ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

হঠাৎ শামুকখোলের সভায়

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, এনভায়রনমেন্ট স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৫৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৫
হঠাৎ শামুকখোলের সভায় ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): একঝাঁক শামুকখোলের সভা চলেছে। হঠাৎ এমন দৃশ্য দেখে থেমে গেলাম।

চলমান যাত্রায় ছেদ পড়লো। দিন পনের আগে শ্রীমঙ্গলের ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ধরে এগিয়ে যাবার পথে সখিনা সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনের পাশেই মুগ্ধকর এই দৃশ্য। সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি থামিয়ে এগিয়ে গেলাম সভার ছবি তুলতে।

ক্যামেরা ক্লিক করতে করতেই হঠাৎ মনে প্রশ্ন জাগলো, এই বকগুলো এখানে কেন? এটা তো কোনো জলাশয় বা বিল অথবা হাওর নয়। স্রেফ ধানক্ষেত। যেখানে মাছের নামগন্ধ নেই। তাও আবার ব্যস্ততম মহাসড়কের পাশে। এর পেছনের কারণটা কী?

সখিনা সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তারাই নিরাপত্তা দিয়ে এ স্থানটিকে শামুকখোলের আশ্রয় বানিয়েছেন। সময়ের পরির্বতনে হারিয়ে যেতে বসেছে এ প্রজাতির বক। শিকারীদের মাত্রাতিরিক্ত তৎপরতা এবং আহারস্থলে অতিমাত্রায় কীটনাশকের ব্যবহার দেশীয় এ পাখিটিকে দুষ্প্রাপ্য করে তুলেছে।
 
রিফুয়েলিং স্টেশনের প্রকৌশলী সাজু বড়ুয়া বাংলানিউজকে বললেন, ‘এই বকগুলো তো প্রায়ই এখানে আসে। কিছুক্ষণ থেকে আবার চলে যায়। আমরা তাদের দেখেশুনে রাখি। কেউ তাদের ধরতে বা বিরক্ত করতে গেলে আমরা বাধা দিই। ওরা বুঝতে পেরেছে, এই জায়গাটা নিরাপদ, তাই তারা আসে। ’

পাখিপ্রেমী স্টেশন কর্তৃপক্ষের এমন কথায় ভরসা জাগলো প্রাণে। সত্যিই বকগুলো স্থানটিকে তাদের নিরাপদে বেড়ানোর জায়গা মনে করতে পারে।

শামুকখোলকে অনেকে ধূসর বক বলে থাকেন। এশীয় শামুকখোলের ইংরেজি নাম Asian Openbill. এরা দৈর্ঘ্যে ৯৮ সেমি এবং ওজনে ২ কেজি প্রায় হয়ে থাকে।

পাখি গবেষক এবং বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের ট্রেজারার ওমর শাহাদাত বাংলানিউজকে বলেন, ‘শামুকখোল বক বাংলাদেশের আবাসিক পাখি। সব বিভাগের সব জলাশয়ে পাওয়া যায়। তবে এখন সংখ্যায় কমে যাচ্ছে আশঙ্কাজনকভাবে। এর প্রধান কারণ, বকগুলোর আবাসস্থল ধ্বংস। জলাশয় ভরাট করে আবাসন নষ্ট করা হচ্ছে প্রায় প্রতিদিনই। ’

তিনি বলেন, ‘প্রাকৃতিক জলাশয়ে বাঁধ দিয়ে দখল করে মাছ চাষি ঘেরের মালিকরা এখন তাদের কাছেও ঘেঁষতে দেয় না। এছাড়া কোথাও জলাশয় সেচে প্রায় শুকিয়ে মাছ ধরার ফলে কোনো জলজীব আর অবশিষ্ট থাকে না সেখানে। আবার অনেক জেলে সহজে এবং কম সময়ে মাছ ধরার জন্য বিষ ছড়িয়ে মাছ ধরে। অসাধু কিছুসংখ্যক লোক টোপ ও এয়ারগান দিয়ে পাখি শিকারের ফলেও এদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। ’

এ পাখির দৈহিক বর্ণনা দিয়ে ওমর শাহাদাত বলেন, প্রাপ্তবয়স্ক শামুকখোলের দেহের উপরের অংশ ধূসর এবং নিচের অংশ সাদাটে। মাথায় অগোছালো পালকের কালো ঝুটি চোখের পেছন পেছন পর্যন্ত বিস্তৃত থাকায় অন্য প্রজাতির বকের ঝাঁকের মাঝ থেকেও সহজেই এদের শনাক্ত করা যায়। ওড়ার সময় ওড়ার পালক ধুসরাভ-কালো ওড়ার পালক স্পষ্ট চোখে পড়ে। ছেলে ও মেয়ে পাখির তেমন পার্থক্য নেই। তবে তুলনায় মেয়ে পাখি কিছুটা ছোট।

তিনি জানান, শামুকখোল অগভীর জলাশয়, আবাদি জমি ও মোহনায় বিচরণ করে এবং শিকারের সন্ধানে থাকে। সুযোগ পেলে বল্লমের মত ঠোঁটের কোপ দিয়ে শিকার করে। খাদ্য তালিকায় রয়েছে মাছ, ব্যাঙ, সাপসহ অমেরুদণ্ডী প্রাণী। জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে প্রজননকালে পানির ধারের গাছে ডালপালা ও ঘাস দিয়ে বড় মাচার মত বাসা বানিয়ে সবুজে-নীল ২-৭ টি ডিম পাড়ে। ২৫-২৮ দিনে ডিম ফুটে ছানা বের হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০২৫৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৫
বিবিবি/এইচএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।