ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

আট মাসেই শেষ পৃথিবীর এক বছরের উপাদান

আবু ‍তালহা, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৫
আট মাসেই শেষ পৃথিবীর এক বছরের উপাদান

ঢাকা: জলবায়ু পরিবর্তন ও সম্পদের উপযুক্ত ব্যবহার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিশ্বব্যাপী সোচ্চার পরিবেশবাদী বিজ্ঞানী, বিশেষজ্ঞ এবং সংগঠনগুলো। বৈশ্বিক উষ্ণায়নে পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখীন হলেও তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই বিশ্বনেতাদের।



বিশেষজ্ঞদের মতে, পৃথিবী থেকে যে পরিমাণ উপাদান নিলে প্রাকৃতিকভাবেই তা পূরণ হয়ে যায়, সেই কল্পিত বর্ষপঞ্জিকার প্রথম তারিখ ‘ওভারসুট ডে’ ২০১৪ সালের তুলনায় ছয় দিন এগিয়ে এসেছে।

অর্থাৎ বিশ্ববাসী বর্তমানে এক বছরে পৃথিবীর আয়তনের দেড়গুণের চেয়ে একটু বড় গ্রহের উপাদান ব্যবহার করছে। সে হিসাবে, এক বছরে পৃথিবীবাসীর যে পরিমাণ প্রাকৃতিক উপাদান খরচ করার কথা ছিল, বর্তমানে আট মাসের কিছু কম সময়েই তা খরচ হয়ে যাচ্ছে।

‘ওভারস্যুট ডে’ এর আরেক নাম ইকোলজিক্যাল ডেবট ডে (ইডিডি)। প্রাকৃতিক উপাদান যেমন বন, ফসলি জমি, পৃথিবীবাসীর চাহিদা, কার্বন নিঃসরণের মাত্রা, ইত্যাদিকে বিশ্বের মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে এবং মাছের মজুদ, খাদ্যশস্যসহ অন্যান্য উপাদান ৩৬৫ দিনে পৃথিবীতে যে পরিমাণ উৎপাদন হয়, তাও মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে এক ভাগে যতটুকু পড়ে তা ওই কল্পিত বর্ষপঞ্জিকার এক দিন ধরা হয়।

সে অনুযায়ী, প্রত্যেক ব্যক্তি সব মিলিয়ে কতটা উপাদান ব্যবহার করবেন তাও নির্ধারণ করা হয়।

২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্র, বেলজিয়াম ও সুইটজারল্যান্ডভিত্তিক সংগঠন দ্য গ্লোবাল ফুটপ্রিন্ট নেটওয়ার্কের (জিএফএন) জরিপে দেখা গেছে, গত বছরের তুলনায় ‘ওভারসুট ডে’ ছয়দিন এগিয়ে এসেছে।

তাদের তথ্য অনুযায়ী, প্রাকৃতিক উপাদানের এই ঘাটতি প্রথম শুরু হয় ১৯৭০ সালের শুরুর দিকে। যা বাড়তে থাকলে জীববৈচিত্র্যের যে ক্ষতি হবে, তা পূরণ করা আসলেই সম্ভব হবে কিনা এ নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন পরিবেশবাদী বিশেষজ্ঞরা।

জিএফএন’র প্রেসিডেন্ট ম্যাথিস ভেকারনাগেল বলেন, আমাদের ঘাটতি বেড়ে যাচ্ছে, এটি বড় সমস্যা নয়। বড় সমস্যা হলো, বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘ সময়ের জন্য কোনো পরিকল্পনা করা হচ্ছে না। এমনকি ঠিক কতটা ঘাটতিতে রয়েছি আমরা, সেটি বিবেচনা করে সঠিক পথে আসারও কোনো চেষ্টা দেখা যাচ্ছে না।

‘মূলত এটি আমাদের মানসিক সমস্যা। যেকোনো কারণেই হোক ‘বেসিক ফিজিক্যাল ল’ থেকে আমরা অনেক দূরে। নীতি-নির্ধারকদের দায়িত্ব ছিল ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এ বিষয়ে সচেতন করে তোলা। কিন্তু ৯৮ শতাংশ নেতার ক্ষেত্রে বলা যেতে পারে, তারা বিষয়টি নিয়ে মোটেই উদ্বিঘ্ন নন, যে কারণে রাষ্ট্রগুলোতে শিশুদের সচেতন করে তোলার ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিক‍ভাবে কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। ’

‘এ অবস্থায় একটি প্রশ্ন বারবার সামনে চলে আসে- সরকার পরিচালকরা কি আসলেই এগুলো নিয়ে ভাবছেন?’ প্রশ্ন করেন তিনি।

জিএফএন’র মতে, বর্তমানে পৃথিবীবাসী দেড়গুণের একটু বড় গ্রহের উপাদান ব্যবহার করছে, আর এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ব্যবহারের হার দাঁড়াবে ২টি গ্রহের সমান।

অন্যদিকে, মাথাপিছু হারে যুক্তরাজ্যের প্রত্যেক ব্যক্তি তার অংশের তুলনায় তিনগুণ বেশি প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করছেন। তারপরও এই ঘাটতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হতো, যদি উন্নয়নশীল দেশগুলোর চাহিদা পর্যায়ক্রমে না বাড়তো।

বিশ্বব্যাপী ‘ইকোলজিক্যাল ডেফিসিট’র প্রভাবের স্পষ্ট প্রমাণ বন উজাড়, মাটি দূষণ, পানির উৎসের স্বল্পতা ও গ্রিন হাউজ প্রতিক্রিয়া।

জিএফএন’র প্রেসিডেন্ট বলেন, গ্লোবাল ফুটপ্রিন্ট নেটওয়ার্ক আশা করে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন এবার সেই প্রতিশ্রুত চুক্তিতে একমত হবে। কারণ, ইতোমধ্যে জি২০ নেতারাও উপলব্ধি করেছেন, এই শতকের মধ্যেই জীবাশ্ম তেল ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।

তবে আশার কথা হলো, দেরিতে হলেও পৃথিবীব্যাপী নেতাদের টনক নড়েছে। এ বছর ডিসেম্বর মাসে প্যারিসে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘের ‘ক্রাঞ্চ ইন্টারন্যাশনাল ক্লাইমেট চেঞ্জ কনফারেন্সন্স’-এ ১৯০টিরও বেশি দেশের প্রতিনিধি উপস্থিত হয়ে আলোচনার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনরোধে করণীয় নির্ধারণ করবেন।

আর সম্মিলিত এ কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় পরিবর্তনের আশা রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০১৩৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৫
এটি/এইচএ/এসএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।