ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

বায়ু দূষণ

ঘুম ভাঙছে না মহাকাব্যের দৈত্য চীনের!

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০১৫
ঘুম ভাঙছে না মহাকাব্যের দৈত্য চীনের! ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: আমাদের সময়ের এই মহাকাব্যে লড়াই যে আমাদেরই সৃষ্ট দানবের হুমকির বিরুদ্ধে, সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। এই গল্পে চীন একটা ঘুমন্ত দৈত্যের নাম।

গল্পটা যখন শুরু হয়, দৈত্যটা তখন জেগে ওঠে।

সে তার বিপুল সংখ্যার জনগণের জীবনমান উন্নয়নে একটা পথ খুঁজতে থাকে এবং অসাবধানতাবশত পৃথিবীকে আরো ক্ষতির দিকেই নিয়ে যায়।

এ ঘটনা দ্বিতীয় জাগরণের সৃষ্টি করে। কিন্তু ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যাওয়ার আগেই দৈত্যটা কি বিষয়টা বুঝতে পেরে তার গতিপথ বদলে নিতে পারবে?

চীনের জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে দূষণকারী উপাদান নিঃসরণ, বিশেষত কয়লাভিত্তিক পাওয়ার প্ল্যান্ট তা পরিবেশে কার্বনের মাত্রা ভয়ঙ্করভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছে।

চীনের এই নিঃসরণ প্রতিবছর ৭ শতাংশ হারে বাড়ছে, যেখানে অন্যান্য দেশের হার ২.৮ শতাংশ। চীনের এই হার বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। এখন প্রত্যেকেই বুঝতে পেরেছেন, দূষণকারী উপাদান নিঃসরণ দ্রুত কমানো দরকার।

কিন্তু অন্য একটি ক্ষতি আরো দ্রুত হচ্ছে এবং যা বেশি আরো ভয়ঙ্কর। চীনের বায়ু দূষণ ইতোমধ্যে সর্বনাশা অনুপাতে পৌঁছে গেছে। সম্প্রতি, একটি জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, চীনে প্রতিদিন বায়ু দূষণের কারণে ৪,০০০ মানুষ মারা যান। অর্থাৎ এক বছরে ১৬ লাখ মানুষ মারা যান।

ভূমিস্তরের সাপেক্ষে পর্যবেক্ষণ করে ইউএস স্ট্যান্ডার্ড জানায়, চীনের কমপক্ষে ৩৮ শতাংশ মানুষ যে অবস্থায় বসবাস করছেন, সেখানকার বাতাস অস্বাস্থ্যকর।

এখানে সবচেয়ে ক্ষতিকর যে উপাদান, তা পিএম ২.৫ নামে পরিচিত। ইউএস ইপিএ’র তথ্য অনুযায়ী, অ্যামোনিয়াম সালফেট, অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, কার্বন এবং খনিজসহ বিভিন্ন উপাদানে পিএম ২.৫ থাকে। তবে বিশেষত মাটি এবং ছাইয়ে এর পরিমাণ বেশি থাকে। এই ক্ষুদ্র আকারের কণা খুবই ভয়ঙ্কর। কারণ, এটি ফুসফুস এবং রক্তপ্রবাহে মিশে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ফলে, শরীরে নানান ধরনের জটিলটা দেখা দেয়।

একই সঙ্গে হৃদযন্ত্রের অসংলগ্ন স্পন্দন, হার্টঅ্যাটাক এবং অল্প বয়সে মৃত্যুরও কারণ এটি।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বেজিং-এ দূষণের কারণ শিল্পাঞ্চল শহর সিযিয়াঝুয়াং; যা বেজিং থেকে ২০০ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত।

গবেষকরা চীনের দূষিত উপাদান পরীক্ষা করে দেখেছেন, সেখানে থাকা পিএম ২.৫ উৎপন্ন হচ্ছে কয়লা থেকে। বেজিংয়ের মেয়র অনেক বছর আগেই শহরে কয়লা পোড়ানো বন্ধের নির্দেশ দেন। চীনের ক্ষেত্রেও বিষয়টি অনুসরণীয় হতে পারে।

পরিবেশবাদী সংস্থা বারকেলি আর্থয়ের সায়েন্টিফিক ডিরেক্টর রিচার্ড মুলার বলেন, বায়ু দূষণ বর্তমানে বিশ্বব্যাপী প্রাকৃতিক দুর্যোগের একটি বড় কারণ। কয়েক বছর আগেও বেজিংয়ে দূষণের হার এই মাত্রায় ছিল, যেন একজন পুরুষ, নারী এবং শিশু প্রতি ঘণ্টায় ১.৫ সিগারেট খাচ্ছে।

এ গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী বায়ু দূষণের কারণে প্রতি বছর ৩০ লাখের বেশি মানুষ মারা যান। এইডস, ম্যালেরিয়া, ডায়াবেটিস বা যক্ষ্মা রোগেও প্রতিবছর এত মানুষ মারা যান না।

তাদের মতে, চীনের বাতাসে প্রতি কিউবিক মিটারে পিএম ২.৫-এর গড় মাত্রা ৫০ থেকে ৬০। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে ১০ থেকে ১৫ (দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় শীতকালে সর্বোচ্চ দেখা যায়)।

এত কিছুর মধ্যে একটি সুখবর হলো, উভয় সমস্যার সমাধান পাওয়া গেছে, কয়লার ব্যবহার বন্ধ করে পরিশোধিত নবায়ণযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করে।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৪ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০১৫
এটি/এবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।