শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): প্রাণ ফুটেছে কাঠের বাক্সে। কচি-কোমল নরম লোমের মায়াবি এ প্রাণগুলো বাইক্কা বিলের নতুন অতিথি।
কাঠের বাক্সে বাসা বেঁধেছে বালিহাঁস দম্পতি। ডিম পেড়ে প্রায় দু’সপ্তাহ সেই ডিমে তা দিয়ে ছানাও ফুটিয়েছে তারা। একটি নয়, দুটো নয়। প্রায় আটাশটি কাঠের বাক্স পূর্ণনিরাপত্তা দিচ্ছে এসব নতুন অতিথির। কেউ কেউ আবার বাক্স থেকে লাফ দিয়ে বেরিয়ে গিয়ে পড়ছে বিলের পানিতে। বালিহাঁসের ছানারা ভেসে বেড়াচ্ছে বিলের চারদিকে।
সম্প্রতি বাইক্কা বিলের হিজল-করচ বনে স্থাপিত কৃত্রিম কাঠের বাক্সের বাঁলিহাসের ডিম থেকে ছানা ফুটেছে। আর এই ছানা ফোটার মধ্য দিয়ে দেশে বিলুপ্তপ্রায় বাঁলিহাসের প্রজনন ও বংশবৃদ্ধির এই কৃত্রিম ব্যবস্থাটি সফলতার মুখ দেখলো। বাইক্কা বিল মৎস্য অভয়ারণ্য পূর্ণতা পেল প্রাণবৈচিত্র্যে।
বিলে ছানা ফোটানোর এই কৃত্রিম পদ্ধতিটি নতুন নয়। বেশ কয়েক বছর থেকে শুরু হয়েছে। এবার তার দশম পূর্তি বছর। বাক্সগুলোকে গাছের সঙ্গে বাঁধা হয়। বাক্সটির একদিকে রয়েছে একটি গর্ত। এই গর্ত দিয়েই ছানাগুলো বেরিয়ে বিলের পানি নেমে পড়ার সুযোগ পায়।
বালিহাঁস আমাদের দেশের বিলুপ্তপ্রায় পাখি। শুধু প্রজননের অভাবে তারা হারিয়ে যেতে বসেছে। কারণ ওরা বাসা করে বিলের ধারের পুরাতন গাছের গর্ত বা কোটরে অথবা কোনো পুরনো মঠ-মন্দির বা প্রাচীন পরিত্যক্ত স্থাপনার ভেতর।
আমাদের দেশে পুরাতন গাছ, প্রাচীন মঠ-মন্দির বা স্থাপনাগুলো ধ্বংস করার ফলে বাঁলিহাসের প্রজনন ও বংশবৃদ্ধির মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটে। বিলুপ্তপ্রায় এই বালি হাঁস এখন শুধু বড় বড় হাওরগুলোতেই টিকে আছে- তাও কোনোক্রমে।
এরা আমাদের দেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি। ইংরেজি নাম Cotton Pygmy Goose এবং বৈজ্ঞানিক নাম Nettapus Coromandelianus। এদের ৩৩.৫ সেমি দৈর্ঘ্য এবং ওজন ২৫০ গ্রাম। এই হাঁস বহুলাংশে সবজিভোজী। পানিতে ভাসমান জলজ উদ্ভিদ থেকে এরা খাবার সংগ্রহ করে। ঘাস, পাতাসহ পানির নরম লতা-গুল্ম ও ছোট ছোট শামুক খেয়ে জীবনধারণ করে। ছোট ছোট জলাশয়ে মানুষের অত্যাচারে ওরা টিকতে পারে না। মানুষ ওদের মেরে ফেলে।
ক্লাইমেট-রেজিলিয়েন্ট ইকোসিস্টেমস্ অ্যান্ড লাইভলিহুডস্ (ক্রেল) প্রকল্পের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী (নর্থ-ইস্ট রিজিওন) মাজহারুল ইসলাম জাহাঙ্গীর বাংলানিউজকে বলেন, চলতি মাসের শুরু থেকেই বালিহাঁস আমাদের স্থাপন করা কাঠের বাক্সগুলোতে ডিম পেড়ে তা দিতে শুরু করেছে। ২৮টি মধ্যে ২১টিতে ডিম রয়েছে। ডিমের সংখ্যা ৮টি থেকে ৩৫টি ডিম। তার মানে হলো - কোনো কোনো বাক্সে একাধিক বাঁলিহাস ডিম দিয়েছে। একেকটি বাঁলিহাস সর্বোচ্চ ১৫টি ডিম দিতে পারে। কোনো বালিহাঁস দম্পতি ছানা ফুটিয়েও ফেলেছে।
তিনি আরও বলেন, ২০০৬ সাল থেকে আমরা বাইক্কা বিলে বিপন্ন বাঁলিহাসের প্রজনন রক্ষায় কাজ করে চলেছি। এবছর ১৩টি নতুন বাক্স লাগিয়েছি। পুরাতন ১৫টি বাক্স ছিলো। বাক্সগুলো আকার-আকৃতি ১৯/১২/সাড়ে ১০ ইঞ্চি। আমাদের বাইক্কা বিলের বিভিন্ন গাছে আমরা এগুলোকে বেঁধে দিয়ে ছিয়েছি। বাক্সটি বিলের পানির উপর এমনভাবে বাঁধা যাতে করে ছানাটি বাক্স থেকে বেরিয়েই পানিতে লাফ দিয়ে নেমে যেতে পারে।
মাজহারুল ইসলাম জাহাঙ্গীর আরও বলেন, বাঁলিহাসের প্রজনন রক্ষায় কোনো ব্যক্তি বা সংস্থার আমাদের সহযোগিতা করার সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৫
বিবিবি/এএ