জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) প্রশাসনের উদাসীনতায় ধ্বংস হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। প্রায় সাতশো একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আবাসিক এ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে বছর কয়েক আগেও রাস্তায় চলাচলের সময় দেখা যেত গুঁইসাপ, বেজি, গিরগিটি, কাঠ-বিড়ালিসহ নানা ক্ষুদ্রপ্রাণির আনাগোনা।
রাতে শিয়াল, বাগডাশ, হুতুম ও লক্ষ্মীপেচাঁসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণির হাঁক-ডাক আর চলাচলের শব্দে চিরকেলে গ্রামীণ রাতের আবহ বাঙময় হয়ে উঠতো।
কিন্তু প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ঝোপ-ঝাড় পরিষ্কার করার নামে আগুন দিয়ে পরিবেশ ধ্বংসের ফলে পরিচিত এসব বন্যপ্রাণি হুমকির মুখে। অনেক প্রাণী আগুনে পুড়ে মারা, কেউ হারায় আবাসস্থল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অধিক গাছপালা ও তৎসংলগ্ন ঝোপ-ঝাড় এসব বন্যপ্রাণির জন্য প্রাকৃতিক অভয়াশ্রমের কাজ করে। কিন্তু আগুন দিয়ে এভাবে এসব জায়গা পরিষ্কার করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববৈচিত্র্য রক্ষা কঠিন হয়ে পড়বে।
সরেজমিনে দেখা যায়, নতুন রেজিস্ট্রার ভবন সংলগ্ন আ ফ ম কামালউদ্দিন হলের সামনের এলাকা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের দক্ষিণ পাশের এলাকা, সুইমিং পুল সংলগ্ন এলাকা, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের সামনের এলাকা, আল-বেরুনি হলের পেছনের মাঠ, জহির রায়হান মিলনায়তন সংলগ্ন এলাকার বনজঙ্গলে আগুন দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে দ্রুত প্রদক্ষেপ নিয়ে পরিবেশ ও প্রাণিকূল রক্ষার দাবি জানান শিক্ষার্থীরা
প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মো. মনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ক্যাম্পাসের বনজঙ্গল পুড়িয়ে দেওয়ার ফলে বন্যপ্রাণিদের আবাসস্থল ও প্রজননক্ষেত্রগুলো নষ্ট হয়েছে। ফলে আগে যেসব বন্যপ্রাণি দেখা যেতো সেসব দিন দিন কমে যাচ্ছে।
প্রজাপতি নিয়ে গবেষণার জন্য পরিচিত শিক্ষক অধ্যাপক মনোয়ার আরও বলেন, এছাড়া বাংলাদেশে মোট ৩০৪ প্রজাতির প্রজাপতির মধ্যে জাবিতেই ১১০ প্রজাতির প্রজাপতি পাওয়া গেছে। দিন দিন এভাবে বনজঙ্গল ধ্বংস করা হলে প্রকৃতির শোভা আর অনিন্দ্য অনুষঙ্গ এসব প্রজাপতির সংখ্যাও কমে যাবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ ও ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সমন্বয় প্রয়োজন। সমন্বয়ের মাধ্যমে একটি ইউনিট তৈরি করতে হবে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কাজ করবে।
এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাসনাত আল মাহাদী বলেন, প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে ক্যাম্পাসের ঝোপঝাড় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন পশুপাখি, কীটপতঙ্গের বাস্তুসংস্থান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববৈচিত্র্য
ধ্বংস করা হচ্ছে। ক্যাম্পাসের জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য প্রশাসনের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নুরুল আমিন বলেন, আমাদের এস্টেট অফিসের জনবল কম। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত দু’জন কর্মচারী পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে এগুলো পর্যবেক্ষণ করেন। দুপুর ২টার পর এগুলো দেখে নিরাপত্তা শাখার প্রায় ১০০ জন গার্ড। এরপরও যদি কেউ আগুন লাগানোর খবর আমাদের জানায় তাহলে আমরা দ্রুত আগুন নেভানোর জন্য পদক্ষেপ নেই।
বাংলাদেশ সময়: ০০৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৫
এএ