ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

ফিরে এলো উন্নতমানের ‘অর্থডক্স চা’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৬
ফিরে এলো উন্নতমানের ‘অর্থডক্স চা’ ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): ফিরে এসেছে অর্থডক্স চা। গতানুগতিক সহজলভ্য ব্ল্যাক-টি বা কালো চায়ের মতো নয় এই চা।

ব্ল্যাক -টি থেকে অধিক পরিমাণে উন্নত এ অর্থডক্স চা।

এ বিশেষ ধরনের চা পান করার সময় পাতার সতেজ ঘ্রাণ অটুট থাকে পরিপূর্ণভাবে– এ কথা বাংলানিউজকে জানালেন এ চায়ের উৎপাদক এবং বিক্রেতা সকলেই।  

ইংরেজিতে Orthodox অর্থ হচ্ছে প্রাচীন। শ্রীমঙ্গলের স্বনামধন্য চা-পাতার দোকান গুপ্ত টি হাউজে বিক্রি হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এ অর্থডক্স চা।

চায়ের সংক্ষিপ্ত নাম ‘অপি টিজি’। ইংরেজি করলে হয়- অরেঞ্জ পিকো টি-গোল্ড।

গুপ্ত টি হাউজের স্বত্ত্বাধিকারী পীযুষ কান্তি দাশগুপ্ত বাংলানিউজকে বলেন, গত বছরের ২২ ডিসেম্বর আমরা  ন্যাশনাল ব্রোকার্স লিমিটেডের মাধ্যমে চট্টগ্রামের চা নিলাম কেন্দ্র থেকে একশ’ কেজি চা কিনি। সারাদেশে আমরাই এই চায়ের একমাত্র বিক্রেতা।

তিনি আরো বলেন, প্রতি কেজির দাম ১৪শ’ টাকা। তবে আড়াইশ’ গ্রাম এবং পাঁচশ’ গ্রাম করেও বিক্রি হচ্ছে। সিটিসি মেশিনের  ব্ল্যাক-টি এর চেয়ে এ চায়ের ফ্লেভার বা ঘ্রাণ অনেক বেশি হয়।

ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) সাবেক টি-প্লান্টার বি কে ভট্টাচার্য পুষ্প বাংলানিউজকে বলেন, ব্রিটিশ শাসনামলে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও ট্র্যাডিশনাল অর্থডক্স চায়ের ব্যাপক উৎপাদন ছিল। ১৯৭০ সালের পর থেকে বাগানগুলোতে ধীরে ধীরে সিটিসি মেশিনের ব্যাপক প্রচলন শুরু হয়। ইংরেজিতে সিটিসি এর অর্থ হলো Crush (পেষণ) Tear (ছেঁড়া) Curl (বাঁকানো)।  

তিনি আরো বলেন, আমি যখন ১৯৮৪ সালে কমলগঞ্জের মদন মোহনপুর চা বাগানের ম্যানেজারের দায়িত্বে ছিলাম তখন ওখানে অর্থডক্স চা তৈরি হতো। ব্ল্যাক-টি জনপ্রিয় হয়ে উঠলে পরবর্তী বছর থেকে অর্থডক্স চায়ের মেশিনকে সিটিসি মেশিনে কনভার্ট করে ব্ল্যাক-টি চা উৎপাদন করা শুরু হয়।  

বাংলাদেশ চা বোর্ডের ‘চা ব্যবস্থাপনা কোষ’ এর মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. শাহজাহান আকন্দ বাংলানিউজকে বলেন, এই অর্থডক্স চা আমি আমার নিজস্ব ফর্মুলায় তৈরি করেছি। অর্থডক্স চা উৎপাদনে যে ফর্মুলাগুলো ব্যবহার করা হয়ে থাকে এখানে সেই ফর্মুলা ব্যবহার করা হয়নি। হার্ড উইদারিং, ডাবল প্রেসার রুলিং টেবিল, রোটারি সিপ্টার, কনভেনশনাল ড্রায়ার এবং অ্যালুমনিয়াম সিটের ওপর ফার্মেনটেশন- এগুলো অর্থডক্স চা তৈরিতে লাগে। এ পাঁচটি প্রক্রিয়ার কোনোটাই আমার কাছে নেই। কিন্তু তারপরও আমি ভিন্নমাত্রায় এ চা তৈরি করেছি।

অর্থডক্স চায়ের বিশেষত্ব দিক সম্পর্কে এই গবেষক বলেন, এই চায়ে প্লাকিং স্ট্যান্ডার্ড মেনটেইন প্রোপারলি অর্থাৎ চা-পাতা চয়নের সময় গুণগতমান যথাযথভাবে রক্ষা করা হয়েছে।  

চা পান করার পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি বলেন, সিটিসি মেশিনের চায়ের চেয়ে এই চা সুঘ্রাণযুক্ত। এটি অত্যন্ত সেন্সেটিভ চা।   দুধছাড়া এ চা খেতে ভালো লাগবে বেশি। রো-টি বা লিকার চা হিসেবে পান করলেই এর অপূর্ব ফ্লেভার (ঘ্রাণ) পাওয়া যাবে।

মো. শাহজাহান আকন্দ আরো বলেন, ২০০৫ সালে ষাট কেজি অর্থডক্স চা তৈরি করে আমি লন্ডনের হ্যারসে পাঠিয়েছিলাম। এই দোকানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সেরা চা আসে বিক্রির জন্য। যেখানে প্রতি কেজি চা বাংলাদেশি টাকায় ৩৩শ’ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। শুধু তাই নয়, উজ্জ্বল হয়েছিল আমাদের দেশের সুনামও।

‘গত বছর আমি মাত্র ১০০ কেজি অর্থডক্স চা স্যাম্পল হিসেবে উৎপাদন করেছি মার্কেটের অবস্থা বোঝার জন্য। এটি চলবে কি-না, মানুষ পছন্দ করবে কি-না, এগুলো ভালোভাবে বোঝার জন্য। বাজার ভালো পাওয়া গেলে এ বছর আরো বেশি পরিমাণ উৎপাদন করবো’ বলেন এই চা গবেষক।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৬
বিবিবি/এএসআর

** চায়ের জন্য উপকারী

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।