ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

বিল শুকিয়ে মাছ শিকারে প্রজাতি বিলুপ্তির আশঙ্কা

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, এনভায়রনমেন্ট স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৫
বিল শুকিয়ে মাছ শিকারে প্রজাতি বিলুপ্তির আশঙ্কা

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): শীত মৌসুমের শুরুতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিল শুকিয়ে চলছে মাছ শিকার। আইন লঙ্ঘন করে সেচের মাধ্যমে খাল, বিলসহ নানা ছোট-বড় জলাশয় শুকিয়ে এভাবে মাছ শিকারের ফলে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।



বিশেষজ্ঞদের মতে, এভাবে মাছ শিকারের ফলে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে জলজ জীববৈচিত্র্য। এমনকি এতে মাছের প্রজাতি আস্তে আস্তে বিলুপ্তও হয়ে যেতে পারে।

সরেজমিনে দেখা যায়, কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসের শুরু থেকেই শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিভিন্ন হাওরসংলগ্ন জলাশয়গুলোতে পানি কমতে শুরু করে। স্থানীয়রা সেচ দিয়ে জলাশয়গুলো শুকিয়ে মাছ শিকারে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। কাদাপানিতে লুকিয়ে থাকা মাছও ধরা হচ্ছে।

পশ্চিম ভাড়াউড়া এলাকা সংলগ্ন বিভিন্ন বিল-জলাশয় শুকিয়ে মাছ ধরার এ প্রবণতা দেখা গেছে বেশি। এছাড়াও ইজারার শর্ত ভঙ্গ করে সেচের মাধ্যমে বিল শুকিয়ে মাছ ধরাও রয়েছে অব্যাহত।

শুধু তাই নয়, ইজারাদাররা অবৈধভাবে জাল দিয়ে বিল দখল করে রেখেছেন। ফলে সাধারণ মৎস্যজীবীরা বিলে জাল ফেলতে পারছেন না। জলমহালের লিজগ্রহণকারীদের কেউ কেউ আবার সাব-লিজও দিচ্ছেন। যা জলমহাল শর্তের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।

চলতি বছরের গত ১৪ নভেম্বর হাইল হাওরের বিভিন্ন বিলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে প্রায় তিন লাখ টাকার অবৈধ জাল জব্দ করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। অবৈভাবে জাল দিয়ে মাছগুলোকে আটকে রাখা হয়েছিলো। মাছ ইজারাদাররা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জলমহাল বন্দোবস্তের নীতিমালা ভঙ্গ করে সুপরিকল্পিতভাবে দেশের মাছের বিপুল ক্ষতি করে চলেছেন।

মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ছোট-বড় প্রায় ষাটটি জলমহাল রয়েছে। বিশ একরের ঊর্ধ্বে বিশটি এবং বিশ একরের নীচে চল্লিশটি জলমহাল রয়েছে। একরের এসব জলমহাল থেকে প্রতি বছর দু-তিন কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের কথা রয়েছে।

জলমহাল নীতিমালার আলোকে বাংলা সাল অনুযায়ী বিভিন্ন শর্তে এসব জলমহালগুলো বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। প্রতি বাংলা বছরের মাঘ ও ফাল্গুন মাসের মধ্যে জলমহালগুলোর মাছ আহরণ করেন ইজারাগ্রহীতারা। মৎস্য সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী জলমহালগুলোতে তিন ফুট পর্যন্ত পানি রেখে মাছ ধরার বিধান রয়েছে।

এছাড়া ইজারা শর্তেও ১৭ নম্বর অনুচ্ছেদে পানি শুকিয়ে মাছ ধরা যাবে না বলে শর্ত রয়েছে। কিন্তু হাইল হাওরের সরকারি বিল ইজারাদারেরা শর্ত লংঙ্ঘনের পাশাপাশি মৎস্য সংরক্ষণ আইন অমান্য করে বিলের পানি সেচ দিয়ে শুকিয়ে মাছ ধরছেন। বিল শুকিয়ে মাছ ধরার ফলে বিলের নিচে থাকা কৈ, মাগুর, শিং,  ফলি, পুঁটি, টেংরা, শোলসহ দেশীয় প্রজাতির ছোট-বড় মা মাছ ও মাছের ডিম নষ্ট হচ্ছে। এতে মাছের প্রজনন ও উৎপাদনে এর বিরূপ প্রভাব রয়েছে।

ইকো ফিস, ওয়ার্ল্ড ফিসের গবেষণা সহকারী জহুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বিল শুকিয়ে মাছ ধরার ফলে মাছের বংশবৃদ্ধির স্বাভাবিকধারা ব্যাহত হবে। এতে মানুষ তার খাদ্যতালিকায় প্রোটিনের চাহিদা থেকে বঞ্চিত হবে। অথবা যতটুকু প্রোটিন পাওয়ার কথা ছিলো ততটুকু পাবে না।

এ মৎস্য বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, মাছের প্রজনন রক্ষার্থে মা-মাছগুলোকে অবশ্যই বাঁচিয়ে রাখতে হবে। সরকারি উদ্যোগে প্রকৃত জলমহাল এলাকায় নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাছগুলো লুকানোর একটি অভয়াশ্রম তৈরি করা যেতে পারে।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান খান বলেন, বিল শুকিয়ে মাছ ধরায় মৎস্য উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটছে। মৎস্যসম্পদ রক্ষায় আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। শর্তানুযায়ী জলমহালের মাছ আহরণ না করা হলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো।

মৌলভীবাজার পরিবেশ আন্দোলন (মৌপআ) এর সভাপতি ডা. জিল্লুর হক বলেন, এটি বিজ্ঞানসম্মত আধুনিক পদ্ধতি নয়। এর ফলে আমাদের দেশের বিপন্ন মাছগুলো প্রজনন ও সংরক্ষণ সমূলে ধ্বংস হয়ে যাবে। এভাবে প্রতিবছর জলাশয় শুকিয়ে মাছ শিকার করলে একসময় মাছের প্রজাতিসহ মা-মাছরা একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে পড়বে। এক্ষেত্রে প্রশাসনকে অবশ্যই কঠোর হতে হবে। এসব কাজ ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট মৎস্য অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্টদের তৎপরতা আরও বাড়ানো দরকার।

বিভিন্ন বিলে অবৈধভাবে জাল দিয়ে মাছ আটকে রাখা প্রসঙ্গে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. কামরুল হাসান বলেন, এ ব্যাপারে আমরা সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।    

বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৫
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।