শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): কালচে সবুজ গাছে হাসছে শ্বেতশুভ্র জবা। দূর থেকে তার হাসি দেখে আরও কাছে গেলাম।
রাজনগর উপজেলার ইটা চা বাগানে গিয়ে দেখা পেলাম তার। তার মানে এই নয় যে, সাদা জবা অতি দুর্লভ।
শ্বেত জবা বরাবরই আমাদের অগোচরে থেকে যায়। ফুলপ্রেমিরা বাড়ির ছাদের টবে এ ফুল ফুটিয়ে থাকেন। মাঝারি আকারের ফুলটি কোমল হৃদয়কে আরও সতেজ করে তোলে। কাটিং কিংবা গুটি কলম করে এ গাছের বিস্তার ঘটানো সম্ভব। ৩০-৪০ মিটার মাটি ভর্তি টব হলেই চলে।
জবা ফুলের অপর বাংলা নাম ঝুমকো জবা কিংবা জবা কুসুম। সংস্কৃত নাম জপা বা জবাপুষ্পম। এর ইংরেজি নাম Shoe flower বা China rose। বৈজ্ঞানিক নাম Hibiscus rosa-sinensis Linn। Malvaceae গোত্রের গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ।
মালয় উপদ্বীপে এ ফুলকে বলা হয় বুঙ্গা রায়য়া (Bunga Raya)। ১৯৮০ সালে মালয়েশিয়ায় জবা ফুলকে জাতীয় ফুল হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
শ্বেত জবা ফুলের লম্বা বৃন্ত থাকে। বৃন্তের শেষ মাথায় ফুলের পাঁচটি উপবৃতি আছে। উপবৃতির উপরে আছে ৫টি হালকা হলুদ রঙের বৃতি। এই বৃতিগুলো নলাকারে থাকে। এরপরে রয়েছে মূল ফুল।
ফুলের পাপড়ির সংখ্যা ৫টি। পাপড়িগুলো উপরের দিক একে অপরের সঙ্গে স্পর্শাকারে জড়িত এবং তলদেশের সঙ্গে সংযুক্ত।
ফুলের মধ্যভাগ থেকে একটি লম্বা পুষ্পদণ্ড বঙ্কিমাকারে থাকে। এই দণ্ডের গায়ে অসংখ্য পুংকেশর থাকে। পুষ্পদণ্ডের শীর্ষভাগে থাকে স্ত্রীকেশর। স্ত্রীকেশরের মাথায় পাঁচটি গর্ভপত্র রয়েছে। এ গাছের গোলাকার বীজকোষে অনেক বীজ থাকে।
এ উদ্ভিদের নানা বর্ণের ফুল দেখা যায়। রক্ত জবা, শ্বেত জবা, হলুদ জবা, গোলাপি জবা প্রভৃতি। গোটা বাংলাদেশে এর চাষ হয়। সারা বছরই ফুল ফোটে।
বহু শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট এ গাছের উচ্চতা ১ থেকে ৪ মিটার। শ্বেত জবা প্রায় ৪ থেকে ৬ মিটার লম্বা হয়। পাতার দৈর্ঘ্য ১০ সেন্টিমিটার এবং প্রস্থ ৬ সেন্টিমিটার। জবা পাতার প্রান্তভাগ খাঁজকাটা, গা মসৃণ। পাতাগুলো ডালে একান্তরভাবে সজ্জিত থাকে।
জবা ফুলের ঔষধিগুণ একাধিক। এই ফুলের কুঁড়ির রস জ্বরনাশক। জবা ফুলের রস থেকে তৈরি করা জবাকুসুম তেল অত্যন্ত উপকারী। এ তেল ব্যবহারে চুলপড়া বন্ধ হয় ও চুল ঘনকালো হয়।
এছাড়াও মহিলাদের ঋতুবিলম্বিত সমস্যায় এ ফুল পিষে সেবন করলে সুফল পাওয়া যায়। জবা ফুলের কুঁড়ি পুরুষের ধাতু দুর্বলতা দূর করে বলে কবিরাজরা একে অব্যর্থ ওষুধ হিসেবে গণ্য করে থাকেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৮, ২০১৫
বিবিবি/আরএম