ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

বাংলাদেশে ক্ষতিকর আফ্রিকান শামুক

আশরাফুল আলম, বাকৃবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৫
বাংলাদেশে ক্ষতিকর আফ্রিকান শামুক ছবি: বাংলানিউজেটোয়েন্টিফোর.কম

বাকৃবি (ময়মনসিংহ): শামুকের ক্ষতিকর একটি প্রজাতি ছড়িয়ে পড়েছে বাকৃবি (বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়) ক্যাম্পাসে। Giant African Land Snail নামে বড় আকারের ওই শামুকটি ধ্বংস করছে ফুলগাছ, খেয়ে ফেলছে গাছের পাতা ও কচি ডাল।

এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন নোটিশ বোর্ডে টাঙানো কাগজও খেয়ে ফেলছে তারা। দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে প্রজাতিটি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

প্রাণিজগতের মলাস্কা পর্বের নরমদেহী ও প্যাঁচানো খোলসে আবৃত প্রাণি হচ্ছে snail বা শামুক। মরুভূমি, নদী ও স্রোতস্বিনী, বদ্ধ জলাশয় ও সমুদ্র উপকূলে তাদের দেখতে পাওয়া যায়।

সাধারণত শামুকের তেমন কোনো ক্ষতিকর প্রভাব চোখে পড়ে না। শামুক পরিবেশের বিশেষ বন্ধু হিসেবে পরিগণিত হয়ে থাকে। শামুক মরে গিয়ে তার মাংস ও খোলস পঁচে জমিতে প্রাকৃতিকভাবে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও পটাশ তৈরি করে। ফলে জমির উর্বরতা বৃদ্ধিসহ ধান গাছের শিকড় মজবুত ও অধিক ফসল হতে সাহায্য করে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) নিরীহ এ প্রাণিটি ক্ষতিকর হয়ে উঠেছে। নতুন প্রজাতির এ শামুকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। শুধু ছড়িয়েই পড়েনি, হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি ব্যবস্থাকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ নাজমুল আহসান হলের বাগান পরিচর্যাকারীরা জানায়, প্রতিবছর শীতকে সামনে রেখে হলের সৌন্দর্য্য বর্ধনের জন্য বিভিন্ন রকম ফুলের গাছ লাগায় তারা। কিন্তু এ বছর বড় আকারের এ শামুকগুলো গাঁদা, জিনিয়া, সিলভিয়া, বাগান বিলাস, ক্যাকটাসসহ বিভিন্ন গাছের কচি পাতা খেয়ে ফেলছে। কোনো গাছই টিকানো যাচ্ছে না। এমনকি হলের নোটিশ বোর্ডে টানানো কাগজও খেয়ে ফেলছে। আর একবার কোনো গাছ আক্রমণের শিকার হলে সে গাছকে বাঁচানো যাচ্ছে না।

জানা যায়, প্রাকৃতিক ও দেশীয় মাছের প্রধান খাদ্য হচ্ছে শামুকের ডিম ও মাংস। বিশেষ করে কৈ, শিং, মাগুর, ট্যাংরা, টাকি, শোল মাছের পোনার একমাত্র খাদ্য হচ্ছে শামুকের নরম ডিম। আর এ খাবার না পেলে ওই পোনা মারা যায়। শামুকের খোলসের ভেতরের নরম অংশ চিংড়িসহ বিভিন্ন মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হওয়ায় দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ঘের মালিকেরা শামুক কিনে নিয়ে যায়।

তাছাড়া, ম্যাচোফেলিয়া ও মাইক্রোফেলিয়া নামে দুই ধরনের কীট শামুক থেকে খাবার সংগ্রহ করে বেঁচে থাকে এবং ধান গাছের ক্ষতিকর পোকা-মাকড় খেয়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষি খেতের ব্যাপক উপকার করে থাকে।

বড় আকারের ও ক্ষতিকর ওই শামুক সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের একোয়াকালচার বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এ সালাম বাংলানিউজকে বলেন, এ প্রজাতিটির নাম আফ্রিকান জায়ান্ট ল্যান্ড স্নেইল (Giant African Land Snail)। ২০০২ সালে শ্রীমঙ্গলের ডানকেন চা বাগানে এ প্রজাতিটি বাংলাদেশে প্রথম দেখতে পাওয়া যায়। ফসল ও বাগানের ক্ষতি করে বলে সে সময় এদের ধরে ধরে মেরে ফেলা হতো।

এরপর এদের তেমন আর দেখা যায়নি। কিন্তু বর্তমানে দেশের বিভিন্ন এলাকায় এ প্রজাতির শামুকটির  উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে।
Shell_04
তিনি আরও বলেন, এরা ফসলের জন্য খুব ক্ষতিকর। বাগান নষ্ট করে ফেলে। সন্ধ্যা হলেই ঝাঁকে ঝাঁকে বের হয়ে আসে। আর দিনের বেলা অত্যাধিক সূর্যালোক থেকে বাঁচতে লুকিয়ে থাকে। অতি বৃষ্টির সময় এরা দালানের দেয়াল বেয়ে উপরে উঠে আশ্রয় নেয়। এর মাংস খুবই শক্ত বিধায় পশু-পাখিরাও খায় না।

আমাদের দেশীয় যে শামুক আছে সেগুলো উপকারী। তারা স্থল ভূমিতে উঠে আসে না, বরং পানিতেই থাকে। কিন্তু এ প্রজাতিটি গাছপালা, লতাপাতা, ফলমূল খেয়ে ধ্বংস করে। এমনকি দিনের বেলাতেও গাছের পাতা খেয়ে গাছ ধ্বংস করে। যা আমাদের দেশের কৃষির জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।

বিদেশ থেকে আসা বিদেশি ও বাংলাদেশি নাগরিকদের সঙ্গে এ প্রজাতির শামুক বাংলাদেশে এসে থাকতে উল্লেখ করে ড. সালাম বলেন, বিভিন্ন সময় বাইরের দেশ থেকে আমাদের দেশে গাছ-পালা আনা হয়। সেখানকার মাটিতে কিংবা গাছের পাতার মধ্যে লুকিয়ে থেকে প্রজাতিটি আমাদের দেশে আসতে পারে। বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করে আরও তথ্য পাওয়া সম্ভব।

ড. সালাম বলেন, ক্ষতিকর শামুকের এ প্রজাতিটি নির্মূলের জন্য এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং যেভাবেই হোক এর প্রজনন ও বৃদ্ধি প্রক্রিয়া নষ্ট করতে হবে।

এর উপকারিতা বলতে তেমন কিছুই নেই। একে ধ্বংস করার জন্য অনতিবিলম্বে পদক্ষেপ হাতে নিতে হবে। অন্যথায় এটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে। এতে গোটা দেশের কৃষি ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়বে বলে জানান ড. সালাম।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৫
এমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।