সাতক্ষীরা: পানিফল। পুষ্টিকর ও সুস্বাদু এই ফলটি স্থানীয়দের কাছে পরিচিত পানি সিংড়া নামে।
বেশ আগে আবু সাইদ নামে এক ব্যক্তি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে বীজ এনে এই ফলের চাষ শুরু করলেও বছর দশেক হচ্ছে সাতক্ষীরার পতিত ও জলাবদ্ধ জমিতে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে পানিফল চাষ। কম খরচে অধিক লাভ ও পতিত জমি ব্যবহারের সুযোগ থাকায় জেলায় ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই ফল চাষ।
আবু সাইদের এক টুকরো জমিতে শুরু হলেও চলতি মৌসুমে জেলার ৭১ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে পানিফল। যা গত মৌসুমে ছিল ৬০ হেক্টর।
মূলত বাংলা মাস ভাদ্র থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত চাষিরা পানিফল আবাদ করেন। আর বেচাকেনা চলে অগ্রহায়ণ থেকে পৌষ মাস পর্যন্ত।
সাতক্ষীরা-কালিগঞ্জ সড়কের দু’ধারে পানিফলের আবাদ চোখে পড়ার মতো। দেবহাটা উপজেলার বিস্তীর্ণ ক্ষেতে, সাতক্ষীরা থেকে যশোর যাওয়ার পথে সদর উপজেলা ও কলারোয়ার কিছু অংশে এবং সাতক্ষীরা-এল্লারচর সড়কের দু’ধারে সম্প্রসারিত হয়েছে পানিফলের চাষাবাদ।
সাধারণত ক্ষেত থেকে তুলেই মহাসড়কের ধারে পানিফল বিক্রি করতে বসে যান চাষিরা। পাওয়া যায় শহরের বাজার-ঘাট, ফুটপাতেও। আর এখন জেলার চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায়ও।
পানিফলের লতার মত গাছটির শেকড় নিচে থাকে। আর পানির উপরে ভেসে থাকে পাতাগুলো। যা দেখতে অনেকটা কচুরিপানার মতো। আর ফলগুলোতে দু’টি শিং-এর মতো কাঁটা থাকা স্থানীয়দের কাছে এটি পানি শিংড়া নামে পরিচিত। ফলগুলো দেখতে সবুজও হয়, লালও হয়। খোসা ছাড়ালে বেরিয়ে আসে মিষ্টি সুস্বাদু সাদা শাঁস।
দেবহাটা সদরের আজিজ, গফুরসহ কয়েকজন চাষি বাংলানিউজকে জানান, জলাবদ্ধ জমিতে পানিফলের চাষাবাদ করা হয়। প্রতি বিঘা জমিতে পানিফল আবাদে ১২-১৫ হাজার টাকা খরচ হয়। আর ফল বিক্রি হয় প্রায় ৩৫-৪০ হাজার টাকার। এর চাষাবাদ বেশ লাভজনক।
তারা জানান, প্রতি কেজি পানিফল ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হয়। দেশের অন্যান্য জেলায় পানিফলের চাষাবাদ তেমন হয় না। তাই ফলটি মানুষ কম চেনে। কিন্তু সম্প্রতি সাতক্ষীরা থেকে এই ফল ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাওয়ায় আস্তে আস্তে তা পরিচিত হচ্ছে।
শুরুর দিকে সাতক্ষীরার দেবহাটা ছাড়া অন্য কোথাও এই ফলের চাষাবাদ হতো না। কিন্তু লাভজনক ও সুস্বাদু হওয়ায় কালিগঞ্জ, সাতক্ষীরা সদর ও কলারোয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পানিফল চাষ করা হচ্ছে।
শ্যামনগর থেকে সাতক্ষীরা শহরে যাওয়ার পথে পারুলিয়ায় মোটরসাইকেল থামিয়ে চার কেজি পানিফল কেনেন আহসানুর রহমান রাজীব ও শিমুল নামে দুই ব্যক্তি। এই ফল কেনার কারণ জানতে চাইলে তারা বাংলানিউজকে বলেন, বাড়ির সবাই পানিফল পছন্দ করেন। এই ফলটি সবাই যতো ইচ্ছা খেতে পারে, ভালোই লাগে খেতে। তাই নিয়ে যাচ্ছি।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজী আব্দুল মান্নান বাংলানিউজকে বলেন, মৌসুমী এই ফলের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এতে অনেক পতিত জমির ব্যবহার যেমন নিশ্চিত হচ্ছে, তেমনি অনেকের কর্মসংস্থানও হচ্ছে। আগামী বছর এই ফলের চাষাবাদ আরো বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০২২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৫
এসআই