ঢাকা: ‘কুমিরের মায়া কান্না’ বাক্যটা আমরা কম-বেশি সবাই উচ্চারণ করি, শুনি। কিন্তু ‘কুমিরের মায়া ঘুম’!
এবার অস্ট্রেলিয়ার গবেষকরা প্রথমবারের মতো দাবি করেছেন, কুমির এক চোখ খুলে এবং অন্য চোখ বন্ধ করে ঘুমায়!
তারা মনে করছেন, কিছু কিছু প্রজাতির সরীসৃপ মস্তিষ্কের অর্ধেকটা সচল রেখে ঘুমাতে পারে।
বিষয়টি যদি সত্যি প্রমাণিত হয়, তবে কুমিরও ডলফিন এবং কিছু প্রজাতির পাখিদের তালিকায় যোগ হবে- যারা মস্তিষ্কের অর্ধেক সচল রেখে ঘুমায়।
প্রাণীদের এই ঘুমকে বলা হয় ‘ইউনিহেমিসফেরিক স্লিপ’।
অস্ট্রেলিয়ার এ গবেষণার আগে কুমিরের ‘ইউনিহেমিসফেরিক স্লিপ’ এত নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়নি।
লা ট্রোব ইউনিভার্সিটির স্কুল অব লাইফ সায়েন্সেস’র গবেষক মাইকেল কোলি বলেন, কুমির নিয়ে এ গবেষণায় আমরা খুবই উৎসাহী। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যায়, প্রাণিকূলের ঘুম বিষয়ক এ গবেষণা এক নতুন মাত্রা যোগ করবে। কারণ এর আগে কুমির নিয়ে এমন গবেষণা হয়নি।
যেকোনো প্রতিকূল অবস্থা মোকাবেলা করতেই হয়তো কুমির এক চোখ খুলে ঘুমায়, যেন তারা দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পারে। এসময় তাদের মস্তিষ্কও অর্ধেকটা সচল থাকে।
জার্মানের ম্যাক্স প্লাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর অরনিথোলজি আরেক গবেষক তার ভিন্ন অনুসন্ধানে দেখেন, কুমিরের এক চোখ খুলে ঘুমানোর প্রবণতা বেশি দেখা যায়, যখন মানুষ কাছাকাছি থাকে।
একটি বিশেষ অ্যাকুরিয়াম তৈরি করে গবেষকরা ক্যামেরার মাধ্যমে দিনে এবং রাতে কুমিরের আচরণ পর্যবেক্ষণ করেন।
গবেষণায় ১৬ এবং ২০ ইঞ্চি (৪০ ও ৫০ সেন্টিমিটার) লম্বার কুমির ব্যবহার করা হয়। কারণ কুমিরের আকার এর চেয়ে বড় হলে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যাবে।
লা ট্রোব’র আরেক গবেষক জন লেসকু একটি ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, অ্যাকুরিয়ামে কুমির এক চোখে ঘুমানোর সময় ঘরের ভেতরে লোক ছিল। লোকটি যখন বের হয়ে বাড়ির বাইরে চলে যান, তখনও কুমিরের এক চোখ খোলা ও দৃষ্টি ছিল ওই লোকটি কোন দিকে যাচ্ছে সেদিকে।
ফের যখন বাড়িতে কেউ প্রবেশ করে তখন একই সঙ্গে ছোট কুমিরদের উপরও এক চোখ খুলে নজর রাখে তুলনামূলক বড় কুমির।
এ ধরনের আচরণ ইতোমধ্যে ডলফিনের মধ্যে দেখা গেছে। তারা এক চোখ খুলে ঝাঁকের দিকে নজর রাখে। কিছু প্রজাতির পাখিও সন্তানদের শিকারিদের হাত থেকে রক্ষা করতে এক চোখ খুলে ঘুমায়।
সাধারণত মানুষ ও স্থলভাগের প্রাণীরা ঘুমালে মস্তিষ্ক চেতন অবস্থায় থাকে না। কুমিরের ক্ষেত্রে যদি ঘুমানোর সময় অর্ধেক মস্তিষ্ক সচল থাকে, তবে সরীসৃপদের নিয়ে আরও অনেক কাজ বাকি আছে, বলেন লেসকু।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৫
এটি/এএ