুড়ে সজিনার ফুল/ ফুটে থাকে হিম সাদা রং তার আশ্বিনের আলোর মতন।
চাঁদনী রাত। চারদিকে শশীর উজ্জ্বল আলো। পথ-ঘাট আলোকিত হয়ে উঠে। ওই আলোয় বাংলার কাশবন, গৃহচূড়া ও নদীর নির্জন বুক -যেন সবকিছুই হাস্যময়ী রুপ ধারণ করে। শরতের শেফালি, মালতী, কামিনী, জুঁই আর টগর মাথা উঁচিয়ে তার নিজের রুপ সৌন্দর্য জানান দিতে থাকে। ফুলের সমারোহে ভরে ওঠে এ দেশের বুক। ওইসব শরতি ফুলের মন মাতানো ঘ্রাণে চারদিক মুখরিত হয়ে উঠে। তাদের মিষ্টি সুবাস ছড়িয়ে পড়ে বাংলার এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে।
এদিকে শারদীয় মৃদুমন্দ হাওয়া, অন্যদিকে ফোটা ফুলের স্নিগ্ধ সৌরভ আর নীলিমার দিগন্তজোড়া পরিবেশ-যেন মানবমনকে উদাস করে তোলে। রাতে শিউলি ঝরে প্রভাতের পদধ্বনিতে আর ক্ষেতের ফসল শরতের বার্তা জানান দিয়ে যায়। শরতের আগমনে বাংলার বন-উপবন, দোয়েল-কোয়েল-ময়নার কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠে। এসময় বাংলার মানুষ প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে বিমুগ্ধ হয়ে উঠেন। তারা মেতে ওঠেন নানা উৎসব আর পালাপার্বণে। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক বৈচিত্রে কবি গেয়ে ওঠেন-
কোন বনেতে জানিনে ফুল/ গন্ধে এমন করে আকুল/কোন গগণে উঠিবে চাঁদ এমন হাসি হেঁসে/ আঁখি মেলে তোমার আলো/ দেখে আমার চোখ জুড়ালো/ ঐ আলোকেই নয়ন রেখে/ মুদবো নয়ন শেষে।
আর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায়-
‘শিউলী ফুলের মালা দোলে/ শারদ রাতের বুকে ঐ’।
শরতের প্রথম প্রভাতে আজ সেই শিউলিফুল ফুটবে, তার বিকশিত রূপ আর গন্ধ ছড়াবে বাতাসে।
ঋতু বৈচিত্রের দেশ -আমাদের এ বাংলাদেশ। তাই বর্ষার অবসানে শরৎ অপূর্ব শোভা ধারণ করে আবির্ভূত। ভাদ্র ও আশ্বিন -দু’মাস শরৎকাল। শরতে ভোরবেলায় ঘাসের ডগায় শিশির জমে। শরতের শেষে রোদের তেজ আস্তে আস্তে কমতে থাকে। শরতে বনে-উপবনে শিউলি, গোলাপ, বকুল, মল্লিকা, কামিনী, মাধবী প্রভৃতি সুন্দর ও সুগন্ধি ফুল ফোটে। বিলে-ঝিলে ফোটে শাপলা আর নদীর ধারে কাশফুল। এ সময় তাল গাছে তাল পাকে। হিন্দু ধর্মাবলম্বী দুর্গাপূজাও এ সময় হয়ে থাকে।
তবে প্রকৃতি কখন কী আকৃতি ধারণ করছে কেউ তা বুঝে উঠতে পারছেন না। কবির কবিতার পংক্তিগুলোও আর এ দেশের ঋতু বৈচিত্রের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উঠতে পারছে না।
এরই মধ্যে শরতের আগমন ঘটেছে। মাইলের পর মাইল হেঁটেও শরতের সেই আগের দিনের চিত্র পাওয়া দুস্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোথাও কাশবন দেখা গেলেও শরতের আর কোন দৃশ্য চোখে পড়ে না।
সময় বয়ে চলে অবিরাম। দিনের পর মাস। মাসের পর বছর। বছরের পর শতাব্দী -এমনি করে সময় মিশে যায় অনন্তকালের মাঝে। কিন্তু কিছু সুখ-দুঃখ-আনন্দের স্মৃতি মানুষের মনে আজীবন গেঁথে থাকে। শরৎও তাই। অন্য কিছুর মত এ কালও আজ হারিয়ে যাওয়ার পথে। যা হয়তো একদিন মানুষের মনিকোঠায় স্মৃতি হয়ে গেঁথে থাকবে মাত্র।
বাংলাদেশ সময়: ০০১১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৫
এমবিএইচ/জেডএম