ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

এখনই সময় জলপাইয়ের

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, এনভায়রনমেন্ট স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০১৫
এখনই সময় জলপাইয়ের ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): জিভে পানি আনা ফলের নাম জলপাই। চলছে টক এ ফলটির মৌসুম।

বাজারে প্রতি কেজির দাম ত্রিশ থেকে ষাট টাকা। মৌসুমি এ ফলের অম্লস্বাদ গ্রহণের সুযোগ আর অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই ফুরিয়ে যাবে। উপকারী ও পুষ্টিকর এ ফলটি পরখ করার সময় এখনই।
 
জলপাইয়ের রঙের মধ্যেও রয়েছে সৌন্দর্য। গাঢ় সবুজাভ রং। তবে ‘জলপাই রং’ (Olive Color) বলেই খ্যাতি তার।
 
বাংলাদেশের সর্বত্র বসতবাড়ির আশপাশে লাগানো হয় জলপাই। রোপিত গাছ থেকে ফল আসতে প্রায় চার থেকে দশ বছর সময় লেগে যায়। ফলগুলো এক থেকে আড়াই সেন্টিমিটার বড় হয়। কাঁচাফলগাঢ় সবুজ বর্ণের। তবে পাকলে কালচে-সবুজ রং ধারণ করে।
 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবদুল করিম বলেন, জলপাই খুবই পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ ফল। এটি মাঝারি ধরনের একটি বৃক্ষ। উচ্চতায় পনের-বিশ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।
 
শারীরিক নানান রোগ প্রতিরোধে এ ফল সহায়তা করে বলে মানুষের জন্য খুবই উপকারী জলপাই। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ ‘এ’ এবং ‘ই’ রয়েছে। চোখ, ত্বক, চুল, দাঁত, হাঁড়কে মজবুত রাখাসহ চোখ ওঠা, রাতকানা, চোখের পাতায় প্রদাহজনিত সমস্যাগুলো দূর করতে জলপাইয়ের জুড়ি নেই।
 
এছাড়াও উচ্চরক্তচাপ ও রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে জলপাইয়ের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। প্রতি ১০০ গ্রাম জলপাইয়ের খাদ্যযোগ্য অংশে রয়েছে খাদ্যশক্তি- ১৪৬ কিলোক্যালরি, শকরা-৩.৮৪ গ্রাম, চিনি-০.৫৪ গ্রাম, খাদ্য আঁশ- ৩.৩ গ্রাম, চর্বি-১৫.৩২ গ্রাম এবং আমিষ-১.০৩ গ্রাম।

উদ্ভিদ গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ন্যাশনাল হারবেরিয়ামের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (সিএসও) সরদার নাসির উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, জলপাই টক ফল হিসেবে পরিচিত। এর ইংরেজি নাম Indian Olive এবং বৈজ্ঞানিক নাম Elaeocarpus।
 
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে মোট ১২ প্রজাতির জলপাই পাওয়া যায়। Elaeocarpus Floribundus এবং Elaeocarpus Pecporius নামের মাত্র দু’টি প্রজাতির জলপাই মানুষ খেতে পারে। বাকিগুলো বন্য জলপাই। ওগুলো পাখি, কাঠবিড়ালি, বানরসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণির খাবার। Elaeocarpus Floribundus জলপাইকে সিলেট অঞ্চলে ‘বেলফই’ বলে।
 
সরদার নাসির উদ্দিন আরও বলেন, আসলে এটা অলিভ গোত্রের গাছ নয়। ইউরোপ দেশের অলিভ গাছ আর আমাদের দেশের অলিভ গাছগুলো এক নয়। মানুষ ভুল করে দু’টোকেই এক গাছ মনে করেন। ওই দুটো প্রজাতির ফলই আচার-চাটনি হিসেবে খাওয়া হয়। জলপাই গাছের কাঠ তেমন উন্নতমানের নয়।
 
জলপাইয়ের আচার বিশেষ প্রসিদ্ধ। রন্ধনশিল্পীরা হেমন্ত মৌসুমে জলপাইয়ের আচার বানিয়ে কনটেনারে সংগ্রহ করে রাখেন। শ্রীমঙ্গলের রন্ধনশিল্পী তনুশ্রী তনু জলপাইয়ের আচার সর্ম্পকে বলেন, এটি বিশেষ প্রসিদ্ধ একটি আচার। স্বাদেও অতুলনীয়। শুধু এই সময়টাতেই জলপাই পাওয়া যায় বলে প্রতি বছর আমি জলপাই ফলের আচার তৈরি করি।
 
আচার তৈরির নিয়ম সম্পর্কে তনুশ্রী বলেন, জলপাইয়ের আচার অনেকভাবেই তৈরি করা যায়। তবে সবচেয়ে সহজ পদ্ধতিটি হলো - জলপাইগুলোকে প্রথমে একটি পাত্রে নিয়ে সিদ্ধ করতে হবে। তারপর ভিনেগার, পাঁচফোড়ন, লবণ, চিনি, লঙ্কা মরিচের গুঁড়ো, রসুন ও সরিষার তেল- এই সাতটি উপাদান পরিমাণ মতো দিয়ে সুস্বাদু জলপাইয়ের টক ঝাল মিষ্টি আচার বানানো যায়।
 
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০১৫
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।