ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

হচ্ছে জৈব-কৃষি নীতিমালা, থাকছে পণ্যের মানদণ্ড-সনদ

আবু খালিদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ৬, ২০১৫
হচ্ছে জৈব-কৃষি নীতিমালা, থাকছে পণ্যের মানদণ্ড-সনদ ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: জৈব কৃষি পণ্যের মানদণ্ড নির্ধারণ, জাতীয় মান অনুমোদন, উৎপাদিত ফসলের সনদপত্রে সহযোগিতা, বাজার সৃষ্টিসহ নানা বিষয় নিয়ে জাতীয় জৈব কৃষি নীতিমালা তৈরি হচ্ছে। চলতি বছরেই এ নীতিমালা সম্পন্ন করার লক্ষ্যে কাজ চলছে।



কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নীতিমালাটি প্রণীত হলে অসাধু উপায়ে নিজেদের নামে কেউ জৈবপণ্য বাজারে বিক্রি করতে পারবে না। আর এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা কৃষকেরা উৎসাহ পাবেন। বিদেশে জৈব কৃষি পণ্যের বাজারও সৃষ্টি হবে। এতে জৈব কৃষির প্রসার ঘটবে উল্লেখযোগ্যভাবে।
 
এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব (সম্প্রসারণ শাখা) রাশেদা আকতার বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের দেশে এখন জৈব কৃষি পণ্যের চাহিদা দিনদিন বাড়ছে। এছাড়া অনেকেই এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে পণ্য বাজারজাত শুরু করে দিয়েছেন। এক্ষেত্রে একটি নীতিমালা থাকলে সবার জন্য সহায়ক হবে। এসব লক্ষ্যে নিয়েই জৈব কৃষি নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
 
তিনি জানান, জৈব কৃষিতে বাংলাদেশে অনেক ভালো সম্ভাবনা আছে। জৈব কৃষি নীতিমালা তৈরির বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে সদস্য সচিব হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন।
 
জৈব কৃষি নীতিমালা খসড়া চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে সম্প্রতি কৃষি মন্ত্রণালয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মন্ত্রণালয়ের ওই বৈঠক সূত্র জানায়, জাতীয় জৈব কৃষি নীতির অন্যতম উদ্দেশ্য হলো- সয়েল ফ্লোরা ও ফনার কার্যকারিতা ত্বরান্বিত করে মৃত্তিকা উর্বরতা বজায় রাখা, জৈব ফার্মিং’র উপযোগী অঞ্চল ও ফসল শনাক্ত, ফসলভিত্তিক জৈব কৃষি তাত্ত্বিক উৎপাদন পদ্ধতি উদ্ভাবন, জৈব-বীজ’র সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিত, জৈব-কৃষির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ ট্র্যাডিশনাল ও ইনডিজেনাস জ্ঞান শনাক্তকরণ ও উৎপাদন কার্যক্রমে সমন্বয় ঘটানো, প্রশিক্ষণ ও শিক্ষার মাধ্যমে জৈব-কৃষি সম্পর্কিত সচেতনতা সৃষ্টি করে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করা।
 
এছাড়া, গুণগত মানের জৈব-উপকরণ উৎপাদন ও সরবরাহ নিশ্চিত, জৈব-কৃষির মানদণ্ড নির্ধারণ, জৈব পণ্যের গুণগত মান রক্ষণাবেক্ষণে জাতীয় মান অনুমোদন নীতি প্রণয়ন, জৈব কৃষির উৎপন্ন দ্রব্যের সার্টিফিকেশনে সহযোগিতা, বাজার সৃষ্টি এবং গুণগত মানসম্পন্ন জৈব-কৃষি দ্রব্য উৎপাদনের মাধ্যমে কৃষকদের অধিকতর আয়ের পথ সুগম করে তাদের জীবনমান উন্নয়ন প্রভৃতি বিষয় নীতিমালায় স্থান পাবে।
 
আর নীতিমালার বিষয়গুলো মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নেরও পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
 
বৈঠক সংশ্লিষ্টরা জানান, অধিক হারে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের কারণে জনস্বাস্থ্য ও কৃষি পরিবেশের ওপর অনেক বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ থেকে মুক্তি পেতে জৈব কৃষির গুরুত্ব অনেক বেশি।
 
বর্হিবিশ্বের উদাহরণ টেনে সংশ্লিষ্টরা বলেন, ১৯৯৫ সালে বিশ্বে জৈব কৃষির আওতায় মোট জমি ছিল ৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন হেক্টর, যা ২০১৩ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ৪৩ দশমিক ১ মিলিয়ন হেক্টরে। আর বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল পাঁচ বিলিয়ন ডলার, যা বেড়ে ৭২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে।
 
এছাড়া, বর্তমানে বিশ্বের ১৭০টি দেশে জৈব চাষাবাদ পদ্ধতি প্রচলিত আছে। এরমধ্যে ৮২টি দেশে জৈব নীতি ও জৈব মানদণ্ড অনুসরণ করে চাষাবাদ হচ্ছে। আর ১৬টি দেশে খসড়া পর্যায়ে রয়েছে।
 
দীর্ঘমেয়াদী টেকসই কৃষি, বাণিজ্যের প্রসারতায় অগ্রণী ভূমিকা রাখবে এই জৈব কৃষি নীতিমালাটি। বাংলাদেশ জৈব-কৃষিনীতি করতে পারলে বিশ্ব বাণিজ্যেও অনেক বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবে।
 
জৈব কৃষির ক্ষেত্র হিসেবে নীতিমালায় (খসড়া) উল্লেখ করা হয়েছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার অধীনে পরিচালনার জন্য প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে ভূমির উর্বরতা সংরক্ষণ, রোগ ও পোকা দমনে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি গ্রহণ, জৈবিক  ও যান্ত্রিক পদ্ধতিতে আগাছা দমন।
 
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটউট (বারি) এর কন্দাল ফসল গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. খুরশিদ আলম এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, জৈব-কৃষি পণ্যের চাহিদার কথা ভেবে অনেকেই অনিয়ন্ত্রিতভাবে উৎপাদন করে জৈব পণ্য হিসেবে বাজারে বিক্রি চালাচ্ছে। এতে প্রতারিত হচ্ছেন ভোক্তারা। নীতিমালাটি হলে এভাবে প্রতারিত করার সুযোগ থাকবে না।
 
এছাড়া, সঠিক পদ্ধতিতে উৎপাদনকারীরা প্রয়োজনীয় প্রণোদনা ও সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ কারণে জৈব কৃষি নীতি প্রণয়ন খুবই দরকার বলে মনে করেন ড. খুরশিদ আলম।
 
বাংলাদেশ সময়: ২১১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০১৫
একে/এইচএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।