রাজশাহী: ‘২০১১ সালের কথা। এমবিএ করার পর একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করি।
তাই, আবার নতুন করে শুরু হয়, স্বাধীন জীবন ও জীবিকার খোঁজ। কী করা যায়, তা নিয়েই ভাবতে থাকি। নিতান্ত শখের বশেই হঠাৎ মনে হলো, মাছের ব্যবসা করবো। তখন মানুষ বলতো ‘সৌখিন ব্যবসায়ী’। কিন্তু সেই শখের ব্যবসাই আজ আমাকে সাবলম্বী করেছে। আমাকে দেখে এখন অনেকেই নামছেন শখের মাছের ব্যবসায়। ’
এভাবেই নিজের ঘুরে দাঁড়ানোর কথা বলছিলেন রাজশাহী মহানগরীর আলুপট্টি এলাকার তরুণ ব্যবসায়ী সাব্বির ইমতিয়াজ। মহানগরীর ব্যস্ততম নিউমার্কেট এলাকায় তার ফিস অ্যাক্যুরিয়ামের ব্যবসা। ছোট্ট একটি দোকানে কিছু মাছ আর কয়েকটি অ্যাক্যুরিয়াম নিয়ে ব্যবসা শুরু করলেও এখন তিনি রাজশাহী শহরের বড় একটি শোরুমের সত্ত্বাধিকারী। তবে ব্যবসা চালু রেখেছেন পুরনো দোকানেও।
শখের মাছের ব্যবসা নিয়ে কথা উঠতেই সাব্বির ইমতিয়াজ জানালেন, নিজের জমানো মাত্র ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ২০১২ সালে ব্যবসা শুরু করেন। মাত্র এই কয়েক বছরে তার মূলধন ১০ লাখ টাকা ছাড়িয়েছে। পড়ালেখা শিখে এ ধরনের ব্যবসায় মত ছিল না পরিবারের কারোরই।
কিন্তু শখের বশে শুরু করা ব্যবসায় সফলতা আসায় তাকে নিয়ে এখন বাবা-মায়ের আশঙ্কা কেটেছে বলে জানান তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে ইমতিয়াজ বলেন, প্রথমদিকে মনের মধ্যে প্রচণ্ড ভয় ছিল। শখ করে তিনি না হয় মাছ ও অ্যাক্যুরিয়ামের ব্যবসা শুরু করলেন; কিন্তু মানুষ শখ করে তা আবার কিনবে তো! কারণ, তিন বছর আগেও বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে এ ধরনের ব্যবসা ছিল অনেকটাই নতুন। সমাজের উচ্চবিত্ত ছাড়া কেউই কাচের অ্যাক্যুরিয়াম ঘরে রেখে শখের মাছ লালন-পালনের কথা সেভাবে ভাবতেন না।
তিনি জানালেন, সময় পাল্টেছে। পাল্টেছে শখের ধরনও। তাই, বাড়ির চার দেওয়ালের মধ্যে বা কোনো অফিসের অভ্যর্থনা ডেস্কের পাশে এক ঝাঁক জীবন্ত মাছের ছোটাছুটি আর বিলাসিতা ভাবেন না কেউ। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তরাও এখন অ্যাক্যুরিয়াম কিনছেন। নিজের শখের বশে না হলে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের আদুরে আবদারে কিনছেন। পার্থক্য হচ্ছে, কারোরটা আকারে বড়, কারোরটা-বা ছোট। কারো মাছ বেশি, কারো হয়ত কম।
মহানগরীর ব্যস্ততম নিউমার্কেটের পশ্চিম পাশের গেট ছেড়ে উপহার সিনেমা হলের সামনে সাব্বিরের ভাড়া করা ছোট্ট দোকান। সেখান থেকে পেরিয়ে দুই মিনিট হাঁটলেই তার অ্যাকুরিয়ামের শোরুম।
সাব্বিরের শোরুমে ঢুকতে চোখে পড়ে থরে থরে রাখা অ্যাক্যুরিয়াম ও তার মধ্যে থাকা মাছের ছোটাছুটি। ঝাঁকে ঝাঁকে বিভিন্ন প্রজাতির রঙিন মাছ অ্যাক্যুরিয়ামে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ইটপাথরের ঘরে বসেই যেন সমুদ্রের তলদেশ ঘুরে বেড়ানোর কাল্পনিক অনুভূতি মনের মধ্যে ভর করে।
মনে হবে, ঘরের সৌন্দর্য বাড়াতে কিংবা একঘেঁয়ে জীবনে খানিকটা প্রাণের ছোঁয়া আনতে এমন ছটফটে ছোট ছোট রঙিন মাছের কোনো জুড়ি নেই!
অ্যাক্যুরিয়ামে সামুদ্রিক পরিবেশ আনতে শোরুম জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে শামুক, ঝিনুক ও বড় পাথর। নানান রঙের পাথর। এখান থেকে অনেকে পাথর দিয়ে অ্যাক্যুরিয়াম রঙিন করে তোলেন। আবার অনেকে সবুজ গাছ বা রঙিন ফুল দিয়েও সাজান। রয়েছে পানির জারের মতো অ্যাক্যুরিয়ামও। নগরজীবনে ঘরের কোণে স্বচ্ছ জারে রঙিন মাছের ছোটাছুটিতে খানিকটা প্রাণের ছোঁয়া দিতেই যেন সব আয়োজন।
দরদাম সম্পর্কে জানতে চাইলে সাব্বির বলেন, মূলত ক্রেতার শখ ও সামর্থ্য মাথায় রেখে বিভিন্ন মাছ, অ্যাক্যুরিয়াম ও আনুষঙ্গিক দিয়ে বিভিন্ন প্যাকেজ তৈরি করা হয়। তবে সর্বনিম্ন পাঁচশ টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত প্যাকেজ রয়েছে। এর চেয়ে বেশি চাইলেও ব্যবস্থা রয়েছে তার।
তিনি বলেন, ঘরে মাছ পুষতে চাইলে সঠিক যত্নআত্তি সম্পর্কেও জানতে হবে। সেজন্য প্রয়োজনীয় বইপত্র ও নির্দেশনাও রয়েছে তার কাছে। চারজন কর্মী নিয়ে মাছের যত্ন ও বিক্রি থেকে শুরু করে সব কাজ তিনি নিজেই করে থাকেন। এর মধ্যে দু’জন কর্মী রয়েছেন যারা এখানে কাজ করার পাশাপাশি মাছের অ্যাক্যুরিয়াম তৈরি ও ওয়াশ করাসহ বিভিন্ন হোমসার্ভিসও দিয়ে থাকেন নগর এলাকায়।
ভবিষ্যতের ইচ্ছা সম্পর্কে বলতে গিয়ে সাব্বির জানালেন, তাকে অনুসরণ করে এখন অনেকই এ ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন। বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে নতুন নতুন শোরুম। তিনি শখের বসে শুরু করলেও অন্যরা লাভজনক ব্যবসা হিসেবেই এটাকে বেছে নিয়েছেন। তাই, এখন নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন তিনি।
তবে শখের দাম আশি তোলা। তাই, অন্য যাই করুন না কেন, এ ব্যবসা ছাড়বেন না সাব্বির ইমতিয়াজ!
বাংলাদেশ সময়: ০১২২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৫
এসএস/এবি