শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): প্রজাপতি আমরা কে না ভালোবাসি! ছোট্ট বর্ণিল অতি নিরীহ কীটটিকে এক পলক দেখলেই ভীষণ মায়া হয়। আমাদের পাশ দিয়ে হঠা ৎ ধীর ভঙ্গিমায় উড়ে যাওয়া ওই প্রাণীটির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকারও ইচ্ছে হয়।
প্রজাপতি শুধু দর্শন-সৌন্দর্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, পরিবেশের সুস্থতাকেও গভীরভাবে ইঙ্গিত করে সে। তার উড়ন্ত উপস্থিতি জানান দেয় প্রসন্ন প্রতিবেশ ব্যবস্থার কথা। যে এলাকায় প্রজাপতির অবস্থান রয়েছে ধরে নিতে হবে সে এলাকার প্রাকৃতিক সুস্থতা বিরাজমান।
গাছের বৈচিত্র্য তৈরিতে প্রধান ভূমিকা রাখে প্রজাপতি। আবার গাছের ওপর নির্ভর করে আছে অন্যান্য প্রাণীরা। আমাদের প্রকৃতির পুরো বাস্তুসংস্থানেই তাই রয়েছে প্রজাপতির ভূমিকা।
প্রজাপতি গবেষক ও আলোকচিত্রী তানভীর আহমেদ সৈকত বাংলানিউজকে বলেন, প্রথম কথা হলো যে, প্রজাপতি আমাদের কেন দরকার? কিভাবে প্রজাপতিকে সংরক্ষণ করা যেতে পারে? প্রথমটির উত্তর হলো, প্রজাপতি হলো প্রাকৃতিক পরাগায়ক। এর ওপর নির্ভর করে আমাদের বন-জঙ্গল-বাগানগুলোর অবস্থা।
তিনি আরো বলেন, প্রজাপতির জীবনচক্রে ৪টি ধাপ রয়েছে। একটি প্রজাপতিকে পূর্ণাঙ্গভাবে ডানা মেলতে জীবনের চারটি ধাপ পেরুতে হয়। একটি প্রজাপতি প্রথমে ডিম দেয়। তারপর ডিম ভেঙে বের হয় শুঁয়োপোকা। শুঁয়োপোকা থেকে পিউপা। তারপর শেষ ধাপটিতেই হলো প্রজাপতি।
শুঁয়োপোকা ও পিউপা আমাদের অনেক পাখির প্রিয় খাবার। পাখিরাও প্রজাপতির ওপর নির্ভর করে টিকে রয়েছে।
প্রজাপতির সংরক্ষণ সম্পর্কে তানভীর আহমেদ সৈকত বলেন, আমাদের প্রাকৃতিক গাছগুলোকে সংরক্ষণ করে প্রজাপতিকে রক্ষা করা সম্ভব। কেননা, কিছু কিছু গাছ রয়েছে যার ওপর সরাসরি নির্ভরশীল প্রজাপতিরা। তবে কিছু প্রজাতির প্রজাপতি এখন মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে।
প্রজাপতির বাংলা নামের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশে সব প্রজাতির প্রজাপতির বাংলা নাম নেই। কিন্তু পার্শ্ববর্তী দেশের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে সব প্রজাতির প্রজাপতিরই বাংলা নাম রয়েছে। এখানে আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আমরা এগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি।
আমাদের দেশের প্রজাপতির উল্লেখযোগ্য প্রজাতির নামগুলো হলো- কমন রেড ফরেস্টার, মাংকি পাজল, ব্লু টাইগার, কমন বার্ড উইং, কমন অ্যাপ্লেক্স, স্মল গ্রিন অ্যাওলেট, জুয়েল নবাব, চকলেট রয়েল কিংবা ক্রিমসন রোজ।
ঢাকায় চলমান প্রজাপতি প্রদর্শনী সম্পর্কে তানভীর বলেন, প্রজাপতি সম্পর্কে জানা, তাদের রক্ষা করা, তাদের গুরুত্ব অনুধাবন করা এর বড় উদ্দেশ্য। অর্থাৎ প্রজাপতির জীবনচক্র, গুরুত্ব, প্রকৃতি, অভ্যাস, ভৌগলিক প্রকরণ, মৌসুমী প্রকরণ, হোস্ট গাছপালা, বিপন্নতা ইত্যাদি সম্পর্কে আমরা জানলে প্রজাপতি সংরক্ষণে অবদান রাখতে পারবো।
এ বিষয়গুলোকে কেন্দ্র করেই বাটারফ্লাই বাংলাদেশের উদ্যোগে জাতীয় জাদুঘরে প্রজাপতি প্রদর্শনী চলছে। পাঁচ দিনব্যাপী প্রদর্শনীটি শুরু হয়েছে গত শুক্রবার (১১ সেপ্টেম্বর), চলবে মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত। ১০৬ জন আলোকচিত্রীর ১৩৪টি আলোকচিত্রে ৮৬ প্রজাতির প্রজাপতি এখানে স্থান পেয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৫
বিবিবি/এএসআর
** জাতীয় জাদুঘরে চলছে প্রজাপতি প্রদর্শনী