জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: শীতের অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি ও পাখ-পাখালির অভয়ারণ্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রতি বছরের মতো এবারো শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে অতিথি পাখিরা দলে দলে আসছে দেশের একমাত্র আবাসিক এই উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে।
যা দেখতে প্রতিদিনই ঢাকাসহ সারাদেশের অসংখ্য পাখিপ্রেমী দর্শণার্থী ভিড় জমাচ্ছেন ক্যাম্পাসজুড়ে। সুদূর সাইবেরিয়া অঞ্চল থেকে এ অতিথিদের আগমনে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাল পদ্মের চাদরে ঢাকা লেকগুলো হয়ে উঠেছে ব্যঞ্জনাময়।
তাদের কলতানে আর ভোরের হালকা শিশির সিক্ত লাল সিরামিকের সবুজ ক্যাম্পাস পাখিপ্রেমীদেরও করে তুলছে চঞ্চল। পাখি দেখতে দেখতে সকাল-দুপুর-বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামছে তাদের অগোচরেই।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোট বড় ১০ থেকে ১২টি লেক রয়েছে। প্রতি বছর প্রশাসনিক ভবনের সামনে, জাহানারা ইমাম ও প্রীতিলতা হল সংলগ্ন লেক এবং সুইমিং পুল সংলগ্ন লেকে অতিথি পাখির আনাগোনা বেশি থাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। অতিথি পাখিরা এ লেকগুলোকে অভয়াশ্রম হিসেবে বেছে নিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও প্রশাসনিক ভবনের সামনের এবং জাহানারা ইমাম ও প্রীতিলতা হল সংলগ্ন লেক দু’টি অতিথি পাখির জন্য অভয়াশ্রম ঘোষণা করেছে। পাখিদের বসার জন্য লেকগুলোয় মাছ চাষ বন্ধ করে শাপলা ফুল বেড়ে ওঠার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাখিদের নিরাপত্তার জন্য লেকের চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্ট ও লেকের পাশে ব্যানারের মাধ্যমে বিভিন্ন নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৮৬ সাল থেকে অতিথি পাখি আসতে শুরু করে। যেসব অতিথি পাখি এখানে আসে তার মধ্যে সরালি, পচার্ড, ফ্লাইফেচার, গার্গেনি, ছোট জিরিয়া ও পাতারি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া মানিকজোড়, কলাই, ছোটনগ, জলপিপি, নাকতা, খঞ্জনা, চিতাটুপি, লাল গুড়গুটি, মুরগ্যাধি, কোম্বাডাক, পাতারি হাঁস, জলকুট, খয়রা ইত্যাদি পাখি সবার নজর কাড়ে।
প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসে হিমালয়ের উত্তরে শীত নামতে শুরু করে। ফলে উত্তরের শীতপ্রধান অঞ্চল সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, চীন, নেপাল, জিনজিয়াং ও ভারতে প্রচুর তুষারপাত হয়। তুষারপাতে টিকতে না পেরে পাখিরা উষ্ণতার খোঁজে পাড়ি জমায় বিভিন্ন নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে। এ সময় হাজার হাজার অতিথি পাখি দক্ষিণ এশিয়ার নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল বাংলাদেশে আসে। বাংলাদেশের যেসব এলাকায় এসব পাখি আসে তার মধ্যে জাবি ক্যাম্পাস অন্যতম।
এদেশে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর, নভেম্বর-জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি-এপ্রিল, এ তিনটি পর্যায়ে অতিথি পাখিরা আসে। মূলত নভেম্বর মাসেই এরা বাংলাদেশে আসে। আবার মার্চের শেষদিকে ফিরে যায় আপন ঠিকানায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাসনাত আল মাহাদী বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অতিথি পাখির জন্য বিখ্যাত। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত অতিথি পাখির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। পাশাপাশি দর্শণার্থীদের উচিত, অতিথি পাখিদের দিকে ঢিল ছুড়ে বিরক্ত না করা। তবেই অতিথি পাখির এ ক্যাম্পাসে অতিথি পাখির সংখ্যা বাড়বে।
প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সাজেদা বেগম বলেন, ইতোমধ্যে দক্ষিণ উপকূলীয় চরাঞ্চল থেকে দেশীয় সরালি পাখিগুলোও এসেছে। এখনো বিদেশি পাখি তেমন একটা আসা শুরু করেনি। শীত বেশি পড়া শুরু হলেই বিদেশি পাখি বেশি বেশি আসতে শুরু করবে।
তিনি বলেন, সাধারণত আমরা জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহের দিকে পাখিমেলার আয়োজন করি। কারণ, সে সময় পাখির সংখ্যা বেশি থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় এবারো আমরা পাখি সংরক্ষণে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পাখিমেলার আয়োজন করবো।
বাংলাদেশ সময়: ০৫১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৫
আরআই/এএসআর