ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

খামার ব্যবস্থাপনা বিধিমালা

গোখরা-চন্দ্রবোড়া সাপের বিষ রফতানির সুযোগ

এস এম আববাস, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৫
গোখরা-চন্দ্রবোড়া সাপের বিষ রফতানির সুযোগ

ঢাকা: দুই প্রজাতির গোখরা-বিপন্ন প্রজাতির চন্দ্রবোড়া সাপের বিষ, মাংস ও চামড়া সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং রফতানির বিধান রেখে খামার ব্যবস্থাপনা বিধিমালা-২০১৫ প্রস্তুত করা হয়েছে।

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং উন্নয়নের স্বার্থে ২০১২ সালের বাংলাদেশ বন্য-প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনের আওতায় এ বিধিমালার খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে।

যা এরইমধ্যে নিজস্ব ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করেছে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়।  

বিধিমালায় বলা হয়, দক্ষ ও অভিজ্ঞ লোক দিয়ে স্কোয়ামাটা বর্গের আওতায় এলাপিডি গোত্রের দুই প্রজাতির গোখরা এবং চন্দ্রবোড়া সাপের বিষ সংগ্রহের পর গবেষণাগারে সংরক্ষণ করতে হবে।

একইভাবে মাংস ও চামড়া সংরক্ষণ করে তা বিদেশে রফতানিও করা যাবে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে শর্ত মেনে লাইসেন্স নিতে হবে।

লাইসেন্স পাওয়ার শর্ত
শর্ত হিসেবে বিধিমালায় বলা হয়েছে, সাপের খামারের জন্য ন্যূনতম ২ একর নিজ মালিকানাধীন বা দীর্ঘমেয়াদী (কমপক্ষে ৩৩ বছর) লিজ নেওয়া জমি থাকতে হবে।

সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা এলাকায় লাইসেন্স নিতে ফি লাগবে ১ লাখ টাকা। আর দেশের অন্যান্য জায়গায় সাপ লালন-পালন ও খামারের জন্য ৫০ হাজার টাকা লাইসেন্স ফি দিতে হবে।

তবে বিভিন্ন স্থানে অনুমোদন নিতে লাইসেন্স ফি ছাড়াও প্রসেস ফি দিতে হবে ২ হাজার টাকা।

খামারের শর্তে রয়েছে, বন্যামুক্ত এলাকায় অবস্থানের পাশাপাশি খামারের জায়গাটি হতে হবে সরকার নিয়ন্ত্রিত সব ধরনের বনাঞ্চল থেকে কমপক্ষে ৩০ কিলোমিটার দূরে। অনন্তপক্ষে খামারের ৫০০ মিটার এলাকায় কোনো জনবসতি থাকতে পারবে না।

সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সুবিধা ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ছাড়াও খামারের এক কিলোমিটার এলাকায় কোনো শিল্প কারখানা স্থাপন করা যাবে না।
 
এছাড়া সাপের খামারে ন্যূনতম দুইজন প্রশিক্ষিত বিশেষজ্ঞ এবং খামার ব্যবস্থাপনায় বাস্তব অভিজ্ঞতা সম্পন্ন দুইজন ব্যবস্থাপক থাকতে হবে বলে শর্তে উল্লেখ করা হয়েছে।

সাপ সংগ্রহের বিষয়ে বিধিমালায় বলা হয়, সরকার অনুমোদিত কোনো খামার, কৃষি জমি, জলাভূমি ও পতিত জমি থেকে সাপ সংগ্রহ করতে হবে খামারিকে।

তবে দেশের যেসব অঞ্চলে সাপের উপদ্রব বেশি সেখান থেকে সাপ সংগ্রহের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।   প্রাথমিক পর্যায়ে কমপক্ষে ২০০ প্রজননক্ষম বংশ বিস্তারকারী সাপের মাধ্যমে খামার চালু করতে হবে।

তবে সংরক্ষিত বন ও রক্ষিত এলাকাসহ কোন বনাঞ্চল থেকে সাপ সংগ্রহ করা যাবে না।
 
এছাড়া খামারে অবশ্যই নিরাপদ আর্ন্তজাতিক স্বীকৃত বা আর্ন্তজাতিক কনভেনশন ও প্রটোকল অনুযায়ী অবকাঠামোগত সুবিধাদি থাকতে হবে।
 
সাপ লালন-পালন, প্রজনন, ডিম ফুটানো, বাঁচ্চা লালন-পালন, বিষ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ এবং গবেষণাগারসহ সব ভবনের অবকাঠামো হবে পাকা ভবনে।
খামারের চারপাশে ন্যূনতম ৮ ফুট প্রাচীরসহ দেয়ালের উপর ৩ ফুট কাঁটা তারের বেঁড়া দিতে হবে। খামারের লে-আউট প্ল্যানসহ সব ড্রইং সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় বন অফিসে  জমা দিতে হবে। সেখানে অনুমোদ পেলে তবেই কাজ শুরু করতে হবে।
 
বিষ সংগ্রহ এবং মাংস ও চামড়া রফতানি
খামারে উপযুক্ত সাপ থেকে দক্ষ ও অভিজ্ঞ লোক দিয়ে  বিষ সংগ্রহের পর তা যথাযথভাবে গবেষণাগারে সংরক্ষণ করতে হবে। একইভাবে সাপের মাংস ও চামড়া সংরক্ষণ করে রফতানির জন্য প্রস্তুত করতে হবে।
 
খামারি নিজেই রফতানিকারক হলে এর জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কাছে আবেদন করে অনুমোদন নিতে হবে।

পরিবেশগত ক্ষতি
খামার পরিচালনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এলাকার পরিবেশগত ক্ষতির বিষয়টি দেখতে হবে। খামারের কারণে পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে এর দায় মালিককেই নিতে হবে।

অপরাধের শাস্তি
বিধিমালা ও  ২০১২ সালের আইনের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড কিংবা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
আর অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটালে সর্বোচ্চ ২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রাখা হযেছে।

বাংলাদেশ সময়: ০১৪৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৫
এসএমএ/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।