ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

সরিষা খেতে যেন কীটপতঙ্গের উৎসব

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৫৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৫
সরিষা খেতে যেন কীটপতঙ্গের উৎসব ছবি: আরিফ জাহান বগুড়া / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বগুড়া: চারদিকে বইছে শীতের হিমেল হাওয়া। সময়ের সঙ্গে শীতের তীব্রতাও বাড়ছে।

সকালের কুয়াশার চাদরে মোড়ানো বিঘার পর বিঘা জুড়ে কেবলই হলুদের সমাহারই চোখে পড়ে।

সেই হলুদ গায়ে মাখাতে কিংবা প্রয়োজনীয় রসদ সংগ্রহ করতে সরিষা খেতে ভিড় জমিয়েছে প্রজাপতি, মৌমাছি, হলুদিয়া-নীলরঙা পাখি ও পোকামাকড়সহ নানা কীটপতঙ্গ। যেন কীটপতঙ্গের অংশগ্রহণে সবুজ-হলুদে মিশ্রিত এক অনন্য উৎসব।

সরিষা দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ বা ফসল হিসেবে পরিচিত। মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্য নভেম্বর পর্যন্ত (আশ্বিন মাসের শেষ থেকে কার্তিক মাসের শেষ) মাসব্যাপী খেতে সরিষা বপনের কাজ চলে। সরিষা পরিপক্ক হতে সময় লাগে প্রায় তিনমাস।

গত মৌসুমে উৎপাদিত ধানের প্রত্যাশিত মূল্য না পাওয়ায় গ্রামের কৃষকরা সরিষা চাষ করে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চেষ্টা চালাচ্ছেন। তাই এখন চাষিরা সরিষা নিয়েই বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন।

ষড়ঋতুর এই দেশের অন্য অঞ্চলের মতো সরিষার হলুদে সেজেছে বৃহত্তর বগুড়া, জয়পুরহাট, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার বিস্তীর্ণ মাঠ। শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বৃহত্তর এ অঞ্চলের কৃষকরা সরিষার পাশাপাশি রকমারি রবি ফসল চাষে এখন ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। তবে বেশির ভাগ খেতেই সরিষার হলুদ ফুলের অপরূপ দৃশ্য মাঠে-প্রান্তরে শোভা পাচ্ছে।
 
নানা রংয়ের প্রজাপতিতে ভরে আছে সরিষা খেত। রং-বেরংয়ের প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর দৃশ্য ভিন্নরকম এক অনুভূতির জন্ম দেয়। কোথাও ঝলক দিয়ে উঠছে কালো ডানায় হলুদ-লালের মিশ্রণের প্রজাপতি। আবার নীল, সবুজ, লাল-নীলের ডোরাকাটা বিভিন্ন রংয়ের প্রজাপতিও উড়তে দেখা যায়।

বগুড়ার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে বগুড়া, জয়পুরহাট, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলায় মোট ১ লাখ ২৭ হাজার ৫৮৯ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই চার জেলায় ১ লাখ ২০ হাজার ৮২৫ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে বগুড়ায় ২৫ হাজার হেক্টর, জয়পুরহাটে ৯ হাজার ৬৩০ হেক্টর, পাবনায় ২৮ হাজার ৩৮৫ হেক্টর ও সিরাজগঞ্জে ৫৭ হাজার ৮১০ হেক্টর জমি।

এসব জমিতে চাষ করা হয়েছে বারি-৯, ১৪, ১৫, টোরি-৭ ও সেতি জাতের সরিষা।

স্থানীয় সরিষা চাষি জামাল উদ্দিন, রফিকুল ইসলাম, হোসেন আলী, মজনু মিয়া, দবির উদ্দিন ও অমেজ আলী বাংলানিউজকে জানান, তারা গেল মৌসুমে ধান চাষে বেশ মার খেয়েছেন। এরপর ধানের বাজার উঠা-নামা লেগেই আছে। ফলে তাদের কমবেশি লোকসান গুণতে হয়েছে। এ অবস্থায় ধানের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে চলতি মৌসুমে তারা রবিশস্য চাষে উঠে পড়ে লেগেছেন।

অন্যান্য বছরের চেয়ে বেশি পরিমাণ জমিতে সরিষাসহ রকমারি ফসল চাষ করেছেন। রবিশস্য শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবার এসব জমিতে বোরো চাষ হবে। ভাল ফলন হলে উৎপাদন খরচ বাদে ৫-৬ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ হয়ে থাকে। তবে বাজার ভালো থাকলে সরিষায় আরও বেশি মুনাফা সম্ভব বলে জানান তারা।
 
সরিষার বীজ থেকে উৎপাদিত তেল প্রধানত রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়। আচার ও চাটনি তৈরিতে সরিষার তেল স্বাস্থ্যকর। এর তেল মানুষের শরীর বিশেষ করে ছোট শিশুদের শরীরে বেশ উপকারী। সরিষার কচিপাতা বা ডগা শাক হিসেবে খাওয়া যায়। সরিষা বাটা ইলিশ মাছের সঙ্গে রান্না করে খেতে বেশ মজা। শীতকালে চিতাই পিঠার সঙ্গে সরিষার বাটার ভর্তা খাওয়া বাঙালির অন্যতম জনপ্রিয় খাবার।

এছাড়া, সরিষা খেত থেকে মৌমাছির আহরিত মধু বেশ সুস্বাদু। সরিষার শুকনো গাছপাতা জ্বালানি, খৈল, গবাদি পশুর খাদ্য ও সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

কৃষিবিদ আব্দুর রহিম বাংলানিউজকে জানান, সবমিলে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সর্বোচ্চ ৯০ দিনের মধ্যে খেতের শতকরা ৮০ ভাগ সরিষার ফল খড়ের রং ধারণ করবে। সরিষার পাতা মরে যাবে। তখন সরিষা সংগ্রহের ব্যবস্থা নিতে হবে।

ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় শিশির ভেজা পরিবেশে ফসল সংগ্রহ করাই ভালো। মূলসহ গাছ টেনে তুলে অথবা কাঁচি দিয়ে কেটে ফসল সংগ্রহ করা যায়। তবে টেনে তোলাই ভালো বলে মনে করেন এই কৃষিবিদ।

বর্তমান আবহাওয়া সরিষা চাষের জন্য অনুকূল। আবহাওয়া প্রতিকূলে না গেলে এ বছর সরিষার বাম্পার ফলন হবে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন বগুড়ার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো. হযরত আলী।

বাংলাদেশ সময়:০৪৫৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৫
এমবিএইচ/টিআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।