ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

বৃক্ষ বৈচিত্র্য: নাগলিঙ্গম

মহিবুল আলম সবুজ, শেকৃবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৫
বৃক্ষ বৈচিত্র্য: নাগলিঙ্গম ছবি: সাজিদ আহসান/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: প্রকাণ্ড বৃক্ষ, লম্বা পাতা, সূঁচালো ডগা আর ধূসর কাণ্ড। সব মিলিয়ে এক অদ্ভূদ সুন্দর ফুল।

ফুলের পরাগচক্র দেখতে অনেকটা সাপের ফণার মতো। হয়তো এ কারণেই এর নাম নাগলিঙ্গম।

জনশ্রুতি আছে, নাগলিঙ্গম গাছের ফুল ও ফল একান্তই নাগ-নাগিনীর সম্পদ। যদিও বাস্তবে এর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না!

ফল হুবহু কামানের গোলার মতো হওয়ায় এ গাছ ইংরেজদের কাছে ক্যানন বল নামে পরিচিত। নাগলিঙ্গম ফল হাতির প্রিয় খাবার, এজন্য কোথাও এ উদ্ভিদটি হাতিফল নামেও পরিচিত।

আদি নিবাস মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকায়। পৃথিবীর অপর প্রান্ত থেকে কীভাবে, কবে, কেমন করে উপমহাদেশে গাছটি জন্ম নিল সে রহস্য উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের কাছে আজও দুর্ভেদ্য।

পৃথিবীর সবত্র নাগলিঙ্গম দেখা গেলেও বেশি দেখা মেলে ত্রিনিদাদ ও ল্যাটিন আমেরিকায়।

হিন্দু ও বৌদ্ধ উপাসনালয় গুলোতে পবিত্র বৃক্ষ মনে করে রোপণ করা হয় নাগলিঙ্গম। নাগেশ্বর, নাগকেশর ও নাগলিঙ্গম তিনটি ভিন্ন প্রজাতি হলেও অনেকেই গাছটিকে চিনেন শুধু নাগলিঙ্গম নামে।

ফ্রান্সের উদ্ভিদ বিজ্ঞানী জে এফ আবলেট ১৭৫৫ সালে নাগলিঙ্গম গাছের বৈজ্ঞানিক নামকরণ করেন Couroupita guianensis সাধারণত চিরসবুজ এ বৃক্ষটি ৭০ থেকে ৯০ ফুট উঁচু হতে দেখা যায়। গাছের গোড়ার ব্যাস প্রায় ৬ ফুট এবং কাণ্ড ৩০ ফুট লম্বা। গাছের গুচ্ছ পাতাগুলো খুব লম্বা, সাধারণত ৫-৭ ইঞ্চি লম্বা এবং ৪-৫ ইঞ্চি চওড়া হয়।

এক একটি মঞ্জরিতে ১০ থেকে ২০টি ফুল ক্রমান্বয়ে ফুটতে থাকে। মঞ্জরির একদিকে নতুন ফুল ফোটে অন্যদিকে পুরাতন ফুল ঝরে পড়ে। বছরের প্রায় সব ঋতুতেই এই গাছের পাতা ঝরে এবং কয়েকদিনের মধ্যে আবার নতুন পাতা গজায়।

এ পরিবেশে পাতা বিলাসী কবি হয়তো লিখে ফেলবেন এক অনবদ্য কবিতা- ঝরা পাতার কাব্য।  

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিদ্যার সহকারী অধ্যাপক আবু নোমান ফারুক বলেন, নাগলিঙ্গম ফুলের গন্ধ একান্তই তার নিজের মতো। যার মাদকতা সবাইকে বিমোহিত করে তোলে। ফুলে কোনো নেকটার নেই। শুধুমাত্র গন্ধে পোকারা আকৃষ্ট হয়ে পরাগায়ণে সহয়তা করে। মূলত মৌমাছি পরাগায়ণে বাহক হিসেবে কাজ করে।

নাগলিঙ্গম গাছের ফুল, ফল ও বাকলের নির্যাস ওষুধ হিসেবে বহুল প্রচলিত। রূপে গুণে ভরপুর এই উদ্ভিদের সংখ্যা এখন পৃথিবীতে খুব বেশি নয়। আমাদের দেশে হাতে গোনা কয়েকটি জায়গায় নাগলিঙ্গম উদ্ভিদ টিকে আছে স্বমহিমায়।

শেকৃবি-এর লেডিস হলের পাশে সাতটি নাগলিঙ্গম গাছ রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে দুটি নাগলিঙ্গম গাছ আছে। একটি ভূতত্ত্ব বিভাগের পাশে, অপরটি কার্জন হল প্রাঙ্গণে।

এছাড়াও ঢাকার রমনা উদ্যান, বলদা গার্ডেন, মিরপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন, গুলিস্তান মহানগর নাট্যমঞ্চ প্রাঙ্গণ, নটরডেম কলেজ প্রাঙ্গণে এ গাছ দেখতে পাওয়া যায়।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে সংরক্ষিত এলাকায় এবং বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্র্রে (বিটিআরআই) বেশ কয়েকটি গাছ আছে। বাংলাদেশ বন গবেষণা প্রতিষ্ঠান, কুমিল্লা রামমালা ছাত্রাবাস, যশোর শিক্ষা বোর্ড, ময়মনসিংহের গৌরীপুরের পুরানো জমিদার বাড়িতে নাগলিঙ্গম গাছে আছে বলে জানা গেছে।

এছাড়াও বান্দরবান এবং কক্সবাজারের কয়েকটি বৌদ্ধ মন্দির প্রাঙ্গণেও এ গাছ দেখা যায়। তবে  সবচেয়ে পুরনো গাছটি ময়মমনসিংহের গৌরীপুরের জমিদার বাড়িরটিই বলে মনে করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০১০৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।